নতুন ভবন বুঝে পেল এনবিআর

নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করা হবে রাজস্ব ভবন। উদ্বোধনের ছয় দিন আগে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নতুন এই ভবন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়েছে। রোববার (২৯ জানুয়ারি) সেগুনবাগিচায় এনবিআর সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নবনির্মিত রাজস্ব ভবনের হস্তান্তর করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। অনুষ্ঠানে এনবিআর সদস্য, রাজস্ব ভবনের প্রকল্প পরিচালক ও অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার, স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি মীর মঞ্জুরুর রহমানসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভাপতি প্রকল্পের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

এনবিআর সূত্রমতে, ৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী সশরীরে নতুন ভবন উদ্বোধন করবেন। এছাড়া ৪ ও ৫ ফেব্রুয়ারি দুই দিনব্যাপী রাজস্ব সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই রাজস্ব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ডিসি সম্মেলনের মতো প্রথমবার এনবিআর রাজস্ব সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছে। এতে আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তারা অংশ নেবেন। এতে মাঠ পর্যায়ে রাজস্ব আদায়ের প্রতিবন্ধকতা, রাজস্ব সম্ভাবনা তুলে ধরবেন কর্মকর্তারা। নতুন ভবনের উদ্বোধনকে ঘিরে নতুন ভবন সাজানো হচ্ছে। নতুন ভবনের উদ্বোধন আর রাজস্ব সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ব্যস্ত সময় পার করছেন এনবিআর কর্মকর্তারা।

প্রকল্প কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। আর ১২ তলা পর্যন্ত নির্মাণকাজও শেষ হয়। প্রকল্প কর্মকর্তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত হয় রাজস্ব যোগানদানকারী এনবিআরের নতুন এই ভবন। দেশের সরকারি ভবনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আধুনিক সুবিধা-সংবলিত ভবন হলো এনবিআর ভবন। কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ভবনটির সামনে রয়েছে সুপরিসর রাস্তা। রাস্তা পেরুলেই নজরে পড়বে দৃষ্টিনন্দন এনবিআর ভবন। নিরাপত্তা ফটক পেরুলেই চোখে পড়বে চলন্ত সিঁড়ি। ভবনে প্রবেশপথেই চোখে আটকাবে আগন্তুক আর সেবাপ্রার্থীদের। পাঁচতারকা হোটেলের মতো কারুকাজ করা এই ভবনে থাকবে নিরাপত্তার চাদরে ঘেরা। নতুন এই ১২ তলা ভবনে এনবিআর ছাড়াও এনবিআরের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান স্থান পাচ্ছে। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানান্তর হওয়া শুরু করেছে। জানুয়ারির মধ্যে এনবিআরসহ সব প্রতিষ্ঠান স্থানান্তর হয়ে যাবে।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০ তলার আধুনিক ও নান্দনিক অফিস হবে জাতীয় রাজস্ব ভবন-১। তবে এখন ১২ তলা পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে। ভবিষ্যতে ২০ তলা করা হবে। এটি হচ্ছে কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাসহ সর্বাধুনিক সুবিধা-সংবলিত পরিবেশবান্ধব ভবন। এই ভবনে যেসব সুবিধা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। এছাড়া আটটি লিফট রয়েছে, যার মধ্যে ছয়টি সাধারণ ও দুটি ফায়ার লিফট। রয়েছে ৫১০ আসনের মাল্টিপারপাস হল। রেভিনিউ আর্কাইভ, লাইব্রেরি, রেকর্ডরুম, সেন্ট্রাল ডেটা প্রসেসিং সেন্টার ও সার্ভার। থাকবে কম্পিউটার ল্যাব, ট্রেনিং সেন্টার, কর্মাশিয়াল ব্যাংক শাখা, এটিএম, পোস্ট অফিস, কুরিয়ার সার্ভিস, স্টেশনারি শপ, বার লাউঞ্জ, প্রতি তলায় গ্রিন স্পেস ও স্মোকিং জোন থাকবে। সুবিধার মধ্যে আরও রয়েছেÑসার্বক্ষণিক জেনারেটর সুবিধা, বিল্ডিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, অ্যাকসেস কন্ট্রোল সিকিউরিটি সিস্টেম, প্রতিবন্ধী ও জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের প্রবেশ, নির্গমন ও চলাচলের ব্যবস্থা, জরুরি অবস্থায় প্রাকৃতিক বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা, ক্যাফেটেরিয়া, কল সেন্টার, ডে-কেয়ার সেন্টার, মিডিয়া সেন্টার, পুরুষ ও নারীদের পৃথক প্রার্থনা কক্ষ এবং প্রতি ফ্লোরে পুরুষ ও  নারীদের পৃথক শৌচাগার।

প্রকল্প কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভবনের নিচতলা ও দ্বিতীয় তলায় থাকবে সেবাকেন্দ্র, ব্যাংক, পোস্ট অফিস, কুরিয়ার সার্ভিস, কল সেন্টার, বার লাউঞ্জ, ক্যাফেটেরিয়া, পুরুষ ও নারীদের পৃথক প্রার্থনা কক্ষ, রেকর্ডরুম ও স্টেশনারি শপ। দ্বিতীয় তলায় ওঠার জন্য থাকবে চলন্ত সিঁড়ি। তৃতীয় তলায় থাকবে মাল্টিপারপাস হল, এনবিআরের গবেষণা ও পরিসংখ্যান শাখা, ডে-কেয়ার সেন্টার, লাইব্রেরি ও রেভিনিউ আর্কাইভ। চতুর্থ তলায় অর্থমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর চেম্বার, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি), এনবিআরের ছয়জন সদস্যের দপ্তর থাকবে।

পঞ্চম তলায় থাকবে চেয়ারম্যান ও ১২ সদস্যের দপ্তর। ষষ্ঠ তলায় থাকবে বোর্ড প্রশাসন, সব প্রথম সচিব ও কিছুসংখ্যক দ্বিতীয় সচিবের দপ্তর। সপ্তম তলাজুড়ে থাকবে দ্বিতীয় সচিবদের দপ্তর। অষ্টম তলায় কর পরিদর্শন পরিদপ্তর ও এনবিআরের আইসিটি শাখা থাকবে। নবম তলায় বৃহৎ করদাতা ইউনিট (আয়কর ও ভ্যাট) থাকবে। দশম তলায় আয়কর আপিলাত ট্রাইব্যুনাল, ১১তম তলায় ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনাল ও কেন্দ্রীয় জরিপ অঞ্চল থাকবে। ১২তম তলায় আয়কর ও ভ্যাট আপিল দপ্তরগুলো থাকবে। দুটি বেইজমেন্টে ২৪৬টি কার ও ১৭২টি মোটরসাইকেল পার্কিং সুবিধা থাকবে। ভবনের মোট আয়তন ছয় লাখ ৮২ হাজার ৮৯৭ বর্গফুট। প্রতিটি ফ্লোরের উচ্চতা ১৩ ফুট। বেজমেন্ট এর আয়তন ৬৬ হাজার বর্গফুট। নিচতলা থেকে চতুর্থ তলা পর্যন্ত প্রতিটি ফ্লোরের আয়তন ৪৪ হাজার বর্গফুট করে। পঞ্চম থেকে বাকি সব তলার আয়তন ৪৬ হাজার বর্গফুট করে। ৬৬ হাজার বর্গফুটের দুটি বেজমেন্টে ১২৩টি গাড়ি ও ১২৫টি মোটরসাইকেলের পার্কিং ব্যবস্থা রয়েছে।