নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে গুরুত্ব দিন

‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক মাস্টারপ্ল্যান: ক্যাপাসিটি চার্জ না থাকলেও আগ্রহ কম নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিদ্যুতে’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজ কড়চায়, সেটি পাঠকদের মনোযোগ কাড়বে বলেই ধারণা। ২০১৬ সালের মহাপরিকল্পনায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে খুবই কম গুরুত্ব দেয়া হয়। এরপরও ২০২১ সালের মধ্যে এ খাত থেকে দুই হাজার ৪৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। তবে ২০২৩ সালে এসেও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎস থেকে বিদ্যুৎ আসছে মাত্র ২৫৯ মেগাওয়াট। অথচ নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কোনো ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয় না।

মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনায় ২০৫০ সাল নাগাদ উৎপাদিত বিদ্যুতের শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে আসবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। অথচ সেটিতে নীতিনির্ধারকদের আগ্রহ কম। জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে খোদ প্রধানমন্ত্রী যেখানে ২০৪১ সাল নাগাদ ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছেন, সেখানে  চলতি বছরে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে আসছে ২৫৯ মেগাওয়াট!

নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা কম নয়। সেই ১৯৫৭ সালে চট্টগ্রামের কাপ্তাইয়ে কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দিয়ে দেশের প্রথম জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করা হয়। আশির দশকের মাঝামাঝি সিলেটে প্রথম সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনে বেসরকারি উদ্যোগ সহায়ক ভূমিকা রাখে। পরবর্তী সময়ে সরকারি উদ্যোগে গঠিত হয় ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল)। সংস্থাটির সোলার হোম সিস্টেম (এসএইচএস) কর্মসূচি গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৯৬ সালে এসএইচএস চালুর পর থেকে এটি বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নবায়নযোগ্য জ্বালানি কর্মসূচি।

গ্যাসসহ জীবাশ্ম জ্বালানির মজুত দ্রুত ফুরিয়ে আসছে আমাদের। তুলনামূলকভাবে কম বিনিয়োগে বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী এ নবায়নযোগ্য জ্বালানি হলো সর্বোত্তম বিকল্প। সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে বিশাল এলাকা অধিগ্রহণের প্রয়োজন নেই। পতিত অকৃষি জমি, বেদখল হওয়া নদীর পাড় এবং ঘরের চাল বা ছাদে সোলার প্যানেল আর বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ উপকূলবর্তী ও অগভীর সমুদ্র এলাকা বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য খুবই উপযোগী। উল্লেখ্য, সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ দিয়েই একসময় জার্মানি ইউরোপে শীর্ষ বিদ্যুৎ রপ্তানিকারক দেশ ছিল। ভারতের অন্য ব্যস্ত কোচিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পুরোটাই চলছে সৌরবিদ্যুতে। সৌরবিদ্যুৎ শুধু গৃহস্থালির মতো ছোট কাজে ব্যবহারোপযোগী, তা নয়, সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ এখন জাতীয় সঞ্চালন লাইনে যোগ হয়। সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে প্রয়োজন সর্বব্যাপী উদ্যোগ আর রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ। কেবল মুনাফা নয়Ñভাবতে হবে, সস্তা বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুফল যেন ভোক্তাসাধারণের জন্য সহজলভ্য হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক, ইডকল ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থায়নে গতি বাড়ানো হয়েছে। নবায়নযোগ্য কিছু জ্বালানি পণ্যে শুল্কছাড়ও দেয়া হয়েছে। কেবল ফার্নেস অয়েল বা ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নয়, উদ্যোক্তাদের সোলার পার্ক স্থাপনে উৎসাহিত করতে হবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি চাহিদা মেটাতে উন্নত দেশগুলোর নবায়নযোগ্য শক্তির ওপর নির্ভরতাও পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিবিধ কারণে আমাদের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হচ্ছে। নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রে নির্ভরতা বাড়িয়ে সে ক্ষতি কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে।