Print Date & Time : 10 September 2025 Wednesday 10:36 pm

নারী খেলোয়াড়দের সম্মানী বাড়ানো হোক

দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ: দক্ষিণ এশিয়ায় সেরা বাংলাদেশের মেয়েরা’ শিরোনামে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তা পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। দেশের ইতিহাসে নারী ফুটবলে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক শিরোপা জিতল বাংলাদেশ। এ বিজয় নিঃসন্দেহে অত্যন্ত আনন্দের। কিন্তু পুরুষ দলের ক্রিকেটের ক্ষেত্রে সামান্য জয়েও যে উচ্ছ্বাস পরিলক্ষিত হয়, গতকালের বিজয়ে তার ছিটেফোঁটাও চোখে পড়েনি। এমনকি সরকারের তরফ থেকেও তেমন উদ্যাপনের ঘোষণা আসেনি, কেবল ছাদখোলা বাসের ব্যবস্থা করা ছাড়া। অথচ পুরুষ ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে জয়ের পরই তাদের জন্য প্লট-ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেয়ার ঘোষণাও আমরা দেখেছি। অথচ নারী খেলোয়াড়দের চলতে হয় নানা অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের উপযুক্ত সম্মানীও দেয়া হয় না। এ পরিস্থিতির পরিবর্তন হওয়া উচিত।

দেশের ক্রীড়া জগতের কার্যক্রম বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এখন দেশের সবচেয়ে ধনী ক্রীড়া সংস্থা হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। প্রতিষ্ঠানটির বিপুল পরিমাণ অর্থ সঞ্চিতি রয়েছে। তা থেকে বড় অঙ্কের মুনাফা আসে। কিন্তু এ মুনাফা কোন খাতে ব্যয় হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বর্তমানে দেশের সবচেয়ে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ক্রীড়া খাত হচ্ছে পুরুষ ক্রিকেটারদের জাতীয় দল। এ দল নিয়ে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যতটা মাতামাতি হয়, দেশের আর কোনো খেলোয়াড় গ্রুপ নিয়ে এতটা আলোড়ন দেখা যায় না। তাছাড়া একজন প্রথম শ্রেণির পুরুষ ক্রিকেটার যে পরিমাণ বেতন-ভাতা ও আর্থিক সুবিধাদি পেয়ে থাকেন, প্রথম শ্রেণির নারী ক্রিকেটাররা তার ২০ শতাংশও পান না। ফুটবলের ক্ষেত্রেও একই চিত্র। ফুটবলে সার্বিকভাবে খেলোয়াড়দের সম্মানী ক্রিকেটারদের তুলনায় অনেক কম। আর নারী ফুটবলারদের ক্ষেত্রে তা এতটাই কম যে উল্লেখ করার মতো নয়। মাসিক সম্মানী মাত্র ১০ হাজার টাকা। অথচ পুরুষ ক্রিকেটারদের অনেকে শতকোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। এত বিত্তবৈভবের মালিক হয়েও তারা নানা ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্যে নিয়োজিত হচ্ছেন। এর বিপরীতে ক্রিকেটে তাদের তেমন মনোযোগ আছে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তার উপযুক্ত প্রমাণ, দীর্ঘদিন জাতীয় দলের বড় কোনো বিজয় অর্জন না করা।

অন্যদিকে যে নারী ফুটবলাররা একটি সম্মানজনক শিরোপা এনে দিলেন, তাদের নাকি ভালো মানের খাবার পরিবেশনের জন্যও পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকে না। বিষয়টি রীতিমতো লজ্জাকর বলে মনে করি। নারী ক্রিকেটের ক্ষেত্রেও গুরুত্ব অনেক কম, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নারী খেলোয়াড়দের সম্মানী ও সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে উদ্যোগ নেবে বলেই বিশ্বাস।