এ কে সাজু, নওগাঁ : নওগাঁর খুচরা বাজারে বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, মোকামে চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে খুচরা বাজারে বেড়েছে চালের দাম। আর মিল মালিকরা বলছেন, বাজারে ধানের দাম বৃদ্ধি, আমদানিকৃত চালের দাম বৃদ্ধি ও ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়া নওগাঁর বাজারে বৃদ্ধি পেয়েছে চালের বাজারদর।
এদিকে চালের দামের পাশাপাশি নওগাঁয় বেড়েছে কাঁচামরিচের দামও। দুই সপ্তাহ আগেও নওগাঁর বিভিন্ন হাটবাজারে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছিল। বর্তমানে সেই কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকায়।
গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নওগাঁর মোকাম সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে বেড়েছে দুই থেকে তিন টাকা। আর বস্তাপ্রতি বেড়েছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। বর্তমানে নওগাঁর খুচরা বাজারে প্রতিকেজি কাটারি ৬৮ থেকে বেড়ে ৭০, জিরা ৬০ থেকে বেড়ে ৬২, আটাশ ৫৪ থেকে বেড়ে ৫৬ এবং স্বর্ণা ৪৬/৪৮ থেকে বেড়ে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
নওগাঁর খুচরা চাল বাজারের ব্যবসায়ী তাপস কুমার জানান, মিলাররা চাল দিতে চাচ্ছেন না। আবার দিলেও তা কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। আর আমরা বেশি দামে কিনেছি, তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
নওগাঁ চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার জানান, বাজারে ধারের দাম কিছুটা বৃদ্ধি, আমদানিকৃত চালের দাম বৃদ্ধি ও ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি করা ছাড়া বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা আপাতত সম্ভব নয় বলেও জানান এই ব্যবসায়ী।
নওগাঁ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জিএম ফারুক হোসেন পাটোয়ারী জানান, অবৈধ মজুত রেখে চালের দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অবৈধ মজুতের প্রমাণ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কাঁচা মরিচের কেজি ২৪০ টাকা: এদিকে দুই সপ্তাহ আগেও নওগাঁর বিভিন্ন হাটবাজারে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছিল। বর্তমানে সেই কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকায়। বৃষ্টিতে ক্ষেত নষ্টের অজুহাতে মরিচের পাশাপাশি দাম বেড়েছে অন্য সবজিরও।
গতকাল বুধবার নওগাঁ পৌর পাইকারি বাজারে মরিচ বিক্রি করতে আসা কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চাহিদায় তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় প্রায় প্রতিদিনই মরিচসহ বিভিন্ন সবজির দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। পাইকারিতে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ মানভেদে বিক্রি হয়েছে ১৯০ থেকে ২১০ টাকা কেজি দরে। দুই সপ্তাহ আগে পাইকারিতে প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। মরিচের পাশাপাশি দাম বেড়েছে ঢ্যাঁড়শ, করলা, পটোল, বেগুন, কাঁকরোলসহ বিভিন্ন সবজির দাম।
পৌর পাইকারি বাজার থেকে ২০০ মিটার দূরে পৌর কাঁচাবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাইকারি বাজারের তুলনায় সেখানে প্রতি কেজি মরিচ মানভেদে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। পৌর কাঁচাবাজারে বিক্রেতারা প্রতি কেজি মরিচের দাম চাইছেন ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা। দুই সপ্তাহ আগে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়। আকাশচুম্বী দাম শুনে বিক্রেতাদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়ছেন ক্রেতারা। এ ছাড়া আজ প্রতি কেজি ঢ্যাঁড়শ ৮০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, কাঁকরোল ১২০ টাকা ও বেগুন ৬০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে, যা গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ১০-১৫ টাকা বেশি।
এ বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে প্রায় প্রতি দিনই বৃষ্টি হচ্ছে। ভারী বর্ষণের কারণে জেলার মান্দা, বদলগাছী ও নওগাঁ সদর উপজেলার অনেক নিচু এলাকার সবজিক্ষেত বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। এ ছাড়া অনেক সবজিক্ষেতে পানি জমে যাওয়ায় মরিচসহ বিভিন্ন সবজি গাছের ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে বাজারে চাহিদার তুলনায় মরিচ, পটোল, ঢ্যাঁড়শসহ বিভিন্ন সবজির সরবরাহ কমে গেছে। তাই দাম বেড়েছে।
পৌর পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টির কারণে বাজারে মরিচসহ বিভিন্ন সবজির সরবরাহ অনেক কমে গেছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় ১৪-১৫ দিনের ব্যবধানে মরিচের দাম প্রায় তিনগুণ বেড়ে গেছে।
পৌর পাইকারি বাজার সমিতির সভাপতি সাইদুর রহমান বলেন, আগে প্রতি দিন বাজারে যেখানে ৫০ থেকে ৬০ মণ মরিচের আমদানি হতো, এখন সেখানে ৩০-৩৫ মণ মরিচের আমদানি হচ্ছে। শুধু মরিচ নয়, সব ধরনের সবজির সরবরাহ কমে গেছে। বৃষ্টির পানি জমে ক্ষেতের সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এমন পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। প্রতিবছর বর্ষায় সবজির দাম বাড়তি থাকে। এবারও আগামী এক-দেড় মাস সবজির দাম বাড়তি থাকতে পারে।