শেয়ার বিজ ডেস্ক: দ্বিতীয় মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদির শপথ অনুষ্ঠান আগামীকাল বৃহস্পতিবার। এ দিন সন্ধ্যায় ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে জাঁকজমক অনুষ্ঠানে আয়োজন করা হয়েছে শপথ অনুষ্ঠানের। শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। গত ২৩ মে ভারতের ১৭তম লোকসভার নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হয়।
ঘোষিত ফলে ৫৪৩ আসনের মধ্যে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন জোট ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) বিপুল ব্যবধানে জয় লাভ করে। এনডিএ জোট ৩৫২ আসনের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। ফলে আগামীকালের প্রধানমন্ত্রীর শপথ অনুষ্ঠানে সার্কভুক্ত দেশসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আমন্ত্রণ পাচ্ছেন না বলে ইঙ্গিত মিলেছে। খবর: রয়টার্স।
এদিকে গতকাল ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শপথের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য বিমসটেকের নেতারা ছাড়াও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে কিরগিজস্তানের প্রেসিডেন্ট এবং মরিশাসের প্রধানমন্ত্রীকে। শপথ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
জানা যায়, মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ত। নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি ওলি এবং শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট সিরিসেনার আসার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। আফগানিস্তানকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, ভারতে লোকসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয় নিয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে বিজেপি; আগামীকাল পুনর্বার সরকারপ্রধান হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন মোদি। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথমবার শপথ নেওয়ার অনুষ্ঠানে প্রতিবেশী দেশগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে সার্কভুক্ত সব দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মোদি। তখন সার্কের সদস্য রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রতিবেশী দেশটির প্রধানমন্ত্রীর অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। কিন্তু পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ভাগ্যে তা ঘটছে না বলে নয়াদিল্লির কয়েকটি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে রয়টার্স।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর থেকে কাশ্মীর নিয়ে দু’দেশের বিরোধ চলছে; একাধিকবার যুদ্ধেও জড়িয়েছে পরমাণু শক্তিধর এ প্রতিবেশী দেশ দুটি। মাঝে বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা সম্পর্কের বরফ গলার পরিবেশ বেশিদিন টেকেনি।
ক্রিকেটার ইমরান খান পাকিস্তানের সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর ভারতের নির্বাচনের কয়েক মাস আগে এ বছরের শুরুতে দু’দেশের মধ্যে যুদ্ধ বাধার পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ না বাধার পর মোদির জয়ে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন ইমরান; দুদিন আগে টেলিফোনেও দুজনে কথা বলেন। কিন্তু ৩০ মে শপথ অনুষ্ঠানের যে প্রস্তুতি ভারত সরকার নিয়েছে, তাতে ইমরান খানের অংশ নেওয়ার কোনো সুযোগ দেখা যাচ্ছে না বলে ভারতের গণমাধ্যমেও খবর এসেছে।
রয়টার্স লিখেছে, লোকসভা নির্বাচনের আগে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ বাধানোর ফায়দা নিয়ে মোদি ক্ষমতায় টিকে যান বলে অনেকের ধারণা রয়েছে, কিন্তু শপথ অনুষ্ঠানে পাকিস্তান বাদ পড়ায় দু’দেশের সম্পর্ক অচিরে উষ্ণ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতির উল্লেখ করে রয়টার্স লিখেছে, এবার বিমসটেক জোটভুক্ত দেশগুলোর নেতাদেরই শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। নয়াদিল্লির আরেকটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, শপথ অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণের তালিকায় পাকিস্তান নেই।
দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা-সার্ককে পাশে রেখে গত কয়েক বছর ধরেই বঙ্গোপসাগরীয় অর্থনৈতিক জোট বিমসটেককে গুরুত্ব দিচ্ছে ভারত। এ জোটে ভারত ছাড়াও রয়েছে বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড। বাংলাদেশ থেকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ৩০ মের অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন বলে জানানো হয়েছে।
‘প্রতিবেশীরা আগে’- এ নীতিতে বিমসটেক দেশগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে বলে ওই বিবৃতিতে বলা হয়; গতবারও একই নীতিতে সার্ক দেশগুলোর নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
ভারতের গণমাধ্যম বলছে, এবার পাকিস্তানকে বাদ দিতেই সার্কের বদলে বিমসটেককে সামনে আনা হয়েছে।
মোদি অভিষেকে ইমরান খানকে এড়ালেও আগামী মাসেই কিরগিজস্তানে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের সম্মেলনে একসঙ্গে হতে পারেন দুজন। ওই সম্মেলনে দুই নেতারই যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।
শপথ অনুষ্ঠানে সাংহাই করপোরেশন অর্গানাইজেশনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট কিরগিজস্তানের প্রেসিডেন্ট ও ভারত মহাসাগরীর দ্বীপরাষ্ট্র মরিসাসের প্রধানমন্ত্রীও আমন্ত্রণ পেতে যাচ্ছেন বলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় দেখা গেছে।