নতুন বছর আসা মানে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচিত হওয়া। নতুন বছর আসা মানে জীবনের নির্ধারিত আয়ু থেকে একটি বছর চলে যাওয়া। বিগত সময়ের ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে নতুন উদ্যমে নতুনের কেতন ওড়ানোর আনন্দ উপভোগ করা। অকল্যাণের বেড়াজাল থেকে মুক্ত হয়ে অবারিত কল্যাণের।
বিশ্বজুড়েই বর্ষ শুরু উদযাপন করার রেওয়াজ রয়েছে। আফ্রিকার অনেক দেশ বর্ষা ঋতুতে নববর্ষ পালন করে যেমন ইথিওপিয়ায় পালিত হয় ১১ সেপ্টেম্বরে। চীনে চান্দ্র পঞ্জিকা অনুযায়ী নববর্ষের হিসাব করে। প্রতি তিন বছর পরপর সৌর পঞ্জিকার হিসেবে সংশোধন করে নেয়। এ কারণে বছরভেদে চীনে নববর্ষ পালিত হয় ২০ জানুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। চীনা নববর্ষ পালনে বেশ জাঁকজমক হয়। আয়োজন হয় বিশেষ খাদ্যের। পরিবারের সবাই একত্র হওয়ার চেষ্টা করে। সৌভাগ্যের প্রতীক লাল রঙের ছড়াছড়ি হয় দেশটিতে। লাল ইনভেলপে ভরে টাকা উপহার দেয় পরিচিতজনদের। ড্রাগন নৃত্যসহ নানা গান-বাজনায় মুখর থাকে চীনের শহর-গ্রাম। জাপানিরা এখন গ্রেগরীয় ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে নববর্ষ পালন করে ১ জানুয়ারি। এভাবে সারা পৃথিবীতেই নববর্ষ পালিত হয় আনন্দ উৎসব আবার ধর্মীয় প্রণোদনা নিয়ে পথে ধাবিত হওয়ার শুভযাত্রা শুরু। নতুন মাস দিয়ে শুরু হয় নতুন বছর। নতুন মাসে সময়ের মালিকের কাছে এই আবেদন: ‘আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ইমান, ওয়াছ ছালামাতি য়াল ইসলাম; রব্বিজ ওয়া রব্বুকাল্লাহ; হিলালু রুশদিন ওয়া খায়র।’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! আপনি এই মাসকে আমাদের জন্য নিরাপত্তা, ইমান, প্রশান্তি ও ইসলাম-সহযোগে আনয়ন করুন।
কিন্তু ফেলে আসা বছরটি খুব একটা ভালো যায়নি বাংলাদেশ নামক নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশের মানুষের জীবনে; তবে শুধু বাংলাদেশই নয়, গত এক যুগের মধ্যে পুরো বিশ্বই এখন সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির সামনে আছে; যার ফলে দৈনিক জীবন নির্বাহের ব্যয় বেড়েছে কয়েক গুণ। আর বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার কারণ হিসেবে প্রধানত করোনাভাইরাস মহামারির প্রভাব, ইউক্রেন যুদ্ধ, জ্বালানি তেলের উচ্চমূল্য, পরিবহন খরচ ব্যাপক বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করা হচ্ছে। বিবিএসের হিসাবে, গত আগস্ট মাসে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ।
অর্থনৈতিক সমস্যা ও জীবন নির্বাহের ব্যয় কমানোর পাশাপাশি নানা উদ্যোগই পারে ভয়াবহ এ পরিস্থিতি থেকে আমাদের বাঁচাতে।
কী করা যেতে পারেÑএসব সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে: সংকটজনক পরিস্থিতির চটজলদি কোনো সমাধান নেই। আমাদের দরকার দুই অথবা তিন বছরের একটি ‘অর্থনীতি পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা’, যার অধীনে আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেট প্রণয়ন প্রয়োজন। সামনের অর্থবছরের বাজেট হওয়া দরকার একটি ‘কভিড-১৯’ সংবেদনশীল বাজেট। এই বাজেটে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি অগ্রাধিকার ক্ষেত্র থাকা উচিত। যেমন পরিকল্পনামাফিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু করার ব্যবস্থা নেয়া, স্বাস্থ্য, কৃষি ও সামাজিক সুরক্ষা খাতের জন্য উচ্চতর বরাদ্দ, প্রণোদনা প্যাকেজের যথাযথ বাস্তবায়ন এবং ব্যাংকিং ও কর খাতসহ কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয়ে কার্যকর সংস্কার কর্মসূচি নেয়া ও বাস্তবায়ন করা। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, যুবদের প্রশিক্ষণ, যুবদের জন্য আইসিটির বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও যুব উদ্যোক্তা তৈরি করে যুবদের কর্মসংস্থান এবং আত্ম-কর্মসংস্থানের জন্য এগিয়ে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এটি করাই এখন জরুরি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের জন্য। কভিড-১৯-এর ছোবলে দেশের অর্থনীতি ক্ষত-বিক্ষত হলেও এখন পুরো উদ্যমে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের জন্য কঠোর প্রচেষ্টা চলছে।
বর্তমানে খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে যেকোনো পণ্য কিনলে পাঁচ শতাংশ হারে ভ্যাট কেটে রাখা হয়। আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে এটি ৫ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। যদি তা বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে দ্রব্যমূল্যের দাম কিছুটা কমবে বলে আশা করা যায়। তাই নতুন বছরে একটি সুখীসমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা সবাই দেখতেই পারি।
নতুন বছরে বাংলাদেশ ও পৃথিবীর সব অঞ্চলের মানুষ শান্তিতে স্বস্তিতে নিরাপদে থাকুক। অর্থনৈতিক রাজনৈতিক সামাজিক স্থিতিশীলতা আসুক। দুনিয়ার সব অঞ্চলের মানুষের জীবনে বয়ে আনুক সুখ শান্তি আর মানবিক মূল্যবোধ। যেসব অঞ্চলে জনগণ নির্যাতিত অধিকার বঞ্চিত তাদের মানবাধিকার ফিরে আসুক। বস্তুহীন গৃহহীন নাগরিকহীন মানুষের জীবনে প্রশান্তি আসুক। নতুন বছরে যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই। সব মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা হোক। নারী শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠা হোক। পৃথিবীর সব মানুষের মধ্যে ভালোবাসা আর সম্প্রীতি জাগ্রত হোক, সে প্রত্যাশায় ইংরেজি নববর্ষের সফলতা।
ফজলে এলাহী ফুয়াদ
শিক্ষার্থী
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়