নতুন জাতের গম উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে: কৃষিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্লাস্ট প্রতিরোধী উচ্চ ফলনশীল গমের নতুন জাতের মাধ্যমে দেশে গমের চাষ ও উৎপাদন বহুগুণে বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘দেশে দিন দিন গমের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের আবহাওয়া গম চাষের জন্য খুব উপযোগী না হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী পুরো দেশে উৎপাদন করা সম্ভব হয় না। দেশে আগে গমের অনেক জাত জনপ্রিয় হয়েছিল, কিন্তু সেগুলো সহজেই ব্লাস্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হতো। নতুন উদ্ভাবিত জাত, যেমন বারি গম-৩৩-সহ আরও কয়েকটি জাত ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী।’

গতকাল দিনাজপুরের নশিপুরে বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটে গম ও ভুট্টার চলমান গবেষণা মাঠ পরিদর্শন শেষে কৃষিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

নতুন উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতগুলোর সম্ভাবনা অনেক বেশি বলে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘এই দিনাজপুরে জাতগুলোর উন্নত বীজ উৎপাদন করে সারাদেশে চাষে ব্যবহƒত হবে। এর ফলে দেশের বিরাট এলাকা গম চাষের আওতায় আসবে ও উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।’

বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, ব্লাস্ট প্রতিরোধী গমের মধ্যে বারি গম-৩৩, ডব্লিউএমআরআই গম-২ ও ডব্লিউএমআরআই গম-৩ উল্লেখযোগ্য। বারি গম-৩৩-এর বৈশিষ্ট্য হলোÑএটি ব্লাস্ট প্রতিরোধী। পাতার মরিচা ও পাতা ঝলসানো রোগ প্রতিরোধী। তাপসহিষ্ণু। কাণ্ড শক্ত, সহজে হেলে পড়ে না। জীবনকাল ১১০ থেকে ১১৫ দিন। গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ৪.৬ থেকে পাঁচ টন। দানা বড়, সাদা ও চকচকে। জিংকসমৃদ্ধ (৫০-৫৫ পিপিএম)। ব্লাস্টপ্রবণ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে চাষের জন্য বেশি উপযোগী। ২০১৭ সালে এটি অবমুক্ত করা হয়।

ডব্লিউএমআরআই গম-২-এর বৈশিষ্ট্য হলো ব্লাস্ট সহনশীল, পাতা ঝলসানো ও পাতার মরিচা রোগ প্রতিরোধী। তাপসহিষ্ণু ও আগাম। স্বল্পমেয়াদি জীবনকাল ১০৬ থেকে ১১২ দিন। ফলন হেক্টরপ্রতি চার দশমিক পাঁচ থেকে পাঁচ দশমিক পাঁচ টন। ডব্লিউএমআরআই গম-৩-এর বৈশিষ্ট্য হলো ব্লাস্ট প্রতিরোধী, পাতা ঝলসানো ও পাতার মরিচা প্রতিরোধী। তাপসহিষ্ণু। জীবনকাল ১০৮ থেকে ১১৪ দিন। খাটো জাতের। ফলন হেক্টরপ্রতি চার থেকে চার দশমিক পাঁচ টন।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে বাংলাদেশে প্রথম ব্লাস্ট দেখা দেয়। ব্লাস্টে আক্রান্ত ফসলের উৎপাদন শতকরা ২৫ থেকে ৩০ ভাগ হ্রাস পায়।

ভুট্টায় আর্মিওয়ার্ম পোকার আক্রমণ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘সিমিট ও দেশের বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টায় এটি মোটামুটি  নিয়ন্ত্রণে আছে। এটি নিয়ে তীব্র কোনো সমস্যা নেই।’

কৃষিমন্ত্রী সরেজমিনে গবেষণা মাঠ পরিদর্শন শেষে বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ উদ্বোধন করেন। পরে দুপুরে মন্ত্রী ইনস্টিটিউট চত্বরে চার দিনব্যাপী ‘কৃষি প্রযুক্তি প্রদর্শন মেলা, ২০২১’ উদ্বোধন করেন ও কর্মশালায় কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় যোগ দেন। মন্ত্রী এ সময় জলবায়ু পরিবর্তনসহ ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গম ও ভুট্টার নতুন জাত ও টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং সেগুলো কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দেন।

বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. এছরাইল হোসেন কর্মশালায় গম ও ভুট্টার উৎপাদন, গবেষণা ও উন্নয়নের সার্বিক চিত্রের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, এই ইনস্টিটিউট এ পর্যন্ত ৩৬টি উচ্চ ফলনশীল গমের জাত উদ্ভাবন করেছে। এগুলোর মধ্যে গমের ব্লাস্ট প্রতিরোধী ও জিঙ্কসমৃদ্ধ জাত বারি গম ৩৩ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ইনস্টিটিউট ২০১৯ সালে ডব্লিউএমআরআই গম-১ ও অতিসম্প্রতি ডব্লিউএমআরআই গম-২ (ব্লাস্ট রোগ সহনশীল) ও ডব্লিউএমআরআই গম-৩ (ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী) জাত অবমুক্ত করেছে। এছাড়া এ পর্যন্ত ভুট্টার ১৯টি হাইব্রিড জাত ও সাতটি ওপেন পলিনেটেড কম্পোজিট জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। হুইপ ইকবালুর রহিম বলেন, ‘দিনাজপুরে সব ধরনের ফসলের চাষের সম্ভাবনা প্রচুর। এ অঞ্চলে গম, ভুট্টাসহ শাকসবজি ও ফল প্রক্রিয়াকরণের জন্য দ্রুত কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে তোলা প্রয়োজন।’