নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে বাস্তবোচিত ব্যবস্থা নিন

মাগুরায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া আট বছরের শিশু ধর্ষণের ঘটনায় পুরো দেশ স্তম্ভিত। শিশুটি এখন ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শনিবার গাজীপুরে শ্রীপুর উপজেলার বরমীর দরগারচালা এলাকায় ঘটেছে আরেক পৈচাশিক কাণ্ড। ইয়াবা সেবন করে আট বছরের এক শিশুকে গজারী বনের ভেতর নিয়ে যায় জনৈক যুবক। সেখানে তাকে ধর্ষণের সময় ধারণ করা ভিডিও সামাাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইমোতে বন্ধুদের পাঠায় ওই যুবক। উভয় ঘটনায় অভিযুক্তদের আটক করা হয়েছে।

কিছু ধর্ষণের ঘটনায় দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। সেই ঝড় একসময় আবার থেমেও যায়। কিন্তু থামে না ধর্ষণের ঘটনা আমরা নারীদের জীবন ও সম্ভ্রমের নিশ্চয়তা দিতে পারিনি। শুধু নারী হওয়ার অপরাধে প্রতিমুহূর্তে নিরাপত্তার ঝুঁকিতে বসবাস করা কোনো সভ্য দেশের দৃষ্টান্ত হতে পারে না। দুর্বৃত্তদের যথোচিত শাস্তি নিশ্চিত করতে পারেনি রাষ্ট্র। অধিকাংশ ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশিতই হয় না। মাগুরায় ধর্ষণের শিকার হওয়া আট বছরের শিশুটি যদি জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এসে না পৌঁছাত, তাহলে এ ঘটনাও হয়তো চাপা পড়ে যেত। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসেই সারা দেশে ৩৯৫ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১১৫ জন। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে নারী ও কন্যাশিশু ধর্ষণের খবর আসছে—বাসে কিংবা চলন্ত পরিবহনে ধর্ষণের ঘটনা, অটোরিকশা থেকে নামিয়ে ধর্ষণ, ট্রলারে দলবদ্ধ ধর্ষণ, অবকাশযাপন কেন্দ্রে বেড়াতে গিয়ে কিশোরী ধর্ষণ এবং শহীদ দিবসে ফুল কুড়াতে যাওয়া শিশুকে ধর্ষণ।

ধর্ষণের ঘটনা যেকোনো পরিস্থিতিতেই অগ্রহণযোগ্য। কেউ আবার এ পরিস্থিতির জন্য মেয়েদের এবং তাদের পোশাক কিংবা চালচলনকে দায়ী করেন। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে রাষ্ট্র ও সমাজকে কঠোর হতে হবে। নারী নির্যাতন রোধ শুধু নারীর বিষয় নয়, এটা পরিবার ও সমাজের বিষয়। আইনগত, কাঠামোগত এবং ব্যবস্থাপনা ও মানসিকতার জায়গা থেকে আমাদের নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। কোনো পুরুষের যে অধিকার আছে, কোনো নারীরও সে অধিকার আছে।

নারী নির্যাতন রোধে আইন সংস্কার ও নতুন আইন করা দরকার। কিন্তু এখন যে আইন আছে, সেটাই ঠিকভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে না।
শনিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সম্প্র্রতি নারীদের ওপর যে জঘন্য হামলার খবর আসছে, তা গভীর উদ্বেগজনক। একটি ‘নতুন বাংলাদেশ’-এর যে স্বপ্ন আমরা দেখছি, তার সম্পূর্ণ বিপরীত। আমরা এই নতুন বাংলাদেশে নারী-পুরুষ সবার সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা আমাদের সব শক্তি প্রয়োগ করে এই অধিকার প্রতিষ্ঠা করব। নারীর জীবন ও সম্মান রক্ষায় আমাদের প্রত্যেককে ইস্পাতকঠিন অবস্থান নিতে হবে এবং প্রতিটি ঘটনার যথোচিত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।