নতুন শিক্ষাক্রমের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হবে ২০২৫ সালে: শিক্ষামন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০২৫ সালে নতুন শিক্ষাক্রম পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। ২০২৩ সাল থেকে এটি ধাপে ধাপে চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। থাকছে না নবমশ্রেণি ও দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক গ্রুপ। অর্থাৎ নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সবাই হবে একক বিভাগের।

গতকাল রাজধানীর কাকরাইলে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ কথা বলেন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের জন্য ২০২২ সাল থেকে প্রাথমিকে ১০০টি ও মাধ্যমিকে ১০০টি প্রতিষ্ঠানে পাইলটিং শুরু হচ্ছে। এজন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলছে ও টিচার্স গাইড তৈরি হচ্ছে।

মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা কার্যক্রম বিষয়ে তিনি বলেন, প্রাথমিকের ১০০, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে ১০০টি করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ২০২৩ সালে পাইলটিংয়ের আওতায় আনা হচ্ছে। মাধ্যমিকের সঙ্গে মাদরাসা ও কারিগরি মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের শিখনকালীন মূল্যায়ন ৬০ শতাংশ ও বছর শেষে সামষ্টিক মূল্যায়ন ৪০ শতাংশ।

তিনি আরও বলেন, সারাদেশে ২০২৩ সাল থেকে নতুন শিক্ষাক্রম কার্যক্রম শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করব। ২০২৫ সাল থেকে সারাদেশে এটি পূর্ণাঙ্গভাবে বস্তবায়নে হবে।

প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষাব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কার আসছে। এর আলোকে নবম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক কোনো গ্রুপ থাকছে না। এ ছাড়া পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা থাকবে না।

এর আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা উপস্থাপন বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী জানান, ভবিষ্যতে নতুন করে পরিমার্জিত শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। শিক্ষাব্যবস্থাকে আনন্দদায়ক করতে সনাতন শিক্ষা ব্যবস্থায় আনা হচ্ছে পরিবর্তন।

নতুন প্রণীত জাতীয় শিক্ষাক্রমের রূপরেখা তৈরিতে এনসিটিবির পাশাপাশি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করছে।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নবম-দশম শ্রেণিতে যে বিভাজনটি থাকে বিভিন্ন গ্রুপে মানবিক, বিজ্ঞান বা ব্যবসা সেটি আর থাকবে না। এ দুই ক্লাসে বাধ্যতামূলকভাবে কারিগরির একটি ট্রেড তারা শিখবে এবং দক্ষতা তারা অর্জন করবে।

তিনি জানান, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যসূচির পর প্রতিবছর একটি করে পরীক্ষা হবে। এই দুই শ্রেণির পলের সমন্বয়ে চূড়ান্ত ফল দেয়া হবে। অর্থাৎ একাদশের পরে একটি পরীক্ষা হবে আর দ্বাদশের পরে আরেকটি পরীক্ষা হবে। দুটির ফল মিলিয়ে এইচএসসির ফল হবে।

মন্ত্রী বলেন, ক্লাস নাইন ও টেনে আলাদা বই হবে। থাকছে না আলাদা আলাদা বিভাগ। যে ১০টি সাবজেক্ট আছে সবাই সেগুলো পড়বে।

দীপু মনি বলেন, ‘আমরা ৫ম বা ৮ম শ্রেণিতে পাবলিক পরীক্ষার কথা বলিনি। তবে সেগুলোতে ক্লাস সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সেই মূল্যায়ন হবে। আমরা বিভিন্ন স্তরে মূল্যায়নের ভিত্তিতে যেখানে যেখানে সনদ দেয়া প্রয়োজন দেব। প্রত্যেক ক্লাসেই সমাপনী থাকবে। শুধু ক্লাস থ্রি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা নেই। এ ছাড়া, সব ক্লাসেই সমাপনী পরীক্ষা হবে। এর মধ্যে কিছুটা ধারাবাহিক মূল্যায়ন কিছুটা সামষ্টিক মূল্যায়ন।

তিনি বলেন, ‘ছয় মাস পাইলটিংয়ের পরে বিশ্লেষণ করে ২০২৩ সাল থেকে আশা করছি নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করতে পারব। সেক্ষেত্রে ২০২৩ সালে প্রাথমিকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে এটি চালু হবে আর মাধ্যমিকে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণিতে চালু হবে। আর পাইলটিং যেটি আগামী বছর করব সেটি হবে প্রাথমিকে ১ম শ্রেণি ও মাধ্যমিকে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে।’

শিক্ষামন্ত্রী জানান, ২০২৪ সালে ৪র্থ-৫ম শ্রেণি আর ৮ম-৯ম শ্রেণি হবে। ২০২৫ সালে এদিকে ৫ম ও ওদিকে ১০ম শ্রেণি অর্থাৎ ইম্প্রিমেন্টেশনটা হয়ে যাবে। এটি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সব করা হচ্ছে।