ঈদ-পরবর্তী মাত্র চারদিনে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশ। ঈদের আগে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনাও একেবারে কম নয়। প্রতিবারই ঈদ মৌসুমে দুর্ঘটনার এ চিত্র দেখতে হচ্ছে আমাদের। রেলপথেও ছাদে যাত্রী বহনের কারণে কয়েকজনের মৃত্যু ও অঙ্গহানি ঘটেছে এবার। তবে সড়কপথে দুর্ঘটনাই বেশি। ঈদ সামনে রেখে সড়ক ব্যবস্থাপনা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ব্যবস্থা গৃহীত হলেও তা বড় পরিবর্তন আনতে পারছে না। ঈদের ছুটিতে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার এবার কিছুটা কম, এমনটা অবশ্য বলা হচ্ছে। মহাসড়কে যানজট থাকলেও তার মাত্রা ছিল অন্যবারের চেয়ে কম। সব মহাসড়কে যানজট ছিল না। ঈদের আগে রাস্তায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি নামানোর বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের মনোযোগও কিছুটা লক্ষ করা গেছে এবার। এ থেকে বলা যায়, আরও আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলে সমস্যা অনেকটাই কমানো সম্ভব। বর্তমান পরিস্থিতিতে অবশ্য কেবল সরকার নয়, সতর্ক হতে হবে বাসমালিক, চালক, যাত্রী ও পথচারীকে। এটা তো ঠিক, উৎসবের ছুটিতে সড়ক দুর্ঘটনার হার বৃদ্ধিতে একাধিক পক্ষ দায়ী। সড়কের ধারে দোকানপাট গড়ে তোলা জনগোষ্ঠীও দায় এড়াতে পারবে না।
স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ঈদের সময়ে সড়ক-মহাসড়কে যান চলাচল কয়েকগুণ বেশি থাকে। স্বজনদের সঙ্গে ঈদ কাটাতে বিপুল সংখ্যক মানুষ একযোগে বাড়ির পানে ছোটে। এ সুযোগে বাসমালিকদের একটি অংশ সারা দেশেই নামায় লোকাল বাস। এগুলোর অধিকাংশই মহাসড়কে চলাচলের উপযুক্ত নয়। এগুলো প্রায়ই পথে বিকল হয়ে যানজট বাঁধায়। কখনও দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে ঘটায় প্রাণহানি। এছাড়া ঈদের আগে ও পরে যানজট বেশি হওয়ায় অধিকাংশ চালককে দীর্ঘ সময় টানা বাস- ট্রাক চালাতে হয়। এতে ক্লান্ত ও অবসন্ন চালকের ভুলেও ঘটছে দুর্ঘটনা। এর প্রতিকার সহজ নয়। তবে সচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে সমস্যার মাত্রা কিছুটা কমানো সম্ভব। নজরদারি বাড়িয়ে তোলা গেলেও কিছু সুফল মিলবে।
চালকদের দিয়ে টানা আট ঘণ্টার বেশি যানবাহন চালানো বন্ধ করতে হবে। কেবল উৎসব নয়, স্বাভাবিক সময়েও এটি নিশ্চিত করতে হবে। ফিটনেসবিহীন বাস চলাচল বন্ধ করতে হবে কঠোভাবে। ট্রাফিক আইন অমান্যকারী চালকদের ব্যাপারে কঠোর হতে হবে। যাত্রীদেরও যার যার অবস্থান থেকে হতে হবে সজাগ। অনেকেই নিজের ও পরিবারের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস, ট্রেন, লঞ্চে যাতায়াত করেন। বাস, ট্রেনের ছাদে চড়ে বসেন তাদের অনেকে। এ প্রবণতা অনুৎসাহিত করতে হবে। ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার বিকল্প নিয়েও ভাবা যেতে পারে। অনেকে গ্রাম থেকে পরিবারকে আনিয়ে নিতে পারেন নগরীতে। কারও সুযোগ থাকলে ঈদের পর ছুটি কাটিয়ে আসতে পারেন। মোটকথা, উৎসবের আনন্দে মৃত্যুর মিছিল থামাতে সচেতন হতে হবে সবাইকে।
সরকারি ও বেসরকারি খাতে ছুটি শেষ হলেও নগরীতে ঈদের আমেজ রয়ে গেছে এখনও। রাজধানী এখনও তার স্বাভাবিক চেহারা ফিরে পায়নি। চলতি সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতেও সারা দেশ থেকে কর্মস্থলে ফিরবে মানুষ। চট্টগ্রামসহ বড় বড় নগরীতে ফেরার জন্যও উদ্যোগী হবেন তারা। এ অবস্থায় বিশেষত সড়কপথে দুর্ঘটনার ঝুঁকি এখনও রয়ে গেছে। অনেক সময় দেখা যায়, গ্রামের বাড়ি যাওয়ার পথে কম দুর্ঘটনা ঘটলেও ফেরার পথে ঘটে বড় বড় দুর্ঘটনা। নদীপথেও লঞ্চডুবি হতে দেখা যায় এ সময়ে। প্রশাসন ঢিলেঢালা মুডে থাকায় এমনটা ঘটে বলে অনেকের মত। এ কারণে আরও কয়েকদিন যাত্রী নিরাপত্তার বিষয়ে বিশেষ সতর্কতার সঙ্গে তৎপর থাকার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

Print Date & Time : 28 July 2025 Monday 3:44 am
নগরীতে ফেরাটাও হোক নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ
সম্পাদকীয় ♦ প্রকাশ: