নষ্ট হচ্ছে সম্ভাবনাময় ই-কমার্স

E-commerce. Shopping cart with cardboard boxes on laptop. 3d

বর্তমানে অন্যতম আলোচিত বিষয় ই-কমার্স। ২০১৪ সালে ই-কমার্স সাইটগুলো ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও করোনা কালেএসে তা আরো সক্রিয়ভাবে চলতে শুরু করেছে। হঠাৎ লকডাউন ও শাটডাউন আরম্ভ হলে ই-কমার্সের  সুবাদে ঘরে বসেই সবাই তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা করেন ই-কমার্সের বিভিন্ন সাইট থেকে।

বর্তমানে এমন কোনো জিনিস নেই, যা এই ই-কমার্স সাইটগুলোয় পাওয়া যায় না। ব্যস্ত জীবনকে সহজ ও ঝামেলামুক্ত রাখতে যা কিছু প্রয়োজন, তার সবই পাওয়া যাচ্ছে অনলাইনে। মাছ-মাংস কাটাকাটি করা ঝামেলা মনে হয়, আপনি তা করতে পারছেন না? আজ বাসার খাবার ভালো লাগছে না, বাইরে বের হওয়ারও সময় হচ্ছে না? আপনি কি বাইরের দেশে থাকেন, প্রিয় ব্যক্তিটিকে উপহার পাঠাতে চান? তাহলে আর দেরি কেন? ইন্টারনেট কানেশন দিন, অর্ডার করুন, সমাধান। ঘরে বসে অল্প কিছু সময়ের মধ্যে ক্রয়-বিক্রয় করার সুবিধা থাকায় বিক্রেতারা যেমন লাভবান হচ্ছেন, তেমনি ক্রেতাদেরও সরাসরি বাজারে গিয়ে কেনাকাটার ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে না। জীবন চলার পথ এক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছে।

শুধু ই-কমার্স আমাদের জীবনকে সহজ করছে, তা নয়; বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের বেকার সমস্যাকেও দূর করছে এবং অর্থনৈতিক খাতে সম্ভাবনা উম্মোচন করছে। প্রায় প্রতি বছর দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে অর্থনীতিতে ই-কমার্সের অবদান। বাংলাদেশের বেকার তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীরাও এ খাতে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করছে। অনলাইনের এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তারা নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলছে এবং সফল উদ্যোক্তায় পরিণত হচ্ছে। ফলে বেকার সমস্যা অনেকাংশে হ্রাস পাচ্ছে, যা ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন।

২০১৯ সালে দেশে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসার প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ২৫ শতাংশ, যা ২০২০ সালে এসে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে কিছু অসাধু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কারণে সম্ভাবনাময় এই খাতটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের লোভের বশে, অধিক মুনাফা অর্জনের জন্য প্রতারণার জাল বুনছে। ক্রেতাদের ধোঁকা দিতে তারা বিভিন্ন সাইক্লোন অফার চালু করছে। আর বাঙালিরা তাদের ধোঁকায় পড়ছে, দিন শেষে দেখছে তাদের কাক্সিক্ষত কোনো জিনিসে ঠিক নেই, কিংবা পাঠানো টাকাও ফেরত পাচ্ছে না। এ যেন অনলাইন মাধ্যমকে ব্যবহার করে প্রতারণার নিত্য-নতুন ফাঁদ, যার প্রথমটি ধরা পড়ে আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির মাধ্যমে। প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকের কাছে হাজার কোটি টাকা দেনার বিপরীতে মূলধন মাত্র ৬১ কোটি টাকা। বাকি টাকা কোথায় তার কোনো সদুত্তর নেই। এরপর একে একে বের হতে থাকে ই-অরেঞ্জ, ধামাকা, সিরাজগঞ্জ শপ, রিং আইডি, কিউকম, আলাদিনের প্রদীপ, বুম বুম, আদিয়ান মার্ট, নিডস, দালাল প্লাস, বাজাজ কালেকশন, টুয়েন্টিফোর টিকেট ডট কম, গ্রিন বাংলা, এক্সিলেন্ট ওয়ার্ল্ড অ্যাগ্রো ফুড এন্ড কনজ্যুমারস, গ্লিটার্স আরএসটি ওয়ার্ল্ডসহ অন্তত ১৯টি প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার তথ্য ফাঁস হয়েছে, যা ক্রেতাদের হতাশার কারণ হচ্ছে। ফলে তারা ই-কমার্সের ওপর আস্থা হারাতে বসেছে।

ই-কমার্স কোম্পানিগুলোর নামে এখন হাজার হাজার অভিযোগ। কেউ বলছে, আমি অর্ডার করছি হেডফোন, কিন্তু পেয়েছি চিরুনি। থ্রিপিস অর্ডার করে পেয়েছি মেক্সি। আবার কেউ কেউ বলছেন, অর্ডার করার পর টাকা পেমেন্ট হলে আর ওই সাইটে ঢুকতে পারছি না। এরকম হাজার হাজার অভিযোগ আজ এই সম্ভাবনাময় ই- কমার্স খাতে, যা সত্যিই দুঃখজনক। একটা ঘটনা না বললেই নয়, সম্প্রতি আমরা কয়েকজন মিলে খাবার অর্ডার করলে, সেই খাবারে জ্যান্ত পোকা দেখতে পাই। এরকম পরিস্থিতে আমরা যে আর অনলাইনে খাবার অর্ডার করতে চাইবো না সেটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু তাতে কি শুধু আমাদের ক্ষতি হবে? এ ক্ষতি তো সেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ পুরো বাংলাদেশের, আমাদের একার নয়। তাই উচিত ই-কমার্সের নামে প্রতারণাকারী ব্যক্তিদের প্রকাশ্যে বের করে আনা এবং শাস্তির ব্যবস্থা করা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সিআইডি, দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, শুল্ক বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, গোয়েন্দা বিভাগ এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত এই সম্ভাবনাময় খাতটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া। আর বর্তমানে যে অনেকেই প্রতারণার শিকার হয়ে ই-কমার্সের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে, তা ফিরিয়ে আনতে প্রতারণাকারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া দরকার। তবেই বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সবল করতে ই-কমার্স এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হবে।

লাইজু আক্তার

শিক্ষার্থী, নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ