নাব্য রক্ষায় নিন দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা

কয়েকদিন ধরে গণমাধ্যমে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী ফেরিঘাটে নাব্য সংকট নিয়ে খবর আসছে। এ ঘাট ব্যবহারকারী হাজার হাজার যাত্রীর দুর্ভোগ বাড়ছে। গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত খবরে বলা হয়,  শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটে নাব্য সংকটের কারণে টানা আট দিন ফেরি চলাচল বন্ধ। এতে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার হাজার হাজার যাত্রী অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্পিডবোট ও লঞ্চ দিয়ে গন্তব্যে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। ঘাটে পারের অপেক্ষায় রয়েছে দুই শতাধিক ট্রাক ও পিকআপ। বৃহস্পতিবার সকালে চালকরা জানান, শিমুলিয়া ও কাঁঠালবাড়ী উভয় ঘাটে পণ্যবাহী ট্রাকগুলো অর্থের অভাবে বিকল্প রুট পাটুরিয়া দিয়ে গন্তব্যে যেতে পারছে না।

বর্ষকালে সাধারণত নাব্য সংকট হওয়ার কথা নয়। নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পণ্য পৌঁছাতে না পারলে লোকসান গুনতে হবে। ঘাট এলাকায় দশ-পনেরো দিন কাটিয়ে দিতে হচ্ছে পরিবহন শ্রমিকদের। সবাই জানেন, ঘাটে খাবারের অনেক দাম। খুব কষ্টে আধা পেট খেয়ে কোনো রকম দিন পার করছেন তারা।

এদিকে নাব্য সংকট নিরসনে খনন করা হলেও কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত তিন মাস ধরে বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজারগুলো ঘুরেফিরে পদ্মার চর ও চ্যানেলের আশপাশেই মাটি ফেলছে। ফলে নাব্য সংকট থেকেই যায়। ড্রেজিং করে পলিমাটিগুলো পাশে না ফেলে দূরে ফেলা উচিত। কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে যথোচিত ব্যবস্থা নেবে। নৌপথটি সচল রাখতে বর্ষা মৌসুম নয়, সারা বছর খননকাজ ব্যাহত রাখতে হবে।

কর্তৃপক্ষ বলছে, কেউ স্বেচ্ছায় ঘাটে অবস্থান করছে। ফেরি চালু হবে কি না বা কবে ফেরি চালু হবে সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া যাচ্ছে না। কোনো কারণে নাব্য সংকট বিষয়ে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা কিংবা আছে কি না, সেটিও খতিয়ে দেখতে হবে।

ভুলে গেলে চলবে না, আমাদের সভ্যতা গড়ে উঠেছে নদীকে কেন্দ্র করেই। তবে নদীমাতৃক এ দেশে এখন নদীর ওপর নির্বিচার দখলে পরিবেশসহ সার্বিক পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটছে। নৌপথ সংকুচিত হয়ে বড় বড় শহর বা বন্দর গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছে। নদী রক্ষায় কর্মরতা মন্ত্রণালয়, সংস্থা ও কমিশনকে এ বিষয়ে অর্থবহ ও সুদূরপ্রসারী ব্যবস্থা নিতে হবে। শিল্প-কারখানা সৃষ্ট দূষণ, অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ও নানা অনিয়ম রোধ এবং স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করা গেলে নাব্য সংকট দূর করা যাবে। এ কূল ভাঙে, ওই কূল গড়ে এটি নদীর বৈশিষ্ট্য। স্বাভাবিক প্রবাহে ব্যত্যয় ঘটলে নদীর রুদ্রমূর্তি ধারণ করবেই। তাই নদী খনন ও শাসনে সমন্বয় করতে হবে। মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তরগুলো নিজস্ব কাঠামোর মধ্যে দায়িত্ব পালন করে। জনভোগান্তি দূরীকরণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এগিয়ে আসবে, এটিই প্রত্যাশা।