নিজস্ব প্রতিবেদক: সারাদেশে ধান-চাল মজুতদারদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান আরও জোরদার করার ঘোষণা দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। গতকাল বৃহস্পতিবার খাদ্যমন্ত্রী চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের প্রতিনিধিদের নিয়ে ‘বোরো ২০২২ মৌসুমে অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ ও বাজার মনিটরিং-সংক্রান্ত অনলাইন মতবিনিময় সভায়’ তিনি এ ঘোষণা দেন।
গত বুধবার থেকে সারাদেশে অবৈধ মজুদদারদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থা। প্রথম দিনে আট বিভাগে কয়েকশ প্রতিষ্ঠানে যায় অভিযানকারী দল; জরিমানা করা হয় প্রায় ২৪ লাখ টাকা।
সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘একটি মহল খাদ্য ঘাটতির বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে, তবে বাংলাদেশে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা নেই। মজুদদারির বিরুদ্ধে অভিযান চলছে, এ অভিযান আরও জোরালো হবে।’
নিজস্ব মিল ও অনুমোদন না থাকলে বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো যেন ধান-চালের ব্যবসায় যুক্ত না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক করেন খাদ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বড় বড় করপোরেট হাউস ধান-চাল সংগ্রহ করছে। এসব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব মিল না থাকলে তারা যেন এ ব্যবসায় যুক্ত না হতে পারে, সেটা নিশ্চিতে ধান-চালের বাজারে নজরদারি বাড়াতে হবে।
সারাদেশে ধান ও চালের অবৈধ মজুদ খুঁজে বের করতে ‘গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে’ অভিযান চালানোর সিদ্ধান্তের কথা মঙ্গলবার জানিয়েছিল খাদ্য মন্ত্রণালয়।
সেদিন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা কামাল হোসেন জানিয়েছিলেন, ১৯৫৬ সালের অ্যাসেনশিয়াল কমোডিটি অ্যাক্টে বলা আছে, কোন পর্যায়ে কতটুকু মজুদ রাখা যাবেÑসেই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালে এবং ২০২১ সালে দুটি আদেশ জারি করা হয়। সেই আলোকেই অভিযান চলবে।
২০১১ সালে জারি করা বিধিতে বলা হয়, সরকারের অনুমোদন ছাড়া কোনো ব্যবসায়ী এক টনের বেশি খাদ্যসামগ্রী তার অধিকারে রাখতে পারবে না। অনুমোদিত ব্যবসায়ীদের মধ্যে পাইকারি ব্যবসায়ী সর্বোচ্চ ৩০০ টন ধান অথবা চাল ৩০ দিন পর্যন্ত মজুত রাখতে পারবেন। খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ১৫ টন ধান অথবা চাল ১৫ দিন মজুত রাখতে পারবেন। চালকল মালিকরা পাক্ষিক ছাঁটাই ক্ষমতার ৫ গুণ ধান সর্বোচ্চ ৩০ দিন মজুত রাখতে পারবেন। পাক্ষিক ছাঁটাই ক্ষমতার দ্বিগুণ চাল সর্বোচ্চ ১৫ দিন মজুত রাখা যাবে। হাস্কিং মিল মালিকরা সর্বোচ্চ ১০০ টন ১৫ দিন মজুত রাখতে পারবেন।
গতকাল খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সাধন বলেন, ‘ফুড গ্রেইন লাইসেন্স প্রদান ও নবায়নে জোর দিতে হবে। কেউ যেন লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা না করতে পারে, অবৈধ মজুত করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট ১৯৭৪ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।’
প্রতিবেশী দেশগুলোতে চাল ও গমের দাম কমতে শুরু করেছেÑউল্লেখ করে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সে দেশগুলো চাল ও গম রপ্তানি করবে মর্মে পত্রও দিচ্ছে। বাজার অস্থির করতে দেয়া হবে না। প্রয়োজনে ট্যাক্স কমিয়ে চাল আমদানি করা হবে।’
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. মজিবর রহমানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাখাওয়াত হোসেন, চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের জেলা প্রশাসক, কৃষি বিভাগের উপপরিচালক খাদ্য বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও মিল মালিকরা সভায় যুক্ত ছিলেন।
এদিকে ভরা মৌসুমে চালের দাম বৃদ্ধির ঘটনায় ব্যবসায়ীদের ওপর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখালেন তাদেরই শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
তিনি বলেছেন, শুষ্ক মৌসুমে চালের উৎপাদন সবচেয়ে বেশি হয়। এখন সেই মৌসুম, কিন্তু হাওরের কথা বলে কৃত্রিমভাবে চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে। দেশের উৎপাদিত মোট চালের মধ্যে মাত্র ৬ শতাংশ হাওর এলাকায় হয়।
গতকাল মতিঝিলে এফবিসিসিআই কার্যালয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর আমদানি মজুত, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি বিষয়ে মতবিনিময় সভায় কথা বলছিলেন সংগঠনের সভাপতি।
তিনি বলেন, ‘হাওরে এবার সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাতে বাজারে দাম বাড়ার কথা নয়। কিছু ব্যবসায়ী চালের দাম বাড়াচ্ছে; সরকারের ধরপাকড় সঠিক, মনিটরিং অব্যাহত রাখা। মজুত করে কেন বেশি দামে বিক্রি করবেন ব্যবসায়ীরা?”
মিলে এখন উন্নত প্রযুক্তি যুক্ত হওয়ায় চাল উৎপাদন খরচ কমে আসার কথা মন্তব্য করে এফবিসিসিআইয়ের অনুষ্ঠানে জসিম উদ্দিন প্রশ্ন করেন, ‘তাহলে কেন কমছে না?’ এ সময়ে চাল ব্যবসায়ীদের পক্ষে সিটি গ্রæপের উপদেষ্টা অমিতাভ চক্রবর্তী বলেন, ‘ধান বেশি দামে কিনলে তো বেশি দামে চাল বিক্রি করব। মাত্র ১ শতাংশ ব্যবসায়ী খারাপ কাজ করছে, তাদের দায় তো সব ব্যবসায়ী নেবে না। চালের সরবরাহ যথেষ্ট রয়েছে, সমস্যা হবে না।’
ভোজ্যতেলের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আগামী কোরবানির ঈদে তেলের ঘাটতি হবে না।’