Print Date & Time : 5 July 2025 Saturday 2:31 pm

‘নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার ইচ্ছা রয়েছে’

সফল নারী উদ্যোক্তা কানিজ ফাতেমা। পরিবারের সহায়তা, নিজের ইচ্ছাশক্তি ও কঠোর পরিশ্রম দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘টপ লেদার’ নামের একটি ফুটওয়্যার কারখানা। সম্প্রতি এক আলাপনে তার এ সফলতার গল্প শুনেছেন শিপন আহমেদ

ব্যবসা শুরুর গল্পটা শুনতে চাই…

কানিজ ফাতেমা: সিরাজগঞ্জ থেকে এসএসসি পাস করেছি। আর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেছি ঢাকার আগারগাঁও মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে। ছোটবেলা থেকে নিজ উদ্যোগে কিছু করার ইচ্ছা ছিল। সেটা শুধু নিজের জন্য নয়, দশের জন্য ও দেশের জন্য। এজন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ নিই। এসএমই ফাউন্ডেশন, যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, বিসিক মতিঝিল ও বিসিক স্কিল বি’ইয়া’র প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। এরপর অনলাইনভিত্তিক চামড়াজাত পণ্যসহ আরও নানা পণ্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করি। কিন্তু ব্যবসাটি নিজের মনের মতো না হওয়ায় পরবর্তী সময়ে টপ লেদার নামে রাজধানীর হাজারীবাগে একটি ফুটওয়্যার কারখানা নির্মাণ করি।

ব্যবসায় সহায়তা পেয়েছেন কোথা থেকে? কত টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন?

কানিজ ফাতেমা: পরিবার থেকে সহায়তা পেয়েছি। এছাড়া বি’ইয়া’র প্রতিষ্ঠান বেশ
সাহায্য করেছে। প্রথমে ১০ লাখ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলাম। এখন ব্যবসার সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০ লাখ টাকা। এ পর্যন্ত পাঁচটি উদ্যোক্তা মেলায় অংশ নিয়েছি। মেলায় ভীষণ সাড়া পেয়েছি।

আপনার প্রতিষ্ঠানের পণ্যের বিশেষত্ব কী? পণ্যগুলো সাধারণত কোথায় বিক্রি করে থাকেন?

কানিজ ফাতেমা: আমার প্রতিষ্ঠানের পণ্যগুলো শতভাগ চামড়া দিয়ে তৈরি। গাজীপুরে আমাদের একটি শোরুম রয়েছে। বর্তমানে বেশ সাড়া পাচ্ছি। দারাজ-এর সঙ্গে সংযুক্ত আছি। চট্টগ্রামে আমার একজন বায়ার আছেন। এছাড়া আমি অনলাইনে অর্ডার নিই। পাইকারি এবং খুচরাও বিক্রি করি।

কাঁচামাল কোথা থেকে সংগ্রহ করেন?

কানিজ ফাতেমা: রাজধানীর হাজারীবাগ, সিদ্দিকবাজার, বংশাল ও নয়াবাজার থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করি। আমার কারখানায় নারী ও পুরুষের নানা ধরনের জুতা ও স্যান্ডেল তৈরি করা হয়।

নারী উদ্যোক্তা হিসেবে কোনো বিশেষ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন কী?

কানিজ ফাতেমা: পারিবারিক কোনো সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়নি। নারী উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যাংক ঋণ পাওয়া অনেক জটিল। অনেক জটিলতার পর ঋণ পাওয়া গেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে, নারীরা এমন কিছু সমস্যা মোকাবিলা করে যেটা একই সমাজের একজন পুরুষকে করতে হয় না। বিশেষ করে যখন একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে ঘর থেকে বের হই, তখন অনেকে সুনজরে দেখেন না। অনেকে অশালীন মন্তব্যও করেন। তাই এ ধরনের মানসিকতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। কারণ, দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে একজন নারী শুধু চাকরির বাজারে নয়, বরং নিজে উদ্যোক্তা হয়ে
অন্যের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

বর্তমানে এ ব্যবসায় প্রতিবন্ধকতাগুলো কী?

কানিজ ফাতেমা: এ ক্ষেত্রে দক্ষ কারিগর ও কাঁচামালের অভাব রয়েছে।

নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সরকারি পর্যায় থেকে কী কী সুবিধা দেওয়া দরকার বলে মনে করেন?

কানিজ ফাতেমা: প্রথমত, সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা। তাহলে অনেকে ব্যবসায় আগ্রহী হয়ে উঠবেন। অনেক উদ্যোক্তা তৈরি হবে। এতে বেকারত্ব দূর হবে, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। অর্থনীতি ত্বরান্বিত হবে। দ্বিতীয়ত, নারীদের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি বাজারজাতকরণের ব্যবস্থাসহ নারীদের তৈরি পণ্যের প্রচার করতে হবে।

নতুন উদ্যোক্তার প্রতি আপনার পরামর্শ…

কানিজ ফাতেমা: নতুন নারী উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে বলব: ব্যবসার সাফল্য মানসিকতা ও কাজের প্রস্তুতির ওপর নির্ভর করে। তাই যে কোনো ব্যবসা শুরুর আগে এ সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখতে হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে হবে। ধৈর্যশীল হতে হবে। আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। কথায় ও কাজে মিল থাকতে হবে। প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখা ও ক্রেতার আস্থা অর্জনে পণ্যের গুণগত মান বজায় রাখতে হবে। জীবনে উন্নতি করতে চাইলে পরিশ্রমী হতে হবে। সফল হওয়ার অদম্য ইচ্ছা থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, নারীদের চলার পথে অনেক বাধা আসে। তাই ভেঙে পড়া যাবে না। এগিয়ে যেতে হবে সামনের দিকে।

পাঁচ বছর পর নিজেকে কোন অবস্থানে দেখতে চান?

কানিজ ফাতেমা: ৬৪ জেলায় একটি করে শোরুম থাকবে আমার প্রতিষ্ঠানের। বিদেশে পণ্য রফতানি করব। টপ লেদারের বাজারজাত করা পণ্যের সুনাম থাকবে মানুষের মুখে মুখে। নিজেকে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে দেখতে চাই।

আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা…

কানিজ ফাতেমা: উৎপাদন বাড়াতে চাই। বর্তমানে আমার অধীনে পাঁচজন শ্রমিক কাজ করছেন। এ সংখ্যা বাড়াতে চাই। তবে নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির ইচ্ছা রয়েছে। বলতে পারেন, এটাই আমার স্বপ্ন।