নদী রক্ষায় হাইকোর্টের রায় কার্যকর করুন

আবহমান কাল ধরে এ দেশ নদীমাতৃক হিসেবে পরিচিত। দেশের মানুষের জীবিকানির্বাহ, ব্যবসা, পরিবহন, খাদ্যের সংস্থানসহ নানা কারণেই তা ছিল বাস্তব, কিন্তু ক্রমেই নদীর অবদান কমছে। জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতি তো হচ্ছেই, আমাদের নানা ধরনের কর্মকাণ্ডও নদী ধ্বংসে ভূমিকা রাখছে। এক্ষেত্রে প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের দখলদারিত্বের ভূমিকাই বেশি। এ বিষয়ে তেমন কোনো ব্যবস্থা এতদিন নেওয়া না গেলেও আশার কথা হলো এবার এগিয়ে এসেছেন হাইকোর্ট। নদী রক্ষার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি দখলদারদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা গেলে নদী রক্ষার পথ তৈরি হবে বলে আমরা মনে করি।
দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘নদী দখলকারীরা ঋণ পাবে না, নির্বাচনের অযোগ্য: হাইকোর্ট’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দেশের সব নদনদী, খালবিল ও জলাশয় রক্ষায় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে ‘আইনগত অভিভাবক’ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। এছাড়া দখলকারীদের নির্বাচন করা ও ঋণ পাওয়ার অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। আইন সংশোধন করে তাদের বিরুদ্ধে ‘কঠিন শাস্তির’ ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে সরকারকে। এর মাধ্যমে নদী রক্ষায় কার্যকর অগ্রগতি হবে বলে প্রত্যাশা। তবে এর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না করা গেলে তা নদী রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারবে না বলে অভিমত অনেকের।
হাইকোর্টের এ ঐতিহাসিক রায়ে একটি বিষয় স্পষ্ট, নদী নিয়ে সচেতন নাগরিক থেকে হাইকোর্টÑসব পক্ষই উদ্বিগ্ন। নদীগুলো রক্ষা করা না গেলে ভবিষ্যৎ প্রজ জন্য তা ভালো ফল বয়ে নিয়ে আসবে না। ব্যবসা-বাণিজ্য, মৎস্য খাত ও প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে শুরু করে অনেক কিছুতেই সমস্যা দেখা দেবে বৈকি। সার্বিক বিবেচনায় এর আগে কিন্তু তুরাগ নদকে ‘লিগ্যাল পারসন’ বা ‘জুরিসটিক পারসন’ ঘোষণা করা হয়েছিল, যা দেশের সব নদনদীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
অতীতে দেখা গেছে, প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা নানা অপরাধে জড়ালেও তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। দেশের ভবিষ্যৎ ও প্রাকৃতিক পরিবেশের কথা বিবেচনা করে এবার হাইকোর্টের রায় অবহেলার সুযোগ নেই। নদী ধ্বংসে যারাই জড়িত থাকুন না কেন সবার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নদীদূষণ রোধ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার উদ্যোগ নেওয়াও জরুরি। পাশাপাশি জলাশয় দখলকারী ও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীদের তালিকা প্রকাশ, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ডিজিটাল ডেটাবেজ তৈরি এবং সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রত্যাশা। এক্ষেত্রে নদী রক্ষা কমিশনের দক্ষতা ও কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।