নতুন বিনিয়োগকারী টানতে পারছে না পুঁজিবাজার

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: সময় যতই গড়াচ্ছে, পুঁজিবাজারের প্রতি ততই আগ্রহ কমছে সাধারণ জনগণের। পুঁজিবাজারে দরপতন অব্যাহত থাকায় নতুন বিনিয়োগকারী আসছে না। চলতি বছরের প্রথম মাসে নতুন বিও অ্যাকাউন্ট খোলা হয় ২০২টি, ২০১০ সালের পর যা বিও হ্রাস পাওয়ার রেকর্ড। ফেব্রুয়ারিতেও এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। এ মাসে অ্যাকাউন্ট সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও তা হতাশাজনক। নতুন বিও বেড়েছে ৩২২টি; অর্থাৎ দুই মাসে বিও অ্যাকাউন্ট বেড়েছে মাত্র ৫২৪টি।

এদিকে আশঙ্কাজনক হারে বিও কমে যাওয়াকে স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছেন না সাধারণ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে বাজার-সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, পুঁজিবাজারে নতুন বিনিয়োগ না আসার প্রধান কারণ চলমান পতন। এ ধারা অব্যাহত থাকায় বাজারের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে না নতুন বিনিয়োগকারীর। যে কারণে বাড়ছে না বিও অ্যাকাউন্ট।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, প্রকৃতপক্ষে ২০১০ সালের পর পুঁজিবাজার কখনও দীর্ঘমেয়াদিভাবে ভালো থাকেনি। যে কারণে পুঁজিবাজারের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ অনেক কমে গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে এ পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়েছে। যে কারণে নতুন বিও খোলার সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। এছাড়া নতুন আইপিওর শেয়ারও কম আসছে। এলেও এখান থেকে লাভবান হতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। ফলে নতুনরা বাজারে আসতে ভয় পাচ্ছেন।

এ প্রসঙ্গে ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজার ভালো থাকলে সাধারণত বিও অ্যাকাউন্ট বাড়ে। আবার কোনো কারণে বাজারে মন্দা পরিস্থিতি দেখা দিলে এর সংখ্যা কমে যায়। আমি মনে করি, বাজার ভালোর দিকে গেলে আবারও বিও অ্যাকাউন্ট বাড়বে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, ফেব্রুয়ারি শেষে মোট বিও অ্যাকাউন্ট দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮২৫। জানুয়ারি শেষে যার সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ ৭৮ হাজার ৫০৩। আর গত বছরের ডিসেম্বর শেষে এ সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ ৭৮ হাজার ৩০১। সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী এ তথ্য জানা গেছে।

এদিকে জানুয়ারি শেষে পুরুষ বিনিয়োগকারীর বিও সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৮০ হাজার ৩৮৩। আর নারীদের রয়েছে ছয় লাখ ৮৪ হাজার ৯৮৫। এছাড়া কোম্পানির বিও রয়েছে ১৩ হাজার ২৭৯।

মূলত ২০১০ সালের পর থেকে বিও অ্যাকাউন্ট উল্লেখযোগ্য হারে কমতে থাকে। বর্তমানে অর্ধেকের বেশি অ্যাকাউন্ট হচ্ছে শেয়ারশূন্য। সিডিবিএলের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী এ তথ্য জানা গেছে। বর্তমানে মোট বিওর মধ্যে শেয়ারশূন্য ও ব্যবহার করা হচ্ছে না এমন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ১৪ লাখের বেশি।

গত বছর সময়মতো বিও ফি পরিশোধ না করায় বাতিল হয়ে গেছে প্রায় আড়াই লাখ অ্যাকাউন্ট। সেকেন্ডারি মার্কেটের মন্দা পরিস্থিতি, সে সঙ্গে আইপিও বাজারের নাজুক পরিস্থিতির জন্য এসব অ্যাকাউন্ট ঝরে গেছে বলে মনে করেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিমত, বর্তমানে বাজারচিত্র পরিবর্তিত হয়েছে। তাছাড়া প্রায় প্রতি মাসেই রয়েছে আইপিও, যে কারণে বিনিয়োগকারীরা বাজারে ফিরে আসছেন।

নিয়মানুযায়ী, জুন মাসে বিও ফি পরিশোধ না করলে সেসব অ্যাকাউন্ট এমনিতেই বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু যেসব হিসাবে শেয়ার কিংবা টাকা থাকে, সেসব হিসাব বন্ধ হয় না। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) ডিপোজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা, ২০০৩-এর তফসিল-৪ অনুযায়ী, বিও হিসাব পরিচালনার জন্য ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারী বা বিনিয়োগকারীকে নির্ধারিত হারে বার্ষিক হিসাবরক্ষণ ফি দিয়ে হিসাব নবায়ন করতে হয়। এর আগে পঞ্জিকাবর্ষ হিসেবে প্রতি বছর ডিসেম্বরে এই ফি জমা নেওয়া হতো। তবে ২০১০ সালের জুনে বিএসইসি বিও হিসাব নবায়নের সময় পরিবর্তন করে বার্ষিক ফি প্রদানের সময় জুন মাস নির্ধারণ করে। এ সময় বিও নবায়ন ফি ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়। এরপর বিএসইসির জারি করা ২০১১ সালের ১৮ এপ্রিল এক সার্কুলারে ৩০ জুনের মধ্যে বিও হিসাব নবায়নের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। না হলে তা বাতিল করা হবে বলে ওই সার্কুলারে বলা হয়েছিল। বর্তমানে বিও নবায়ন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫০ টাকা।