দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে এইডসের ঝুঁকিতে চার হাজার যৌনকর্মী

প্রতিনিধি, রাজবাড়ী: অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে এইচআইভি বা এইডস আক্রান্তের হার তুলনামূলকভাবে কম। তবে কিছু স্থানে বিশেষ করে দেশের যৌনপল্লিগুলোয় এর প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা আছে। এর মধ্যে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া যৌনপল্লির যৌনকর্মী এবং তাদের কাছে আসা পুরুষেরা। এ পর্যন্ত এখানে পাঁচজন এইডস রোগী শনাক্ত হয়েছে।

শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) ছিল বিশ্ব এইডস দিবস। সারাদেশে নানা কর্মসূচি আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি উদ্যাপন করা হয়েছে। তবে দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে এইডস প্রতিরোধে যথাযথ সচেতনতামূলক কার্যক্রম না থাকায় এই রোগে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

যৌনপল্লি-সংশ্লিষ্ট বেসরকারি একাধিক সংগঠন জরিপ চালিয়েছে। এর মধ্যে মুক্তি মহিলা সমিতির সম্প্রতি চালানো জরিপ অনুযায়ী, এখানে এক হাজার ৫০ জনের মতো যৌনকর্মী, ২৮১ জন বাড়িওয়ালি ও ৫০০টি শিশু রয়েছে। এর বাইরেও বয়স্ক নারী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা মিলে আরও হাজার খানেকসহ প্রায় চার হাজার বাসিন্দা রয়েছেন, যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এইচআইভি/এইডসসহ নানা যৌন রোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন।

গণস্বাস্থ্য সংস্থা দৌলতদিয়ার জরিপ অনুযায়ী, দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে প্রায় এক হাজার ৩০০ যৌনকর্মীসহ প্রায় চার হাজার মানুষ বাস করেন। তারা প্রত্যেকে এইচআইভি/এইডসসহ নানা যৌন রোগের ঝুঁকিতে আছেন। সর্বশেষ গত আগস্ট মাসের সমীক্ষা অনুযায়ী, দৌলতদিয়ায় তিন যৌনকর্মী এবং স্থানীয় দুই পুরুষ খদ্দেরসহ মোট পাঁচজনের এইচআইভি শনাক্ত হয়েছে।

দৌলতদিয়া যৌনপল্লির কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন কয়েক হাজার পুরুষ এই পল্লিতে যাতায়াত করেন। এখানে আসা লোকজন কনডম ব্যবহারে অনাগ্রহী। এ কারণে এখানে এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। তারা আরও বলেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও পায়াকট বাংলাদেশ নামক সংস্থা এইডস ও যৌনরোগ নিয়ে এই পল্লিতে কাজ শুরু করেছে।

দৌলতদিয়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মো. জুলফিকার আলী বলেন, ১ ডিসেম্বর সরকারি ছুটি থাকায় এইডস দিবসের কোনো কর্মসূচি নেই। সিভিল সার্জনের পরামর্শে রোববার দিবসটি উপলক্ষে আলোচনা সভা হয়েছে। আগের জরিপে এখানকার চারজন এইডসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়। সর্বশেষ গত আগস্ট মাসে আরেকজন যৌনকর্মীর শরীরে এইডস শনাক্ত হয়েছে।

গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফারসিম তারান্নুম হক বলেন, যৌনকর্মী ও তাদের কাছে আসা লোকজন মারাত্মক ঝুঁকিতে আছেন। এজন্য এইডসসহ অন্যান্য যৌনরোগের সংক্রমণ কমাতে বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য বিভাগ পল্লিতে কাজ করছে। তাদের নিয়মিত মনিটরিং ছাড়াও জটিল এবং সন্দেহজনক রোগীদের চিকিৎসা ও পরামর্শ দিয়ে থাকে।