নিজস্ব প্রতিবেদক: ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় ভারতীয় ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিংকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন দেশটির বিশেষ সিবিআই আদালত। এ ঘটনার জেরে আদালত চত্বরের বাইরে তাণ্ডব শুরু হয়। ধর্মগুরুর সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। লাঠি, বাঁশ, ইট-পাথর নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। লাঠিচার্জ করে ও কাঁদানে গ্যাসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পেরে পুলিশ গুলি চালিয়েছে। পাঁচকুলায় পুলিশের গুলিতে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপেক্ষ ২০০ জন। পাঞ্জাব-হরিয়ানাজুড়ে বিভিন্ন স্থানে এমন সহিংসতায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। সংঘর্ষে উত্তাল পাঞ্জাব-হরিয়ানা।
ভারতের আনন্দবাজার, এনডিটিভি ও দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে জানা যায়, পাঞ্জাবের দুটি রেলওয়ে স্টেশনে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে রাম রহিমের অনুসারীরা। দুই রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় থানা ও সরকারি দফতরেও আগুন লাগানো শুরু হয়েছে। পাঞ্জাবের পাঁচকুলা, ভাতিণ্ডা, মনসা, মুকতাসর, ফিরোজপুরেও কারফিউ জারি হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচকুলার পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। আদালত চত্বরের বাইরে প্রবল গোলমাল হয়েছে। দূর থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা যাচ্ছে আদালত চত্বরের আকাশে। গতকাল রাত ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। পুলিশের সঙ্গে ডেরা অনুসারীদের সংঘর্ষে অন্তত ২০০ জন জখম। পাঁচকুলার হাসপাতালগুলোয় রোগীদের জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না বলেও খবর আসছে। শহরে রক্তের অভাব দেখা দিয়েছে।
এদিকে অশান্তি শুরু হতেই পাঁচকুলায় কারফিউ জারি করেছিল প্রশাসন। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। পুলিশের সঙ্গে প্রবল সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন ডেরা অনুসারীরা। লাঠিচার্জ করে এবং কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয় পুলিশ। তাই পুলিশ গুলি চালিয়েছে বলে জানানো হয়েছে। পুলিশের গুলিতেই ডেরা অনুসারীদের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে সরকারের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে গতকাল রাত ১০টা পর্যন্ত এ ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি।
ডেরা সচ্চা সৌদার সদর দফতর যেখানে, হরিয়ানার সেই সিরসাতেও তাণ্ডব প্রবল আকার নিয়েছে জানা যায়। পুলিশের সঙ্গে সেখানেও সংঘর্ষ হয় ডেরা অনুসারীদের। রাম রহিমের ভক্তদের হাতে সিরসায় আক্রান্ত হয়েছে সংবাদমাধ্যমও। তবে শুধু সিরসাতে নয়, পাঁচকুলাতেও সংবাদমাধ্যম আক্রান্ত হয়েছে। মিডিয়ার একাধিক গাড়ি ও ওবি ভ্যান নষ্ট করে দিয়েছে হামলাকারীরা। পাঁচকুলায় থানা এবং বিভিন্ন সরকারি দফতরে রাম রহিমের ভক্তরা আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন।
পরিস্থিতি প্রবল উত্তপ্ত পাঞ্জাবেও। ভাতিণ্ডা এবং মলোত রেলওয়ে স্টেশনে তাণ্ডবকারীরা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছে দিল্লিতেও। রাজধানীর আনন্দ বিহার রেলওয়ে স্টেশনে একটি ট্রেনে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। উত্তর-পূর্ব দিল্লির লোনি চকে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে একটি বাস।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং ফোনে কথা বলেছেন পাঞ্জাব ও হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহ এবং মনোহরলাল খট্টরের সঙ্গে। অশান্তি রুখতে পাঞ্জাবে কড়া হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে বলে রাজনাথকে জানিয়েছেন অমরেন্দ্র।
হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টরও জানিয়েছিলেন, ধর্ষণের মামলায় রায় যা-ই হোক, পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে যাবে না, পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কিন্তু শুক্রবার বিশেষ সিবিআই আদালত রাম রহিমকে দোষী সাব্যস্ত করতেই গোটা হরিয়ানার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেভাবে ভেঙে পড়েছে, তাতে স্পষ্ট যে খট্টরের প্রতিশ্রুতি ভিত্তিহীন ছিল। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং ডেরা সমর্থকদের শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। বাবা রাম রহিম নিজেও শান্তিই চাইছেন, জানানো হয়েছে সরকারের তরফে থেকে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেই। দুই রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা এখন তাণ্ডবের গ্রাসে। হরিয়ানা সীমান্ত সিল করে দিয়েছে উত্তরপ্রদেশ ও দিল্লির পুলিশ। তা সত্ত্বেও দিল্লিতে অশান্তি ছড়িয়ে পড়া রোখা যায়নি। উত্তরাখণ্ড থেকেও সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে।