সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ: প্রতিষ্ঠার ৩২ বছরেও পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি কিশোরগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরী। গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ও ড্রেনেজসহ নানাবিধও সমস্যায় জর্জরিত এ শিল্পনগরী। ফলে সাহস পাচ্ছেন না নতুন শিল্প উদ্যোক্তারাও। তবে সরকার কার্যকরি উদ্যোগ নিলে আলোর মুখ দেখবে কিশোরগঞ্জ বিসিক। সৃষ্টি হবে প্রায় ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ।
জানা যায়, সরকারি উদ্যোগে ১৯৮৭ সালে কিশোরগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠা হয়। প্রায় ৩২ বছর পার করলেও এখনও পায়নি পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি এ অঞ্চলটি। কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মারিয়া এলাকায় প্রায় ২০ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত বিসিক শিল্প নগরীটিতে রয়েছে ১৫০টি প্লট। যার মধ্যে ১০টি প্লট এখনও খালিই রয়ে গেছে। বরাদ্দ দেওয়া মোট ৬৪টি শিল্প ইউনিটের মধ্যে উৎপাদনে রয়েছে মাত্র ২৯টি ইউনিটে। এগুলোও গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ও ড্রেনেজ সমস্যার কারণে এখন ধুঁকছে। ফলে সাহস পাচ্ছেন না নতুন শিল্প উদ্যোক্তারা।
বিসিক সূত্রে জানা যায়, মোট ৬৪টি শিল্প ইউনিটের মধ্যে ২৯টি ইউনিট উৎপাদনে থাকলেও বাকি ৩৫টি ইউনিট এখনও উৎপাদনে যেতে পারেনি। এসবের মধ্যে নির্মাণকাজ শুরুই হয়নি ৯টি ইউনিটের। এছাড়া বন্ধ বা রুগ্ণ অবস্থায় রয়েছে ছয়টি ইউনিট। এছাড়া নির্মাণাধীন রয়েছে সাতটি, নির্মাণকাজ শেষ হলেও উৎপাদনে যায়নি ১১টি এবং মামলা রয়েছে দুটির।
সংশ্লিষ্ট শিল্প উদ্যোক্তারা জানান, সরকারের কার্যকর উদ্যোগের অভাবে আলোর মুখ দেখছে না কিশোরগঞ্জ বিসিক। অথচ একটু সুনজর দিলেই ঘুচবে অন্ধকার, দেখবে আলোর মুখ। সৃষ্টি হবে প্রায় ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ।
বিসিক শিল্পনগরী মালিক সমিতির সভাপতি ও এমএম খান ফুডসের স্বত্বাধিকারী আজমল খান জানান, কিশোরগঞ্জে শিল্প উদ্যোক্তার অভাব নেই, অভাব হলো পরিবেশের। কিশোরগঞ্জের বিসিক শিল্পনগরীকে গতিশীল করলে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করতে সাহস পাবেন। কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
তিনি বলেন, বিসিক শিল্পনগরীতে আমরা অনেক ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। গ্যাস সংযোগের জটিলতার কারণে উৎপাদন খরচ বেশি হয়। ড্রেনেজ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। পল্লীবিদ্যুতের সংযোগ থাকার কারণে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধাও পাচ্ছি না।
মেসার্স ইস্টবেঙ্গল ল্যাবরেটরিজের স্বত্বাধিকারী একেএম সালেক জানান, গ্যাস সংযোগ না থাকার কারণে সিলিন্ডার গ্যাস দিয়ে কারখানা চালাতে হয়। যেখানে জ্বালানি খরচ পাঁচ হাজার টাকা হওয়ার কথা, খরচ হচ্ছে ২০ হাজার টাকা। আবার পিডিবির বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকার কারণে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎও পাওয়া যায় না।
মের্সাস ক্রিসেন্ট স্টিল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসের স্বত্বাধিকারী মো. জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া বলেন, বিসিক শিল্পনগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থার অবস্থা শোচনীয়। নেই কোনো বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুবিধা। এছাড়া সীমানা প্রাচীর না থাকায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয়, স্বস্তি পাই না। প্রায় প্রতিদিনই মাদকাসক্তরা এখানে এসে আড্ডা জমায়। এ কারণে শিল্পনগরী এলাকায় একটি পুলিশ বক্স খুবই প্রয়োজন।
কিশোরগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মো. মুজিবুর রহমান বেলাল জানান, বিসিকের অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রয়োজন। নতুন গ্যাস সংযোগ জটিলতার কারণে অনেক উদ্যোক্তারাই উৎপাদনে যেতে পারছে না। সরকার যদি কিশোরগঞ্জ বিসিকের দিকে সুনজর দেয় তাহলে প্রায় ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।
কিশোরগঞ্জ বিসিকের কয়েকজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এ শিল্পনগরীটির বিভিন্ন সমস্যা এবং রুগ্ণ দশার কথা স্বীকার করে বলেন, এখানে সবচেয়ে সবচেয়ে বড় সমস্যা গ্যাসের। শিল্পনগরীটিকে গতিশীল করতে হলে অচিরেই গ্যাস সংযোগের প্রয়োজন। তারা এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন বলেও জানান।
কিশোরগঞ্জ বিসিকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) মো. কামরুল আহসান জানান, বিসিককে গতিশীল করা দরকার। বর্তমান সরকার বিসিককে গতিশীল করার জন্য পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন।
ইউনিটগুলো কেন উৎপাদনে যাচ্ছে না এ প্রশ্নে মো. কামরুল আহসান বলেন, গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের সমস্যার কারণে শিল্প উদ্যোক্তরা উৎপাদনে যেতে পারছে না। বরাদ্দের অভাবে শিল্পনগরীর অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, নতুন শিল্প উদ্যোক্তা তৈরিতে প্রতি বছর তিন দিনব্যাপী তিনটি প্রশিক্ষণ কর্মশালা করা হয়। বিনীত ঋণ কর্মসূচির মাধ্যমে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা করে ঋণ দেওয়াও হয়ে থাকে।
খালি প্লট সর্ম্পকে জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জ বিসিক শিল্প নগরী কর্মকর্তা এস এম আসলাম কবির জানান, চেম্বার অব কমার্স এবং শিল্পনগরীর উদ্যোক্তাদের নিয়ে শিল্পনগরীতে অব্যবহƒত প্লট এবং নির্মাণাধীন শিল্প ইউনিটের নির্মাণকাজ নীতিমালা অনুযায়ী সম্পন্ন করে উৎপাদন শুরু করার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়া ইতোমধ্যে উদ্যোক্তাদের কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হয়েছে। উদ্যোক্তারা চিঠির উত্তর দিয়েছেন। আগামী প্লট বরাদ্দ সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে।