Print Date & Time : 18 July 2025 Friday 4:13 pm

নতুন বিনিয়োগকারী টানতে পারছে না পুঁজিবাজার

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: নতুন বিনিয়োগকারী টানতে পারছে না পুঁজিবাজার। ধারাবাহিক দরপতন, বাজার মূলধন কমে যাওয়া, মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানির শেয়ারদর হ্রাস, সর্বোপরি নতুন কোম্পানির লেনদেনের শুরুর দিন থেকে মূল্যসীমা নির্ধারণের কারণে পুঁজিবাজারের প্রতি আগ্রহ কমে গেছে সাধারণ জনগণের। যে কারণে পুঁজিবাজারে নতুন বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব খোলার সংখ্যাও কমে গেছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত দুই মাসে পুঁজিবাজারে নতুন বিও বেড়েছে ১৫ হাজার। এর মধ্যে অক্টবারে পুঁজিবাজারে নতুন বিও অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে সাত হাজার ৩৩৩টি। নভেম্বরে এর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে আট হাজার।

যদিও এর আগে আগস্টে বিও সংখ্যা ছিল ২০ হাজার ৫০০। সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী এ তথ্য জানা গেছে। নভেম্বর শেষে মোট বিও হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখ ৭৭ হাজার ৭৪৬। দুই মাস আগে এ সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ ৬২ হাজার ৩১৩।

পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত বাজার পরিস্থিতি ভালো না থাকায় সাধারণ মানুষ এর প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন। কারণ বর্তমান সেকেন্ডারি মার্কেটের পাশাপাশি প্রাইমারি মার্কেটেরও পরিস্থিতি ভালো না। বাজার ভালো না থাকলে এমনিতেই বিও খোলার প্রবণতা কমে যায়।

যদিও বিদায়ী বছরে নির্বাচনের পরপরই ঘুরে দাঁড়ায় পুঁজিবাজার। এ সময়ে বিও অ্যাকাউন্ট খোলার হিড়িক পড়ে। পরে হঠাৎ করেই পুঁজিবাজারে ছন্দপতন দেখা দেয়। এ কারণে বাজারের প্রতি আগ্রহ কমে সাধারণ মানুষের। এ সময়ে এক মাসে নতুন বিও হিসাবের সংখ্যা পাঁচ হাজারের নিচে চলে আসে।

এ প্রসঙ্গে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, বছরের শুরু থেকেই পুঁজিবাজার খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই। যে কারণে বাজারের প্রতি সবারই একটা অনাগ্রহ তৈরি হয়, যার প্রভাব পড়েছে বিও অ্যাকাউন্ট খোলায়। বাজার ভালো হলে এখানে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ বাড়বে। তখন বিও অ্যাকাউন্টও বাড়বে।

সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) ডিপোজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা, ২০০৩-এর তফসিল-৪ অনুযায়ী, বিও হিসাব পরিচালনার জন্য ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারী বা বিনিয়োগকারীকে নির্ধারিত হারে বার্ষিক হিসাবরক্ষণ ফি দিয়ে হিসাব নবায়ন করতে হয়। এর আগে পঞ্জিকাবর্ষ হিসেবে প্রতি বছর ডিসেম্বরে এ ফি জমা নেওয়া হতো। তবে ২০১০ সালের জুনে বিএসইসি বিও হিসাব নবায়নের সময় পরিবর্তন করে বার্ষিক ফি প্রদানের সময় জুন মাস নির্ধারণ করে। এ সময়ে বিও নবায়ন ফি ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়। এরপর বিএসইসির জারি করা ২০১১ সালের ১৮ এপ্রিল এক সার্কুলারে ৩০ জুনের মধ্যে বিও হিসাব নবায়নের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। না হলে তা বাতিল করা হবে বলে ওই সার্কুলারে বলা হয়েছিল। বর্তমানে বিও নবায়ন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫০ টাকা।

মূলত ২০১০ সালের পর থেকে বিও অ্যাকাউন্ট উল্লেখযোগ্য হারে কমতে থাকে। বর্তমানে মোট বিও অ্যাকাউন্টের অর্ধেকের বেশি হচ্ছে শেয়ার শূন্য। সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী এ তথ্য জানা গেছে। বর্তমানে মোট বিওর মধ্যে শেয়ারশূন্য এবং ব্যবহার করা হচ্ছে না এমন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা সাড়ে ১৩ লাখের বেশি।

প্রসঙ্গত, গত চার বছরে সময়মতো বিও ফি পরিশোধ না করায় বাতিল হয়ে গেছে প্রায় ছয় লাখ অ্যাকাউন্ট। সেকেন্ডারি মার্কেটের মন্দা পরিস্থিতি, সেই সঙ্গে আইপিও বাজারের নাজুক পরিস্থিতির জন্য এসব অ্যাকাউন্ট ঝরে গেছে বলে মনে করেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।

নিয়মানুযায়ী, জুন মাসে বিও ফি পরিশোধ না করলে সেসব অ্যাকাউন্ট এমনিতেই বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু যেসব হিসাবে শেয়ার কিংবা টাকা থাকে, সেসব হিসাব বন্ধ হয় না।