বিশ্বায়নের এ যুগে প্রযুক্তির বিপ্লবের বিপরীতে মানুষের মনস্তত্ত্বের অবস্থানটা কতটা সংকটের মুখে পড়েছে তা বলে প্রকাশ করা অনেকটা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। একইসঙ্গে যন্ত্রনির্ভর ব্যবস্থার ভেতর দিয়ে ভাব প্রকাশ করা কতটা কঠিন থেকে কঠিনতর অবস্থায় পৌঁছেছে তা আর নাই বা বলি।
প্রাচীন সমাজ কতটা আধুনিক হয়েছে তাতেও এক প্রকারের প্রশ্ন থেকেই যায়। মানুষের মনের খোরাক মেটাতেও এ সমাজ কতটা সফল বা ব্যর্থ সে প্রশ্নও রেখে গেলাম।
কালের পালাক্রমে সমাজব্যবস্থা এক ধারা থেকে অন্য ধারায় লাফিয়ে পরিবর্তন হয়েছে ঠিকই কিন্তু কতটুকু পরিবর্ধন হয়েছে, তা নিয়ে মনের ভেতর প্রশ্ন থেকেই যায়। কারণ সমাজের ধারণা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ের জায়গা বাড়েনি বরং কমেছে বা তলানিতে ঠেকেছে। একইসঙ্গে ভাব প্রকাশের গতিধারাও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রতিটি স্তরে স্তরে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বনাম বাস্তবমুখী শিক্ষার দিক বিবেচনা করলে দেখা যায় মানুষ পুঁথিগত বিদ্যায় বেশ সুনাম কুড়িয়েছে ঠিকই কিন্তু তার বিপরীতে পিছিয়ে পড়েছে জীবনমুখী জ্ঞান অর্জন এবং জীবিকা নির্বাহ থেকে।
কৃষিনির্ভর সমাজে মানুষের জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা যতটা না প্রাধান্য পেত বা প্রসারিত ছিল বর্তমানে উৎপাদনশীলতা এক প্রকারের জাঁতাকলে পড়ে দুমড়েমুচড়ে গিয়েছে। এখন আর কেউ উৎপাদনমুখী কর্মের দিকে যেতে চায় না। সবাই নির্ভর করে মেশিনের ওপর। কৃষকশ্রেণি সে চায় তাদের পরবর্তী প্রজš§ পুঁথিগত বিদ্যায় পারদর্শী হোক, অন্যদিকে বণিক শ্রেণি চায় কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের মাধ্যমে অধিক মুনাফা অর্জন। আর উচ্চবিত্ত শ্রেণি এই দুই শ্রেণির ওপর কর্তৃক চালাতে যায়। এই মূল কারণ, মনভূমিক পরিবর্তন এবং আধিপত্যবাদী মনোভাব।
আজকাল মাতৃগর্ভেই একটি শিশুর ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে যায়। কারণ সবার চায় উন্নত জীবন এবং দাসত্বের হাত থেকে মুক্তি। ফলে ছোটবেলা থেকেই একটি শিশুর মনস্তত্ত্বে ঢুকিয়ে দেয়া হয় বিলাসবহুল জীবনের স্বপ্ন আর আধিপত্যবাদী মনোভাব। এতে করে সূচনা ঘটে শ্রেণি বৈষম্য এবং মনস্তাত্ত্বিক বিকাশে সৃষ্টি হয় বৈশ্বিক চাপ। ফলে শিশুটি জš§ানোর পরপরই তাদের মনস্তত্ত্ব দখল দখলে চলে যায় সমাজের কাছে। তার নিজের আবেগ, অনুভূতি বলতে আর কিছুই থাকে না। সবকিছুই নিয়ন্ত্রিত হতে থাকে। একইসঙ্গে ভাব প্রকাশের ক্ষেত্রেও কিছুটা বেগ পেতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি রোবটকে যেভাবে প্রোগ্রাম করে পরিচালনা করা হয় ঠিক একইভাবে মানুষের মনস্তত্ত্বকে পরিচালিত হয়। এতে করে পৃথক পৃথক সত্তা অনেকটা যন্ত্রের মতো আচরণ করে এবং বিনাশ ঘটে মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ের।
আকিক তানজিল জিহান
শিক্ষার্থী
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ