সময়ের চাকা ঘুরে বাংলা বর্ষপঞ্জিতে আজ সোমবার শুরু হলো ১৪৩২ বঙ্গাব্দের দিন গণনা। বাঙালির জীবনে বৈশাখ মাসের এই প্রথম দিনটি কেবল বর্ষ শুরুর সূচনা দিনেই সীমিত নয়। নতুন বছরের নতুন দিনটি উদ্যাপিত হয় সবচেয়ে বড় উৎসবের উপলক্ষ হিসেবে। ঋতুভিত্তিক এ অসাম্প্রদায়িক উৎসবে অংশ নেন দেশের ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, ধনী, নির্ধন-নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। এবারের নববর্ষের আয়োজন কিছুটা হলেও বিবর্ণ থাকবে।
কেননা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্ম ইসলাম। ফিলিস্তিনের গাজায় যে অমানবিক ঘটনা ঘটছে মুসলিম সম্প্রদায় আরেক ভাইয়ের চরম বিপর্যয়ের দিনে স্বতঃস্ফূর্ত উদযাপনের নামে হƒদয়ের রক্তক্ষরণ আড়াল করতে পারে না। অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফার বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। বুধবার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় চৈত্রসংক্রান্তি ও নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, এবারের বাংলা নববর্ষে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের জন্য শান্তি কামনা করে উৎসব উদযাপন হবে। বিশ্বের একটা দেশ ফিলিস্তিন। সেখানে যেভাবে গণহত্যা চলছে, এই পরিস্থিতিতে শুধু দেশের জন্য শুভকামনা করে নববর্ষ উদযাপন করতে পারি না। তাই আমরা সারাবিশ্বের শান্তি কামনা করে এবারের নববর্ষ বা বৈশাখের অনুষ্ঠান উদযাপন করব। চিরায়ত বাংলা সংস্কৃতির পাশাপাশি শোভাযাত্রায় ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’ এ গান গেয়ে শোভাযাত্রা শুরু হবে। সহ-আয়োজক প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তাব্যক্তিরাও বলেছেন, চৈত্রসংক্রান্তি ও নববর্ষকে কেন্দ্র করে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা নিঃসন্দেহে আশাবহ। এ বছর চৈত্রসংক্রান্তি ও নববর্ষের শোভাযাত্রা আরও বড় পরিসরে ও বৈচিত্র্যপূর্ণ করার লক্ষ্যে কিছু আকর্ষণীয় ও ভিন্ন আয়োজন রয়েছে; যার অন্যতম তারুণ্যনির্ভর ব্যান্ড সংগীতের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি আর সময়োপযোগী ও ভিন্ন কিছু বার্তা নিয়ে শোভাযাত্রায় শতাধিক শিল্পী হাজির হবে।
দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাংলাভাষী মানুষও সেসব দেশে পহেলা বৈশাখে নববর্ষ উদ্যাপনের উৎসব আয়োজন করবেন। নতুন বছরে, নতুন দিনের এই উদ্যাপনে পুরোনো বছরের ব্যর্থতার গ্লানি, অক্ষমতার আক্ষেপ কাটিয়ে নতুন উদ্যমে দেশ, জাতি, সমাজ ও ব্যক্তিজীবনের সমৃদ্ধি অর্জনের প্রেরণাও থাকবে। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বরাবরের মতোই রাষ্ট্রপ্রধান এবং সরকার পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা দেশবাসীকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেছেন।
আগে বাংলা নতুন বছর উপলক্ষে সরকারপ্রধানের দেয়া বাণীতে এমন কিছু শব্দ ব্যবহƒত হতো, যা দেশের ধর্ম ও ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। এবার পরিবর্তিত পরিবেশে সে ধরনের প্রবণতা নেই। অবশ্যই আমরা অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ হবো তা হবে অন্যায়, অসুন্দর, অবক্ষয়, দুর্নীতি ও নীতিহীনতার বিরুদ্ধে। বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনের সূচনা হয় মূলত মোগল সম্রাট আকবরের সময় থেকে। কৃষিকাজের সুবিধার্থে সম্রাট আকবর ফসলি সন হিসেবে বাংলা সন গণনার যে সূচনা করেন, তা কালের পরিক্রমায় সমগ্র বাঙালির কাছে দলমত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ঐতিহ্য রক্ষার স্মারক উৎসবে পরিণত হয়েছে।
ব্যক্তিগত পছন্দের কোনো পরিচয়ে সর্বজনীন উৎসবকে বিভাজন করা আমাদের চিরায়ত সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির পরিপন্থি। আমরা বিশ্বাস করি চিরকালই বিশ্বে নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্যে সংস্কৃতিকে ধারণ করবে।
