Print Date & Time : 5 July 2025 Saturday 5:50 am

দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের মৃত্যুদিবস আজ

কবি, নাট্যকার, গীতিকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের মৃত্যুদিবস আজ। ১৮৬৩ সালের ১৯ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে তার জš§। পিতা কার্তিকেয়চন্দ্র রায় এবং মাতা প্রসন্নময়ী দেবী।

দ্বিজেন্দ্রলাল হুগলি কলেজ থেকে বিএ এবং প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ (১৮৮৪) পাস করেন। পরে কিছুদিন চাকরি করে তিনি সরকারি বৃত্তি নিয়ে কৃষিবিদ্যা শেখার জন্য লন্ডন যান এবং সেখানে ১৮৮৬ সাল পর্যন্ত অবস্থান করেন। লন্ডনের সিসিটার কলেজ থেকে তিনি কৃষিবিদ্যায় এফআরএএস ডিগ্রি এবং রয়েল এগ্রিকালচারাল কলেজ ও এগ্রিকালচারাল সোসাইটির এমআরএসি ও এমআরএসএ উপাধি লাভ করেন। দেশে ফিরে তিনি মধ্যপ্রদেশে সরকারি ডেপুটির চাকরি পান; পরে তিনি দিনাজপুরে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত হন। স্বাধীনচেতা দ্বিজেন্দ্রলাল কর্মক্ষেত্রে তিনি অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। ১৮৯০ সালে বর্ধমান এস্টেটের সুজামুটা পরগনায় সেটেলমেন্ট অফিসারের দায়িত্ব পালনকালে তিনি প্রজাদের স্বার্থে ছোটলাটের বিরোধিতা করতে কুণ্ঠিত হননি। বিলেত থেকে ফেরার পর প্রায়শ্চিত্ত করার প্রশ্ন উঠলে তিনি তা অস্বীকার করেন এবং এজন্য তাকে অনেক বিড়ম্বনা সইতে হয়। সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা আছে তার একঘরে পুস্তিকায়।

দ্বিজেন্দ্রলাল কৈশোরেই কাব্যচর্চা শুরু করেন। ১৯০৩ সাল পর্যন্ত তিনি মূলত কাব্যই রচনা করেন এবং এ সময় পর্যন্ত তার প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। দ্বিজেন্দ্রলালের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ হলো: নকশা-প্রহসন একঘরে, সমাজ-বিভ্রাট ও কল্কি অবতার, প্রায়শ্চিত্ত (১৯০২), পুনর্জš§; পৌরাণিক নাটক পাষাণী, সীতা, ভীষ্ম; সামাজিক নাটক: পরপারে, বঙ্গনারী; ঐতিহাসিক নাটক: তারাবাই, রানা প্রতাপসিংহ, মেবার-পতন, নূরজাহান, সাজাহান; প্রবন্ধগ্রন্থ : কালিদাস ও ভবভূতি প্রভৃতি।

উনিশ শতকের শেষদিকে এবং বিশ শতকের প্রথমদিকে বাংলা গানের আধুনিকীকরণে যে পঞ্চ গীতিকবি বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন, দ্বিজেন্দ্রলাল তাঁদের একজন। রবীন্দ্রযুগে বাংলা কাব্যসঙ্গীতে বিভিন্ন ধারা প্রয়োগ ও আধুনিক গান রচনায় তিনি ছিলেন একজন সার্থক রূপকার। নাটক রচনা ও পরিচালনায় তাঁর অসামান্য অবদান থাকলেও তিনি সঙ্গীতকার হিসেবেও সুপরিচিত ছিলেন। বিভিন্ন বিষয়ে তিনি প্রায় ৫০০ গান রচনা করেন। প্রথমদিকে তার গান ‘দ্বিজুবাবুর গান’ নামে পরিচিতি ছিল; পরবর্তীকালে তা ‘দ্বিজেন্দ্রগীতি’ নামে পরিচিত হয়। দ্বিজেন্দ্রলাল রচিত জনপ্রিয় দেশাত্মবোধক গানগুলোর মধ্যে ‘বঙ্গ আমার জননী আমার’, ‘ধনধান্যপুষ্পভরা’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

প্রেমের গান রচনায়ও তিনি ছিলেন কৃতবিদ্য। গানের কথার কোনো অংশে কতটা গতিতে সুরের আরোহণ-অবরোহণ হলে প্রেমের অসাধারণ শিল্পকর্মের মূলতত্ত্ব যে সত্য, সুন্দর ও আনন্দ- দ্বিজেন্দ্রলালের সংগীতকর্মে তার সার্থক প্রকাশ ঘটেছে; তাই তার গানে রয়েছে মৌলিকত্বের ছাপ। বাংলা কাব্যসংগীতে তথা আধুনিক বাংলা গানে সুর, ভাব ও বিষয়ভিত্তিক রচনায় বিভিন্ন ধারার সমন্বয়করণ দ্বিজেন্দ্রলালের এক মহৎ কীর্তি। একটি সুস্থ সংগীতপরিমণ্ডল সৃষ্টিতে তার এ অবদান বাংলার সংগীতাঙ্গনে সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ১৯১৩ সালের ১৭ মে কলকাতায় তার মৃত্যু হয়।

[সংগৃহীত]