নিজস্ব প্রতিবেদক: বর্তমান বৈশ্বিক যুদ্ধ পরিস্থিতি জ্বালানি সংকটকে আরও ত্বরান্বিত করছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকলে বিশ্ববাসীকে এ সংকট দেখতে হতো না। সামগ্রিক বিবেচনায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিষয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। সচেতনতা বৃদ্ধি ও আইনি বাধ্যবাধকতা আরোপের মাধ্যমে সবুজ জ্বালানিতে প্রবেশ করা জরুরি বলে মনে করেন বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার। গতকাল শুক্রবার ‘ডায়ালগ উইথ মিডিয়া রোড টু কপ ২৭: দ্য ইমপোর্টেন্স অব ট্রানজিশন টু ক্লিন এনার্জি’ শীর্ষক এক কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস), পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ কর্মশালাটির আয়োজন করে। ‘পরিবেশ উদ্যোগ’ ও ‘সেভ আওয়ার সি’র সার্বিক সহযোগিতায় স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির কনফারেন্স রুমে কর্মশালায় বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকরা অংশ নেন।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন পিআইবির মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ। সভাপতিত্ব করেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকী। মূল আলোচক ছিলেন বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।
ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, ‘বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি রয়েছে ৩ দশমিক ৭১ শতাংশ। বর্তমান বৈশ্বিক যে যুদ্ধ পরিস্থিতি, তা জ্বালানি সংকটকে আরও ত্বরান্বিত করছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকলে বিশ্ববাসীকে এই সংকট দেখতে হতো না। বর্তমানে বাংলাদেশের ১৩ স্থানে বায়ুবিদ্যুতের প্রকল্প চলমান রয়েছে। পাশাপাশি সৌরশক্তিসহ বায়োগ্যাসের মাধ্যম নবায়নযোগ্য জ্বালানি সক্ষমতা বৃদ্ধি করা সম্ভব, যার মাধ্যমে ২০৩০ ও ২০৪১ সালে জ্বালানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব।’ ‘কপ ২৭’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এবার ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিয়ে জোরালো আলোচনা হবে।’ এ বিষয়ে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
পিআইবির মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ বলেন, ‘পরিবেশ নিয়ে কর্মশালার উদ্যোগ নিয়েও করতে পারিনি। আপনাদের সহযোগিতা থাকলে নিয়মিত এ ধরনের প্রশিক্ষণের আয়োজন করবে পিআইবি। এরই মধ্যে আমরা উপকূলীয় ও হাওর সাংবাদিকতা নিয়ে কর্মশালা সম্পন্ন করেছি। নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে অনেক বেশি কাজের সুযোগ রয়েছে।’
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ-এর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকী বলেন, ‘পরিবেশবিষয়ক গবেষণার টার্মগুলো সবার বোধগম্য নয়। এগুলো সাংবাদিকরাই সবার জন্য বোধগম্য করে তুলতে পারে, যা উন্নয়নে সহায়ক হবে।’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মারুফা গুলাশান আরা বলেন, ‘ক্যাপস’-এর এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এ ধরনের কর্মশালাগুলা সাংবাদিকদের কাজের জন্য সহায়ক। কপ-২৭-এর মতো পরিবেশগত সমসাময়িক বিষয়গুলো নিয়ে দেশের প্রতিটি সেক্টরে কাজ করা উচিত।’
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, মার্সেড, যুক্তরাষ্ট্রের পিএইচডি গবেষক ও স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. হুমায়ন কবির বলেন, ‘বর্তমান পৃথিবীর ৭০ ভাগ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হয় জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে। তাই জলবায়ু পরিবর্তন হ্রাস বা প্রশমিত করার জন্য প্রথম পদক্ষেপ হওয়া দরকার জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তর।’ তিনি আরও বলেন, ‘কপ-২৭ পৃথিবীব্যাপী জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে টেকসই নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’