Print Date & Time : 2 September 2025 Tuesday 9:15 pm

নতুন বছরের সূচনা হোক স্বপ্ন পূরণের প্রত্যয়ে

আরিফ হোসাইন: মানবজাতি সৃষ্টির সেরা জীব, অর্থাৎ আশরাফুল মাখলুকাত। মানবজাতিকে সৃষ্টির জন্য সৃষ্টিকর্তার যেমন একটা উদ্দেশ্য, লক্ষ্য, স্বপ্ন ও অভিলাষ আছে, তদ্রƒপ প্রতিটি মানুষের এই ক্ষণস্থায়ী জীবনেও নানা স্বপ্ন, ইচ্ছা ও সংকল্প থাকে। এই স্বপ্ন পূরণে প্রত্যেককে হতে হবে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ, পরিশ্রমী এবং থাকতে হবে যথাযথ পরিকল্পনা। গাছ হওয়ার জন্য যেমন বীজ বপন করা জরুরি, তেমনিভাবে স্বপ্ন পূরণের জন্য প্রয়োজন স্বপ্ন দেখা, তদানুসারে কার্যক্রম সম্পন্ন করা এবং থাকা উচিত যথাযথ প্রচেষ্টা। তাহলেই কেবল সার্থকতা আসবে, আসবে পরিপূর্ণতা প্রতিটি ক্ষেত্রে। স্বপ্ন পূরণের ক্ষেত্রে বেশ কিছু ধাপে খেয়াল রেখে কাজ করা অত্যাবশ্যক, তার মধ্যে যথাযথ পরিকল্পনা অন্যতম। বৈঠাবিহীন নৌকা যেমন এলোমেলো পথ চলে, তদ্রƒপ সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়াও স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে যায়। সুতরাং স্বপ্ন পূরণের পূর্বে লক্ষ্য স্থির রেখে তদনুসারে কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।

হতাশা স্বপ্ন পূরণের পথে সব থেকে বড় বাধা। প্রতিটি ক্ষেত্রেই হতাশা আসে, নির্মূল করে দিয়ে যায় যত সব স্বপ্ন, আশার আলো নিভিয়ে দেয়, ঘোর অমানিশা হয়ে যায় চারদিক। স্বপ্ন, ইচ্ছা, কিংবা অভিলাষ প্রতিটি মানুষকে নতুন করে বাঁচতে শেখায়, ভাবতে শেখায়। স্বপ্ন পূরণের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা যেমন জরুরি, হতাশা নির্মূল করাও জরুরি। একটি অপরটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমাদের তরুণ প্রজš§ কাজের ক্ষেত্রে অটুট থাকতে না পেরে হতাশায় নিমজ্জিত হয়, বাধা-বিপত্তিকে আটকাতে পারে না, ফলে তাদের স্বপ্ন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। সুতরাং হতাশা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যও চাই সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, যাতে স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় সহজেই।

সব থেকে জরুরি নিজের স্বপ্নকে জানা, স্বপ্নের ইতিবাচক-নেতিবাচক সব দিক সম্পর্কে জানা এবং নিজের স্বপ্ন নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হওয়া। আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তি স্বপ্ন পূরণের ক্ষেত্রে সবার থেকেই এগিয়ে থাকে। আত্মবিশ্বাস প্রতিটি মানুষকে স্বপ্ন যেমন দেখায়, লক্ষ্যেও পৌঁছে দিচ্ছে তেমনিভাবে। আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তিকে কোনো অপশক্তি, বাধা-বিপত্তি আটকাতে পারে না, পারে না রুখে দিতে সংকল্পবদ্ধ স্বপ্নকে। মানুষ স্বভাবতই নিজের স্বপ্নকে ভালোবাসে এবং স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে কাজ করে, কিন্তু তবুও মাঝে মাঝে ভুল হয়ে যায়, যা স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে বাধা হয়ে যায়। কিন্তু এই ভুলকে জয় করে ভুল থেকে শিক্ষা নিতে পারলে শুধু স্বপ্ন পূরণের ক্ষেত্রে নয়, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আসবে সফলতা, সার্থকতা এবং কখনোই তাকে ব্যর্থতা হাতছানি দেবে না, কিংবা গ্রাসও করতে পারবে না।

সুতরাং ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে একই ভুল আবার না করার মধ্যেও থাকে স্বপ্ন পূরণের আশীর্বাদ।

স্বপ্ন পূরণের ক্ষেত্রে যেসব বাধা খুব কঠিন থেকেও কঠিন, তার মধ্যে ভয় অন্যতম। ভয় মানুষের স্বপ্নকে গ্রাস করে, বিপথে নিয়ে যায়, করে পথহারা, দিশাহারা। সঠিক পথের দিশা পেতে কিংবা স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যেকে ধূলিসাৎ করে দেয় ভয়। ভয়কে জয় করতে পারলে স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে অনেকাংশে এগিয়ে যাওয়া যাবে এবং আমাদের স্বপ্ন দেখার ক্ষেত্রে আরও একটি দিক বিশেষ বিবেচনায় রাখতে হবে, সেটা হলো এমন স্বপ্ন দেখা যা দেশ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য সহনশীল এবং সবাই এর জন্য কল্যাণকর। দেশ, জাতি সবাই উপকৃত হলেই স্বপ্ন দেখা এবং পূরণ হওয়া একে অন্যের পরিপূরক হবে, হবে স্বপ্ন সার্থক।

সবশেষে স্বপ্ন পূরণের ক্ষেত্রে অন্যতম একটা পাথেয় বন্ধুবান্ধব। বন্ধুদের সর্বাত্মক সহোযোগিতা থাকলে স্বপ্ন পূরণের পথটা হয় আরও সুন্দর আরও সহজ-সাবলীল। খুব প্রচলিত একটা প্রবাদ আছে, ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।’ সুতরাং স্বপ্ন পূরণের ক্ষেত্রে বন্ধুবান্ধবদের ভূমিকা অন্যতম এবং অনস্বীকার্য ও অত্যাবশ্যক। ছায়া যেমন মানুষের পিছু ছাড়ে না, স্বপ্ন পূরণের ক্ষেত্রেও মানুষকে তদ্রƒপ দৃঢ় প্রত্যয়ী হতে হবে।

মানবজাতিকে প্রতিটি ক্ষেত্রে উন্নয়নকল্পে ও সার্থকতা পেতে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে হবে, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ব্যতিরেকে স্বপ্ন পূরণ করা অসম্ভব। কারণ প্রথমেই মনে গেঁথে যায় আমার দ্বারা সম্ভব নয়, আমি পারব না। এসব ব্যাপার প্রত্যাখ্যান করতে পারলেই সহজ হবে স্বপ্ন পূরণের পথ। পরিশেষে বলা যায়, ২০২২ সালে আমাদের জীবনের জন্য রয়েছে শিক্ষা, হাসি-কান্না, আনন্দ, দুঃখ-কষ্ট, ব্যথা, অশ্রু ও গ্লানি। সবকিছুকে ভুলে নতুন বছরের স্বপ্ন পূরণের প্রত্যয়ে নতুনভাবে উদ্যমী হয়ে কাজ করতে হবে। প্রতিটি বছরের মতো এই ২০২৩ সালকে ঘিরেও আমাদের থাকুক সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, থাকুক কিছু স্বপ্ন, যা পূরণের লক্ষ্যে সূচনা হোক আমাদের নতুন বছরের। বিশ্বজুড়ে শান্তি ফিরে আসুক, ফিরে আসুক সুখ-শান্তিÑএই প্রত্যয়ে নতুন বছরের আগমন হোক।

শিক্ষার্থী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়