রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও সংস্থা তদারকি জোরদার করছে সরকারের পক্ষ থেকে এ দাবি করা হলেও বাজারে এর তেমন প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে না। সহযোগী এক দৈনিকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে বেগুনের দাম। সবজিসহ আরও কিছু নিত্যপণ্যের দাম দ্বিগুণের কাছাকাছি। এও উল্লেখ করা হয়েছে, তদারককারী টিম বাজারে উপস্থিত থাকাকালে সিংহভাগ বিক্রেতা নির্দিষ্ট মূল্যে বিক্রি করলেও এর আগে ও পরে দাম নিচ্ছে বেশি। বলার অপেক্ষা রাখে না, অতিরিক্ত মুনাফা সচেতনতার কারণেই তারা দেখাচ্ছেন এমন মনোভাব। বাজারে সার্বক্ষণিক তদারকি জোরদার করা না হলে এটা রোধ করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। এজন্য বিশেষত বড় বাজারগুলোয় তদারককারী সংস্থার বিশেষ টিমের সার্বক্ষণিক উপস্থিতি দেখতে চাইব আমরা। তাতে ভোক্তাদের বক্তব্য গ্রহণ ও বিক্রেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তপূর্বক দ্রুত প্রতিবিধানের ব্যবস্থা থাকলে রমজান ঘিরে অতিরিক্ত মুনাফা সচেতনতা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব বলে মনে হয়।
ক’দিন আগে এক সম্পাদকীয়তে আমরা উল্লেখ করেছি, একটি নির্দিষ্ট সময়ে জোগান অপরিবর্তিত থাকা অবস্থায় চাহিদা বাড়লে দাম বৃদ্ধি পাবে এটাই নিয়ম। আমাদের বাজারে কিন্তু সেই অবস্থা বিরাজমান নয়। এখানে রমজানের বাড়তি চাহিদা ঘিরে নেওয়া হয় প্রস্তুতি। ক্ষেত্রবিশেষে এ লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে জোগানো হয় সহায়তা। তাহলে মাত্র ক’দিনের ব্যবধানে কোনো সবজির দাম দ্বিগুণ কিংবা তারও বেশি হবে কেন? যানজটের কারণে কোনো কোনো রুটে পরিবহন খরচ অবশ্য বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে পচে বা নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণেও ক্রয়মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়াতে হয় দাম। তারপরও প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, রমজানে কোনো পণ্যের দাম দুই-আড়াইগুণ বেড়ে ওঠার পেছনে এসব যুক্তি কি যথেষ্ট? আমরা মনে করি, মুনাফা অর্জনে ব্যবসায়ীদের প্রতি সংযম বা নৈতিকতা অবলম্বনের যে আহ্বান সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তা এক্ষেত্রে খুব একটা কাজ দেবে না। সঙ্গত কারণেই এক্ষেত্রে নিতে হবে নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ।
এবার রমজান এমন সময়ে এসেছে, যখন বৈরী আবহাওয়ার কারণেও পণ্য পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। কাঁচা সবজির সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে চাষি পর্যায় থেকেও। বাজার তদারককারী সংস্থাকে অবশ্য বিবেচনায় রাখতে হবে এ পরিস্থিতি। উল্লিখিত পরিস্থিতি কিন্তু মজুদ রাখা সম্ভব, এমন কোনো পণ্যের দাম দ্বিগুণ হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। এ সময়ে বেড়ে উঠেছে ছোলা, মুড়ি, চিনি, ভোজ্যতেলসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম। ঈদের আগে চিনি, সেমাই, মসলাসহ কিছু পণ্যের চাহিদা আরও বাড়বে। শুরু থেকেই এ প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। এ অবস্থায় বাজারে সার্বক্ষণিক তদারকি বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল মাঠে নামাতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সদিচ্ছা বিশেষভাবে প্রত্যাশিত।
রমজানে কিছু নিত্যপণ্যের বাজার ঘিরে ‘সিন্ডিকেট’ গড়ে তোলার অভিযোগ পাওয়া যায়। এতে সংশ্লিষ্টরা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হলেও ভোগান্তি বেড়ে ওঠে জনসাধারণের। তদারকি সংস্থা এর দায় এড়াতে পারে না। কোনো ব্যবসায়ী যদি এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকে, তাকে আইনের আওতায় আনার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিতদের। প্রথম রোজাতেই কিছু পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠলেও কাউকে অবশ্য আইনের আওতায় আনার উদাহরণ নেই। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠতে পারে, অতিরিক্ত দাম নিলেই শাস্তির যে বক্তব্য সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা দিচ্ছেন সেটা কি কথার কথা? এর বাস্তব প্রয়োগও দেখতে চাইব আমরা। আমাদের বক্তব্য হলো, অযৌক্তিকভাবে যেসব ব্যবসায়ী পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেনÑসিয়াম সাধনা নির্বিঘ্নে করার স্বার্থে তাদের বিরুদ্ধে শুধু কথায় নয়, কাজেও কঠোর মনোভাব দেখাক সরকার।