নবম ওয়েজ বোর্ড সংশোধনের দাবি সাংবাদিকদের

নিজস্ব প্রতিবেদকL সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার কর্মীদের জন্য নবম ওয়েজ বোর্ড রোয়েদাদ ঘোষণা করা হলেও তা সাংবাদিক ও কর্মচারীদের স্বার্থের অনুকূলে নয় বলে ক্ষোভ জানিয়ে অবিলম্বে তা সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিকরা। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে সাংবাদিক স্বার্থ সুরক্ষা পরিষদ আয়োজিত ‘গণমাধ্যমের বিদ্যমান সংকট: সাংবাদিকদের স্বার্থ সুরক্ষা’ বিষয়ক গোলটেবিল আলোচনায় আলোচকরা সরকারের কাছে এ দাবি জানান। আলোচকরা আরও বলেন, নতুন ওয়েজ বোর্ড রোয়েদাদে সংবাদমাধ্যম মালিকদের স্বার্থ সংরক্ষণের পাশাপাশি তাদের চাকরিচ্যুতির প্রতি উসকানি দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস আফ্রাদের সভাপতিত্বে এই গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মিজান উল আলম, বিএফইউজে মহাসচিব শাবান মাহমুদ, বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি ওমর ফারুক, বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব আবদুল জলিল ভুঁইয়া, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক স্বপন সাহা, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী প্রমুখ।
আলোচনায় বিএফইউজের সাবেক সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ‘সাংবাদিকেরা কী চাইছেন, তা ইউনিয়নের নেতাদের উপলব্ধি করতে হবে। সাধারণ সদস্যদের প্রত্যাশা সংরক্ষণ না করা গেলে জবাবদিহি করতে হবে। ইউনিয়ন এসব আলোচনা সভার আয়োজন না করলেও উদ্যোগ কিন্তু বসে নেই। অনেক ক্ষোভের কথা এসেছে আলোচনায়।’ তিনি মনে করেন, ওয়েজ বোর্ডের বিদ্যমান অসংগতি দূর করতে সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত গণমাধ্যমকর্মী আইনে ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে এবং সাংবাদিকদের স্বার্থ সংরক্ষণেও একটি আইনি কাঠামো হবে। সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। সত্যিকার সাংবাদিকরা যেন সাহায্য পান, তা নিশ্চিত করতে হবে। সামনের দিনগুলোতে অনেক আন্দোলন-সংগ্রামের প্রয়োজন আছে এবং সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
সাংবাদিকদের ও কর্মীদের বাদ দিয়ে সংবাদপত্র বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বিকাশ সম্ভব নয়। অধিকার নিশ্চিত করতে না পারলে অসন্তোষ সৃষ্টি হবে এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় অসন্তোষের ছাপ পড়বে। এ শিল্পে মালিকরা যেন বেতনভাতা দিতে পারেন, সরকারকেও সেরকম সরকারি প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। টেলিভিশন ও সংবাদপত্রের অনেক লাইসেন্স দেওয়া যেমন আনন্দের বিষয়, তেমনি বেতন-ভাতা নিয়ে সংবাদকর্মীদের মধ্যে যদি হতাশার সৃষ্টি হয়, তাহলে শিল্পে অস্থিরতা বিরাজ করবে।’
সাংবাদিক নেতা আবদুল জলিল ভূইয়া বলেন, ‘বর্তমানে যে সংকট, এ ধরনের সংকট আর দেখিনি। সাংবাদিকতায় যে ধার ছিল, সে-ই ধার আর নেই। নতজানু সাংবাদিকতা হচ্ছে। সব টেলিভিশনসহ গণমাধ্যমগুলোর এই অবস্থা।’
জলিল ভূইয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নিজেকে সাংবাদিক দাবি করার পরে নতুন ওয়েজবোর্ড দিয়ে সাংবাদিকদের যে অধিকার হরণ করলেন, এ বিষয়ে ইউনিয়নের প্রতিবাদ করা উচিত ছিল।’
বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি ওমর ফারুক বলেন, ‘নতুন মজুরি কাঠামোর সুপারিশে গ্র্যাচুইটি দুটির পরিবর্তে একটি করার মাধ্যমে চাকরিচ্যুতি আরও সহজ করা হয়েছে।’ তিনি সাংবাদিকদের ওয়েজবোর্ড ঘোষিত রোয়েদাদ পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের এবং আয়কর প্রদানের অনুচ্ছেদ বাতিলের দাবি জানান।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব শাবান মাহমুদ বলেন, ‘এ আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন আছে। নোয়াবরা সাংবাদিকদের স্বার্থ ধ্বংস করতে যে অবস্থান নিয়েছেন, তার জোরালো প্রতিবাদ করতে হবে।’
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘গণমাধ্যমের বিদ্যমান সংকটে পুরো সাংবাদিক কমিউনিটি জড়িত। নবম ওয়েজবোর্ড ঘোষিত রোয়েদাদ সাংঘাতিক রকমের বাজে হয়েছে, সাংবাদিকতা সংকুচিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে রাষ্ট্র।’