প্রীতিরঞ্জন সাহা, নরসিংদী: আর মাত্র দুই দিন পর ঈদ। নরসিংদীতে জমে উঠেছে ঈদের বাজার। পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে শহরের শপিং মলগুলোতে প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করেও মানুষের উপচেপড়া ভিড় পরিলক্ষিত হচ্ছে। এদিকে বঙ্গবাজার ও নিউমার্কেটে আগুনের প্রভাবও নরসিংদীর কাপড়ের বাজারগুলোতে পড়েছে। ক্রেতাদের অভিযোগ বঙ্গবাজার ও নিউমার্কেটে আগুনের অজুহাত দেখিয়ে ঈদ বাজারে বাড়তি দাম রাখছে ব্যবসায়ীরা।
জেলা সদরসহ ছয় উপজেলার বিভিন্ন মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। ঈদের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, মার্কেটগুলোতে লোকজনেরও কেনাকাটা ব্যাপকভাবে বেড়ে চলেছে। শুধু ইফতারের সময় ছাড়া প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। রোজার শুরু থেকেই বাতিল করা হয়েছে নরসিংদী শহরের মার্কেটের সাপ্তাহিক ছুটি।
নরসিংদী শহরের অন্যতম বিপণিবিতান ইনডেক্স প্লাজা, জামান প্লাজা, সুলতান উদ্দিন শপিং কমপ্লেক্স, কাজী মার্কেট, মুন্সী নিয়াজ মার্কেট, শশী প্লাজা, ইসলাম প্লাজা, ভারগো ফ্যাশন, নয়ন তারা প্লাজা, হাজেরা টাওয়ার, ইজিফ্যাশন, বর-কনে ফ্যাশন, বন্ড, গ্রামীণ, দরজিবাড়ী, গঙ্গা ফ্যাশন, টাইলাস, কালিবাড়ী মার্কেটসহ ছোট বড় সব বিপণিবিতান ও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শোরুমে প্রতিদিনই পছন্দের কাপড় ও জুতা কিনতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে শহরের যানজটও।
নরসিংদী শহরের বিভিন্ন বিপণিবিতান ও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শোরুম ঘুরে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবারের মতো এবারও ঈদ বাজারে এসেছে বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় সব পোশাক। তবে এবার ভারতীয় ‘টিভি সিরিয়ালের’ নামে পোশাকের ছড়াছড়ি খুব একটা নেই। তবে এবার বাজারে দেশীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আধুনিক ডিজাইনের সব ধরনের পোশাক রয়েছে। এসব ব্র্যান্ডের বেশিরভাগেরই শোরুম রয়েছে নরসিংদী শহরে।
এছাড়া পাঞ্জাবি, শার্ট, গেঞ্জি, ফতোয়া, থ্রি-পিস, টুপিস ও শিশুদের জন্য সব ধরনের কাপড় পাওয়া যাচ্ছে শহরের দোকানগুলোতে। শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় মার্কেটে চাকরিজীবীদের উপস্থিতিই বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে জানান বিক্রেতারা। তবে ক্রেতাদের বেশিরভাগই নারী।
ক্রেতাদের অভিযোগ, ঈদের কেনাকাটা করতে এসে প্রায় সব ধরনের কাপড় কিনতেই তাদের বাড়তি দাম গুনতে হচ্ছে। একেকটি থ্রি-পিসের মূল্য আগের চেয়ে প্রায় ১শ টাকা থেকে ৫শ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে যেই থ্রি-পিস ১৫শ টাকা দিয়ে কেনা যেত সেই থ্রি-পিস এখন কিনতে গুনতে হচ্ছে প্রায় ২ হাজার টাকা। শাড়িতেও বেড়েছে ৫শ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। এমন করে সব ধরনের কাপড়েরই দাম বেড়েছে।
এছাড়া বাজারগুলোতে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের জুতার দোকান এবং কসমেটিক্স এর দোকানে নারী-পুরুষ-শিশুদের উপচেপড়া ভিড় পরিলক্ষিত হচ্ছে।
দাম বাড়তি রাখার বিষয়ের কারণ জানতে চাইলে দোকানিরা জানান, বঙ্গবাজার ও নিউমার্কেট পুড়ে যাওয়ায় এর প্রভাব নরসিংদীর ব্যবসায়ীদের ওপরও পড়েছে। শহরের মার্কেটের অনেকেই বঙ্গবাজার ও নিউমার্কেট থেকেই কাপড় সংগ্রহ করতেন। পাইকরি পোশাকের বৃহৎ উৎস বঙ্গবাজার ও নিউমার্কেটটি আগুনে পুড়ে যাওয়ায় এখন কিছুটা মালের সংকট হয়েছে। নরসিংদী শহরসহ জেলার বিভিন্ন হাটবাজারগুলোতে যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এদিকে শহরে ঈদের বেচাকেনাকে ঘিরে জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক বলে জানিয়েছেন ক্রেতা বিক্রেতারা। শহরের মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে টহল পুলিশ। এছাড়া শহরে যানজট নিরসনেও কাজ করছে জেলা পুলিশ।
