নদী ও পরিবেশ রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নিন

দেশের অনেক শিল্পকারখানায় ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) নেই কিংবা অকেজো। গতকাল শেয়ার বিজে ‘নরসিংদীতে নদীদূষণে এগিয়ে প্রাণ’ শীর্ষক প্রতিবেদন পড়ে জানা গেল, জেলায় অপরিকল্পিতভাবে শিল্পকারখানা গড়ে ওঠায় পরিবেশ দূষণ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। শিল্পকারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে শীতলক্ষ্যা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি দূষিত হয়ে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এ জেলায় ১০ হাজার ৫০০টি ছোট-বড় বিভিন্ন শিল্পকারখানা রয়েছে। সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত শিল্পকারখানার বর্জ্য নিষ্কাশন পদ্ধতির ব্যাখ্যা সরকারি কাগজপত্রে উল্লেখ থাকলেও তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। অনেক কারখানাই ইটিপি বন্ধ রেখেছে। ফলে ক্ষতিকর রাসায়নিকযুক্ত বর্জ্য নদীতে মিশে পানি দূষিত হচ্ছে, মরছে মাছসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী।

শিল্পকারখানার বর্জ্য ফেলে নদী ও পরিবেশ ধ্বংস করে উৎপাদন নয় বলে রাষ্ট্রের কড়া নির্দেশনা রয়েছে। আমাদের মনে আছে, রাজধানীবাসীর জন্য বাস-উপযোগী পরিবেশ এবং বুড়িগঙ্গাকে রক্ষায় হাজারীবাগের চামড়াশিল্প সাভারে স্থানান্তর করা হয়। চামড়াশিল্প মালিকরা একই কাজ করছেন সাভারে! বর্জ্য থেকে নদীদূষণের ভয়াবহ চিত্র দেখে গভীর হতাশা ব্যক্ত করেছিলেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান।
একটার পর একটা এলাকা নদীদূষণে অভিশপ্ত জনপদে পরিণত হবে, এটি রীতিমতো হতাশার ও বিপদের। শিল্পোদ্যোক্তারা দেশের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানে বড় অবদান রাখছেন; কিন্তু তাদের কারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সামগ্রিক কার্যক্রম আমাদের হতাশ করে। দুঃখজনক হলো এক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে প্রাণ। অন্যরা তো ছোট, তাদের অনেকের তো ইটিপি স্থাপনের সামর্থ্যই নেই! নরসিংদিতে একটি নদীর পানিসহ পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। নিশ্চয়ই এটির সঙ্গে বেশ কয়েকটি নদীর সংযোগ রয়েছে। এ কারণে ওই সব নদীও মারাত্মক দূষণের শিকার হচ্ছে বলা যায়।

আমরা মনে করি, শিল্প বা উন্নয়নের জন্য নদী ও পরিবেশের ক্ষতি করা যাবে না। প্রশ্ন হলো, কাজটি করবে কে? সরকারের উচিত কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার তৈরিতে শিল্পোদ্যোক্তাদের বাধ্য করা। তারা সিন্ডিকেট করে নানা ছাড়, সুবিধা ও প্রণোদনা নেবেন, আবার পরিবশও দূষিত করবেন! এই খামখেয়ালিপনা রুখতে হবে। শিল্পকারখানার নির্গত তরল বর্জ্য থেকে নদী ও পরিবেশ রক্ষায় মাঝেমধ্যে সংশ্লিষ্ট শিল্পকারখানার বিরুদ্ধে মামলা ও জরিমানা করলেই কি দায়িত্ব পালন হয়ে যায়! বুড়িগঙ্গা রক্ষার কথা বলে ধলেশ্বরীর পাড়ে চামড়াশিল্প স্থানান্তর করা হয়েছিল। তারপর দেখা গেল ধলেশ্বরী ও বুড়িগঙ্গা দুটিই দূষিত হচ্ছে। প্রতিটি শিল্পাঞ্চলে পর্যাপ্ত ধারণক্ষমতার ইটিপি স্থাপন করতে হবে, যাতে তাদের তৈরি পুরো বর্জ্যই শোধন করা সম্ভব হয়, যাতে নদী দূষিত না হয়। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন তথা রপ্তানি পণ্যের উৎপাদন বাড়াতে শিল্পকারখানার প্রয়োজন আছে, তা অনস্বীকার্য। কিন্তু তা করতে হবে আইন মেনে, নদী ও পরিবেশকে ধ্বংস করে নয়। সরকারকে অবশ্যই কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।