ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে ট্রলারডুবি

নরসিংদীর বেলাব উপজেলার ৯ যুবক নিখোঁজ

প্রতিনিধি, নরসিংদী : আবারও দালালের মাধ্যমে অবৈধভাবে লিবিয়া হয়ে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার সময় নিখোঁজ হয়েছেন নরসিংদীর বেলাব উপজেলার নয় যুবক। এই খবরে পরিবারগুলোয় চলছে শোকের মাতম। শনিবার সকালে নিখোঁজ হওয়া ৯ যুবকের স্বজনেরা সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। নিখোঁজরা হলেন, উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের কাঙ্গালিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে মোখলেছুর রহমান (২০), একই এলাকার মৃত হাছেন আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেন ওরফে কামাল হেসেন (৩৪), ভাটের চর গ্রামের হাসান উদ্দিনের ছেলে মাসুদ রানা (২২), দুলালকান্দি গ্রামের হারুন রশিদের ছেলে মনির হোসেন (২২), ওই এলাকার আ. মোতালিব মিয়ার ছেলে রবিউল (৩৩) ও রায়হান (২২), টান লক্ষ্মীপুর গ্রামের মহরম আলীর ছেলে স্বাধীন মিয়া (২০), নিলক্ষা গ্রামের আমান মিয়া (২১) ও দেওয়ানেরচর গ্রামের আলমাছ আলীর ছেলে ইমন (২০)।

নিখোঁজদের স্বজনদের দাবি, ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা খরচ করে দালালের স্থানীয় দুই সহযোগী দালাল দুলালকান্দি গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে জাকির হোসেন এবং তার ফুফু একই এলাকার নুর কাসেমের স্ত্রী শাহিনুরের মাধ্যমে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে তারা দেশ ছাড়েন।

নিখোঁজ কামাল হোসেনের ছোট ভাই জামাল মিয়া জানান, পাঁচ-ছয় মাস আগে তার ভাইকে ১২ লাখ টাকা চুক্তিতে ইতালি নেয়ার উদ্দেশ্য প্রথমে লিবিয়া নিয়ে যাওয়া হয়। বেশ কিছুদিন গেম ঘরে রেখে গত বুধবার রাত ৮টায় নদীপথে ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করার ৪০ মিনিট পর বহনকারী বোট ভূমধ্যসাগরে ডুবে যায়। জাকিরের তত্ত্বাবধানে থাকা ২০ জন থেকে ১২ জন তীরে ফিরে এলেও ৯ জন নিখোঁজ রয়ে যান। লিবিয়ায় থাকা দালাল জাকির হোসেনের মোবাইলে ও অন্যদের ফোন করে স্থানীয় মিলন মেম্বার বেশ কয়েকজন নিখোঁজ হওয়ার তথ্য জানতে পেরে আমাদের জানান। তাদের মধ্যে তার ভাইও নিখোঁজ রয়েছেন। 

নিখোঁজ রবিউলের ভাই ইব্রাহিম বলেন, আট মাস আগে ভৈরবের দালাল রবিউল্লার মাধ্যমে লিবিয়া গিয়েছিল তার ভাই। কিন্তু সেখানে তার ভাইকে বৈধ কোনো কাগজ করে দেয়া হয়নি। দুলালকান্দি এলাকার দালাল জাকির হোসেন ইতালি যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আমাদের কাছ থেকে ৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এখন খবর পেলাম আমার ভাই নিখোঁজ।

রবিউলের স্ত্রী সাথী আক্তার জানান, ১৭ দিন আগে আমার স্বামীর সঙ্গে কথা হয়েছিল, তিনি তার জন্য দোয়া চেয়ে জানিয়েছিলেন, আমরা এখন গেম ঘরে আছি। আগামী বুধবারে ডিঙ্গিতে (বোট) তুলবে, এ কথা বলে মোবাইল বন্ধ করে দেন। তার পর থেকে আর যোগাযোগ করতে পারিনি।

এ ব্যাপারে বেলাব থানার ওসি মো. তানভীর আহমেদ জানান, অফিশিয়ালভাবে তার কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। লোকমুখে ঘটনার খবর শুনে তিনি নিজেই এলাকায় খোঁজখবর নিচ্ছেন।

বেলাব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আয়েশা জান্নাত তাহেরা বলেন, ইতালি যাওয়ার পথে বেশ কয়েকজনের নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ শুনেছি। পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেননি। নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে জানতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি।

এর আগেও গত এক বছরে জেলার রায়পুরা, বেলাব ও মনোহরদী এলাকার প্রায় ২৭ জন ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে নৌকা ডুবে নিখোঁজ হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৯ জনের লাশ দেশে আনা হয়েছিল।