নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম জয়

ক্রীড়া প্রতিবেদক: দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর পেরিয়ে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার ২২ বছর পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম জয়, কিউইদের মাটিতেও তাদের বিরুদ্ধে যে কোনো ধরনের ফরম্যাটে প্রথম জয়। এ তো ইতিহাসই!

দেশের ক্রিকেটে যখন সমালোচনার ঝড়, দলের মধ্যে ভাঙনের সুর, তখনই যেন মিষ্টি একটু শীতল বাতাস বয়ে দিলেন এবাদত হোসেন। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে ইতিহাস গড়লেন টাইগাররা। সাদা পোশাকে রঙিন হলো মুমিনুল হকের দল। এ জয়টি যে বড্ড বেশি প্রয়োজন ছিল দেশের ক্রিকেটের জন্য।

১, ২, ৩ করে একে একে টানা ৩২ ম্যাচ হার। অবশেষে কাক্সিক্ষত জয়ের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ দল। নিউজিল্যান্ডে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলতে গিয়ে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ৩২ ম্যাচের সবগুলোয় হার টাইগারদের। ৯ টেস্টে সাফল্য নেই একটিতেও। অবশেষে সে আক্ষেপ ঘুচেছে। নিউজিল্যান্ডে ইতিহাস গড়া জয় পেয়েছেন লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচ জিতে নতুন বছর অর্থাৎ ২০২২ সাল শুরু বাংলাদেশ দলের।

২১ বছর ধরে নিউজিল্যান্ডে সফর করা বাংলাদেশ দল অবশেষে জয়ের খোঁজ

পেয়েছে। ২ ম্যাচ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম ম্যাচে কিউইদের দেয়া ৪০ রানের লক্ষ্য টপকে ৮ উইকেটে জিতেছেন সফরকারীরা। এ জয়ের মধ্য দিয়ে চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় চক্রে পয়েন্টের খাতা খুলল বাংলাদেশ।

ম্যাচের পঞ্চম ও শেষদিন সকালে প্রতিপক্ষকে অলআউট করে লক্ষ্য তাড়ায় নামে বাংলাদেশ। তবে ইনিংসের শুরুটা ভালো হয়নি সফরকারীদের। ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে ব্যর্থ সাদমান ইসলাম প্রথম ইনিংসে ২২ রান করলেও এবার ফিরলেন ৩ রান করে। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে টিম সাউদির লাফিয়ে ওঠা বাইরের বলটি চাইলেই ছেড়ে দিতে পারতেন সাদমান, ঝুঁকি নিয়ে খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন।

ইনজুরিতে পড়া মাহমুদুল হাসান জয়ের পরিবর্তে তিন নম্বর থেকে আজ ইনিংস শুরু করেন নাজমুল হোসেন শান্ত। সাদমানের আউটের পর শান্তও ফেরেন ১৭ রান করে। পরে অধিনায়ক মুমিনুল হক আর মুশফিকুর রহিম দলের জয়ের বাকি আনুষ্ঠানিকতা সাড়েন তিনি। ১৭ ওভার খেলে জয়ের বন্দরে পৌঁছায় বাংলাদেশ দল। বাকি থাকে আরও ২ সেশন। এতেই জয় আসে ৮ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে। মুমিনুল ১৩ ও মুশফিক ৫ রানে অপরাজিত থাকেন। নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশের প্রথম জয়ের সঙ্গে উপমহাদেশীয় কোনো দল ১০ বছর পর সেখানে টেস্ট জিতল।

এর আগে চতুর্থ দিন ৫ উইকেট হারিয়ে কিউইদের সংগ্রহ ছিল ১৪৭ রান। ১৭ রানের লিড নিয়ে গতকাল ম্যাচের পঞ্চম ও শেষ দিন শুরু করেন অপরাজিত দুই ব্যাটসম্যান রস টেলর ও রাচিন রবীন্দ্র। টেলর ৩৭ রান নিয়ে খেলতে নেমে এদিন সকালেই থামেন ব্যক্তিগত ৪০ রানে। ৬ রান নিয়ে ব্যাট করতে নামা রাচিন আউট হন ১৬ রান করে। বাংলাদেশের হয়ে এবাদত হোসেন নেন ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ৬ উইকেট। আগুনে বোলিংয়ে তাসকিন দখলে নেন ৩ উইকেট। ১ উইকেট নেন স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ।

দিনের দ্বিতীয় ওভারে নিজের প্রথম ওভার করতে আসেন এবাদত। দ্বিতীয় বলেই কিউই ব্যাটসম্যান রস টেলরকে বোল্ড করলেন এই ডানহাতি পেসার। এ উইকেট নিয়ে এবাদত ক্যারিয়ারে প্রথমবার পেলেন ৫ উইকেট। সঙ্গে প্রায় ৯ বছর পর বাংলাদেশের কোনো পেসার ফাইফারের স্বাদ পেলেন। টেলরকে ফেরানোর পর এবাদত নিজের দ্বিতীয় ওভারে পান আরও একটি সাফল্য। এবার তার শিকার কাইল জেমিনসন। শরিফুল ইসলামের হাতে ক্যাচ দেয়ার আগে ৮ বল খেলে রানের খাতা খুলতে পারেননি জেমিসন। পরে দিনের পঞ্চম ও সপ্তম ওভারে তাসকিন তুলে নেন স্বাগতিকদের দুই ব্যাটসম্যানকে। তার প্রথম শিকার আগের দিনের অপরাজিত ব্যাটসম্যান রাচিন। তাকে বাধ্য করেন উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে। পরে তুলে নেন টিম সাউদির উইকেট। সরাসরি বোল্ড হয়ে সাউদি ফেরেন খালি হাতে। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ট্রেন্ট বোল্ড ৮ রান করে মিরাজের বলে আউট হলে ১৬৯ রানে থামে নিউজিল্যান্ডের ইনিংস। জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন পড়ে ৪০ রান। পরে ৮ উইকেট হাতে রেখে ইতিহাস গড়া জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য এ জয় অত্যাবশ্যকীয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। দলের যে মানসিক অবস্থা, দেশের ক্রিকেটে যে গুমোট আবহাওয়া, সবকিছুর সমাধান কেবল মিলতে পারে মাঠের ক্রিকেটেই। জয়ই এনে দিতে পারে সবকিছুর উত্তম সমাধান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর-

নিউজিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৩২৮/১০

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৪৫৮/১০

নিউজিল্যান্ড ২য় ইনিংস: ৭৩.৪ ওভারে ১৬৯/১০ (টেলর ৪০, রবীন্দ্র ১৬; তাসকিন ৩/৩৬, ইবাদত ৬/৪৬)

বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ১৬.৫ ওভারে ৪২/২ (সাদমান ৩, শান্ত ১৭, মুমিনুল ১৩*, মুশফিক ৫*)

ফল: বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী

সিরিজ: ২ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ১-০তে এগিয়ে

ম্যাচসেরা: ইবাদত হোসেন চৌধুরী