ক্রীড়া প্রতিবেদক: অভিষেক টেস্টে বল হাতে জ্বলে উঠলেন। সবচেয়ে কম বয়সী (১৭ বছর ৩৫৫ দিন) বোলার হিসেবে ৫ উইকেট নিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়লেন নাঈম হাসান। তাতে বাংলাদেশও পেল ভালো লিড। কিন্তু ছন্নছাড়া ব্যাটিংয়ে দ্রুত উইকেট হারিয়ে চট্টগ্রাম টেস্টে উল্টো চাপে পড়েছে সাকিব আল হাসানের দল।
৭৮ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে দ্রুত ৫ উইকেট হারিয়ে চিন্তায় পড়ে বাংলাদেশ। তারপরও মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে ভর করে চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে স্বাগতিকরা করেছে ৫ উইকেটে ৫৫ রান। সব মিলিয়ে স্টিভ রোডসের শিষ্যরা ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়ে এগিয়ে ১৩৩ রানে। ক্রিজে রয়েছেন মুশফিকুর রহিম ১১ ও মেহেদি হাসান মিরাজ ০ রানে।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে যে স্পিনাররা বাড়তি সুবিধা পাবে তা জানা গিয়েছিল আগেই। গতকাল সেটাই দেখালেন বাংলাদেশের অভিষিক্ত স্পিনার নাঈম হাসান (৫/৬১) ও চোট থেকে ফেরা অধিনায়ক সাকিব আল হাসান (৩/৪৩)। মূলত তাদের ঘূর্ণিতে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে করা ৩২৪ রানের জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ থামে ২৪৬ রানে। তাতে স্বাগতিকরা লিড পায় ৭৮ রানের।
মোটামুটি লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে কেমার রোচের করা প্রথম ওভারে সৌম্য সরকার ২ চারে ১০ রান। ইমরুল নেন ১ রান। কিন্তু পরের ৫ বল পর ওয়ারিক্যানের স্পিনে প্রলুব্ধ হয়ে বোল্ড হয়ে ফেরেন এ বাঁহাতি। কিছুক্ষণ পরই দলের বিপদ বাড়িয়ে দেন সৌম্য সরকার। রোস্টন চালসের বলে এজ হয়ে সিøপে ব্রাথওয়েটের হাতে ধরা পড়েন তিনি। ফেরান আগে ২ চারে ১০ রান করেন সৌম্য। কিছুক্ষণ পরই চেইসের বলে এলবিডব্লিয়ের ফাঁদে পড়েন আগের ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান মুমিনুল হক। সেই ধাক্কা সামলে উঠার আগেই ওয়ারিক্যানের বলে অবিবেচকের মতো সেøাগ সুইপ খেলে পয়েন্টে সীমানার শন গ্যাব্রিয়েলের হাতে ধরা পড়েন সাকিব আল হাসান। তাতে টাইগারদের আরও বিপদ বাড়ে। সেটা কাটিয়ে তুলতে মুশফিকুর রহীমের সঙ্গে চেষ্টা করেন মোহাম্মদ মিথুন। কিন্তু তিনিও পারেননি নিজেকে ঠিক মেলে ধরতে। শেষ বিকালে দেবেন্দ্র বিশুর বলে হয়েছেন বোল্ড।
এরআগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে ৩২৪ রানের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে শুরু থেকেই দারুণ বোলিং করেন মোস্তাফিজুর রহমান-মেহেদি হাসান মিরাজ। কিন্তু সুযোগ তৈরি হলেও ফিল্ডার-উইকেটরক্ষকের অসহযোগিতায় উইকেটের দেখা পাচ্ছিল না বাংলাদেশ। ঠিক সে সময় তাইজুল ইসলামের হাতে বল তুলে দিয়ে দলীয় অধিনায়ক সাকিব আল হাসান পান সাফল্য। ১১তম ওভারের প্রথম এ বাঁহাতি এলবিডব্লিয়ের ফাঁদে ফেরেন কিরন পাওয়েলকে। তাইজুলকে প্যাডেল সুইপ করতে চেয়েছিলেন পাওয়েল। অ্যাঙ্গেলে ভেতরে ঢোকা বল ব্যাটে খেলতে পারেননি। আম্পায়ার এলবিডব্লিউর আবেদনে সাড়া দিলে রিভিউ নেন সফরকারী ওপেনার। কিন্তু তাতেও বাঁচতে পারেননি তিনি। ফেরার আগে ২০ বলে দুই চারে ১৪ রান করেন পাওয়েল। এর পরের ওভারেই সাকিব দেখান জাদু। ১২তম ওভারের প্রথম বলেই শেই হোপকে দারুণ ডেলিভারিতে করেন বোল্ড। লেগ স্টাম্পের বাইরে ঝুলিয়ে দেওয়া বল বেরিয়ে এসে ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন উইন্ডিজের ডানহাতি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। ব্যাটে খেলতে পারেননি তিনি, স্পিন করে স্টাম্পে লাগে বল। এর ৫ বল পরই বাংলাদেশ টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক তুলে সফরকারী অধিনায়ক কার্লোস ব্রাফওয়েটের উইকেট। সাকিবের অফ স্টাম্পের বাইরের ঝুলিয়ে দেওয়া মন্থর বল পা বাড়িয়ে ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন তিনি। ঠিক মতো খেলতে পারেননি, ব্যাটের কানায় লেগে সহজ ক্যাচ যায় প্রথম সিøপে দাঁড়ানো সৌম্য সরকারের হাতে। তাতে বেশ বিপদে পড়ে দলটি। ঠিক সে সময় দলটির হাল ধরেন রোস্টন চেইস ও সুনীল আমব্রিস। ৪৬ রানের জুটিও গড়েন তারা। তাতে ধীরে ধীরে সামনে দিকে এগোচ্ছিল দলটি। কিন্তু পরের ১১ রানের মধ্যে অভিষিক্ত নাঈম হাসান উভয় ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে আবারও সফরকারী শিবিরে ফিরিয়ে দেন চাপ।
নাঈমের লেগ স্টাম্পের বল ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন চেইস। ব্যাটের কানা ছুঁয়ে প্যাডে লেগে সহজ ক্যাচ যায় শর্ট লেগে। তৎপর ইমরুল কায়েস ক্যাচ মুঠোয় জমান। ফেরার আগে চেইস করেন ৩১। এর কিছুক্ষণ পর সুনীল আমব্রিস ফেরেন এলবিডব্লিয়ের ফাঁদে পড়ে। বাঁচতে নিয়েছিলেন রিভিউ। কিন্তু আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত বদলায়নি। সে সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ছিল ৫ উইকেটে ৮৮। এমন এক অবস্থায় দলটির হাল ধরেন ষষ্ঠ উইকেটে নামা সিমরন হেটমায়ার ও শন ডাওরিচ। এক প্রান্ত আগলে রাখেন ডাওরিচ। অন্যপ্রান্তে ঝড় তোলেন হেটমায়ার। এক পর্যায়ে এক পর্যায়ে ৪৩ বলে ঝড়ো হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। শেষ পর্যন্ত তিনি খেলেন ৪৭ বলে ৫ চার ও চার ছয়ে ৬৩ রান। এরপরই হেটমায়ারকে দারুণ ডেলিভারিতে মুশফিকুর রহীমের ক্যাচে থামান মেহেদি হাসান মিরাজ। তাতে ভাঙে ডাওরিচের সঙ্গে হেটমায়ারের ৯২ রানের জুটিও। স্বস্তিও ফেরে টাইগার শিবিরে।
চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিনের শুরুতে আগের দিনের সঙ্গে ৯ রান যোগ করে ৩২৪ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। তাইজুল শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ৩৯ রানে। নাঈম হাসান গতকাল শুরুতেই ফেরেন ২৬ রানে। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ১২০ রান করেন মুমিনুল ইসলাম। ইমরুল কায়েস ৪৪ আর সাকিব ৩৪ রান করেছিলেন।
চা বিরতির পর আবারও জ্বলে উঠেন নাঈম। ইনিংসের ৫৩তম ওভারের তৃতীয় ও ষষ্ঠ বলে দেবেন্দ্র বিশু ও কেমার রোচকে এলবিডব্লিয়ের ফাঁদে ফেরান তিনি। এর কিছুক্ষণ পরই এ ডানহাতি অফস্পিনার ওয়ারিক্যানকে বোল্ড করে অভিষেকে সবচেয়ে কম বয়সী বোলার হিসেবে ৫ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব দেখান এ ডানহাতি স্পিনার। পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের লেজটা ছেটে দেন সাকিব। তাতে টাইগাররা পায় ৭৮ রানের লিড। কিন্তু দিন শেষে ছন্নছাড়া ব্যাটিংই স্বাগতিক সমর্থকদের করেছে হতাশ।