ক্রীড়া প্রতিবেদক : দুবছর আগে জুয়াড়িদের কাছ থেকে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু সে সময় এ তারকা আইসিসির দুর্নীতি দমন ইউনিটের (এসিইউ) কাছে ব্যাপারটি গোপন করেন, যে কারণে এবার সব ধরনের ক্রিকেট থেকে বাংলাদেশের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক নিষিদ্ধ হয়েছেন দুবছর। এর মাঝে অবশ্য থাকছে এক বছর স্থগিত নিষেধাজ্ঞা। ভবিষ্যতে একই ধরনের অপরাধ করলে এই স্থগিত নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সাকিবের এই শাস্তির ঘোষণা দেয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। অপরাধ ও শাস্তি দুটোই মেনে নেওয়ায় শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ থাকছে না তার।
সাকিবের বিরুদ্ধে আইসিসির দুর্নীতি দমন আইনের ২.৪.৪ ধারার অধীনে তিনটি অভিযোগ তোলা হয়েছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি জানায়, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসের মধ্যে তিনবার সাকিবের কাছে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব আসে। কোনোবারই এ বিষয়ে আইসিসিকে কিছু জানাননি এই অলরাউন্ডার।
এদিকে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজ চলাকালে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পান সাকিব। পরে সে বছরেরই আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ-কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব ম্যাচের আগেও তাকে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দেন জুয়াড়িরা। আর একবার তার কাছে প্রস্তাব আসে ত্রিদেশীয় সিরিজ অথবা আইপিএল নিয়ে।
আইসিসির তোলা তিনটি অভিযোগের দায় স্বীকার করে নিয়েছেন সাকিব। শুধু তা-ই নয়, আইসিসির দুর্নীতি দমন ট্রাইব্যুনালের শুনানিতে দেওয়া সব শাস্তি মেনে নিয়েছেন। যদি নিষেধাজ্ঞার সময় শাস্তির সব বিধিবিধান মেনে চলেন, তবে ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে পারবেন তিনি। এ ব্যাপারে গতকাল আইসিসির নৈতিকতাবিষয়ক মহাব্যবস্থাপক অ্যালেক্স মার্শাল বলেন, ‘সাকিব আল হাসান অত্যন্ত অভিজ্ঞ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। সে এ ব্যাপারে অনেক ক্লাসেই অংশ নিয়েছে এবং এ কোডের অধীনে তার দায়িত্বের কথা জানে। তার উচিত ছিল এসব প্রস্তাবের কথা জানানো। সাকিব সব দায় স্বীকার করে নিয়েছে এবং এ তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা করেছে। সে ভবিষ্যতে আইসিসির সততা বিভাগকে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে। তরুণ ক্রিকেটারদের তার ভুল থেকে শিক্ষা নিতে বলবেন। আমি তার প্রস্তাব গ্রহণ করতে পেরে খুশি।’
ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থাটির দুর্নীতিবিরোধী ধারা অনুযায়ী, কারও কাছ থেকে অনৈতিক কিছুর প্রস্তাব পেলে যত দ্রুত সম্ভব আইসিসি বা সংশ্লিষ্ট বোর্ডকে জানাতে হয়। ব্যাপারটি কিন্তু সাকিব জানতেন। তারপরও কেন এমন ভুল করলেন বাংলাদেশের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক? এ ব্যাপারে আইসিসিকে এ বাঁহাতি বলেন, ‘যে খেলাটি ভালোবাসি, সেখান থেকে নিষিদ্ধ হয়ে আমি অবশ্যই অসম্ভব কষ্ট পাচ্ছি। কিন্তু আমার কাছে অনৈতিক প্রস্তাব আসার পরও না জানানোর ফলে আমার শাস্তি আমি মেনে নিয়েছি। আইসিসির দুর্নীতিবিষয়ক কমিটির দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই খেলোয়াড়দের ওপর নির্ভর করে। এ ঘটনায় আমি আমার দায়িত্ব পালন করতে পারিনি।’
ভবিষ্যতে তরুণ কোনো ক্রিকেটার যেন এমন ভুল না করে, সেটা নিশ্চিত করতে চান সাকিবÑ‘বিশ্বের অধিকাংশ ক্রিকেটার ও সমর্থকের মতো আমিও চাই দুর্নীতিবিরোধী খেলার পরিবেশ। আমি আইসিসির দুর্নীতিবিষয়ক কমিটির সঙ্গে এ ব্যাপারে কাজ করার অপেক্ষায় আছি। তরুণ ক্রিকেটারদের শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেব এবং নিশ্চিত করতে চাই, তরুণ ক্রিকেটাররা আমার ভুল থেকে শিক্ষা নেবে।’
এদিকে আইসিসির নিষেধাজ্ঞার কারণে ভারত সফরে খেলতে পারছেন না বাংলাদেশের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তার পরিবর্তে টেস্ট দলের নেতৃত্ব পেয়েছেন মুমিনুল হক। আর টি-টোয়েন্টি দলের নেতৃত্ব দেবেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
সাকিব নিষিদ্ধ হওয়ার পর গতকাল সন্ধ্যায় ভারত সফরের জন্য দল ঘোষণা করে বিসিবি। এতে টি-টোয়েন্টিতে সাকিবের জায়গায় আছেন তাইজুল। আবু হায়দার রনিও থাকছেন। মোহাম্মদ মিঠুন সুযোগ পেয়েছেন তামিম ইকবালের জায়গায়।
টেস্ট দল: মুমিনুল হক (অধিনায়ক), মেহেদি হাসান মিরাজ, মোসাদ্দেক হোসেন, ইমরুল কায়েস, সাদমান ইসলাম, সাইফ হাসান, মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ মিঠুন, তাইজুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান, আল-আমিন হোসেন, আবু জায়েদ রাহি, লিটন দাস, নাঈম হাসান, এবাদত হোসেন, মাহমুদউল্লাহ।
টি-টোয়েন্টি দল: মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক), লিটন দাস, তাইজুল ইসলাম, সৌম্য সরকার, মোহাম্মদ নাঈম, মুশফিকুর রহিম, আফিফ হোসেন, মোসাদ্দেক হোসেন, আমিনুল ইসলাম, আরাফাত সানি, আল-আমিন হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান, শফিউল ইসলাম, আবু হায়দার রনি, মোহাম্মদ মিঠুন।