নওগাঁয় চা দোকানির বিরুদ্ধে ৫৮ লাখ টাকার মামলা

একে সাজু, নওগাঁ: নওগাঁর রাজু আহম্মেদ পেশায় চা দোকানি। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় এ চা দোকান থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে চলে তার সংসার। কভিড-১৯-এর কারণে দোকান বন্ধ থাকায় বিভিন্ন সময় অনুদান পেতে দিতে হয়েছে তার জাতীয় পরিচয়পত্র। আর এটিই হয়েছে তার জীবন-মরণ সমস্যা।

জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করায় ৫৮ লাখ টাকার মামলায় ফেঁসে গেলেন রাজু। এমন মামলায় দিশেহারা তার পরিবার। মামলা থেকে বাঁচতে বাড়িঘর ছেড়ে এখন ঘুরছেন অন্যের দ্বারে দ্বারে। স্থানীয়রা বলছেন, চা দোকানি রাজু বা তার পরিবার কোনোদিন জড়িত ছিলেন না বড় কোনো ব্যবসার সঙ্গে। আর আদনান এগ্রো লিমিটেডের প্রতিনিধি বলছেন, চা দোকানি রাজুকে ফাঁসিয়েছে অন্য কোনো রাজু।

জাতীয় পরিচয়পত্রে রাজু আহম্মেদ নামের সঙ্গে জুড়ে দেয়া হয়েছে মামুন (রাজু আহম্মেদ মামুন)। বাকি তথ্যগুলোর কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। রাজু আহম্মেদ মামুন নামের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে তাকে প্রোপাইটার দেখিয়ে নওগাঁ থেকে মেসার্স বাবু ট্রেডার্স নামে একটি ভুয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মাছ ও মুরগির খাবারের ব্যবসার জন্য ঢাকা উত্তরায় আদনান এগ্রো লিমিটেডের বিক্রয় পরিবেশক হিসেবে চুক্তিনামা করেন। চুক্তিনামায় যে ট্রেড লাইসেন্স ব্যবহার করা হয়েছে সেটিও ১৫ বছর আগে বন্ধ হওয়া একটি গার্মেন্ট দোকানের। ট্রেড লাইসেন্সের সবকিছু ঠিক রেখে শুধু পরিবর্তন করা হয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম। হিমু গার্মেন্টের স্থলে বসানো হয়েছে বাবু ট্রেডার্স। ব্যবসায় লেনদেনের একপর্যায়ে ৫৭ লাখ ৭৮ হাজার ৬০৫ টাকা বাকি রেখে উধাও বাবু ট্রেডার্স।

এ বিষয়ে গত ২১ জুলাই নেত্রকোনা আদালতে আদনান এগ্রো লিমিটেড হস্তান্তর যোগ্য দলিল আইন ১৮৮১ এর ১৩৯(১) ধারায় রাজু আহম্মেদ মামুনকে আসামি করে মামলা করেন। এতে ফেঁসে যান চা দোকানি রাজু আহম্মেদ।

রাজু আহম্মেদ বলেন, কভিডকালে চা দোকান বন্ধ থাকায় অনুদানের জন্য বিভিন্ন জায়গায় আমার জাতীয় পরিচায়পত্র দিয়েছিলাম। কে বা কারা কোথা থেকে আমার জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে আমাকে ফাঁসিয়েছেন তা আমি সঠিক বলতে পারছি না। আর এ মামলা নিয়ে আমি কি করব তা ভেবেও পাচ্ছি না। এ বিপদ থেকে উদ্ধার না হতে পারলে না খেয়ে ও দুশ্চিন্তায় মারা যাবে আমার পরিবার।

রাজু আহম্মেদের বাবা কাজেম মৃধা বলেন, একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তানের এমন বিপদে দিশেহারা আমরা। সন্তানকে বিপদ থেকে উদ্ধারের আশায় মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি কিন্তু কেউ সমাধান দিতে পারছেন না।

নওগাঁ ফিড ব্যবসায়ী বজলুর রহমান জানান, রাজু বা তার পরিবার কোনোদিনই এমন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। রাজু ফিডের ব্যবসা তো দূরের কথা, এ বিষয়ে তার সাধারণ জ্ঞানও নেই।

আদনান এগ্রো লিমিটেডের উত্তর বঙ্গ এরিয়া ম্যানেজার সাপহাব উদ্দীন বলেন, চা দোকানি রাজু আহম্মেদকে ফাঁসিয়েছে অন্য কোনো রাজু। এ চা দোকানি কোনোভাবে এর সঙ্গে জড়িত না, এটি আমরা পরিষ্কার হয়েছি। বিষয়টি অফিসকে জানানো হয়েছে। তবে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি এ বিষয়ে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) নওগাঁ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুন নবী বেলাল বলছেন, এ জালিয়াতির সঙ্গে আদনান এগ্রো লিমিটেডের কর্তাব্যক্তিরাও জড়িত রয়েছেন। কারণ একজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে এত টাকা বাকিতে লেনদেন করবেন তাদের সম্পর্কে জানার প্রয়োজন ছিল। জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই না করে কেমন করে এত টাকার লেনদেন করেন তা আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করে।