Print Date & Time : 6 July 2025 Sunday 11:59 pm

নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল: বিদেশি টার্মিনাল অপারেটর নিয়োগের বিপক্ষে জামায়াত

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) গত অর্থবছরে (২০২৩-২৪) এনসিটি থেকে আয় হয়েছে ১ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা। এ টার্মিনালে আগের বছরের তুলনায় ৭ দশমিক ৩৭ শতাংশেরও বেশি কনটেইনার হ্যাল্ডলিং হয়েছে। এ লাভজনক টার্মিনালটি পরিচালনা করছে সাইফ পাওয়ারটেক নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। যদিও সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে বিদেশি টার্মিনাল অপারেটরের মাধ্যমে এটি পরিচালনা করা। এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জানান জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের চট্টগ্রাম শাখার নেতারা।

চট্টগ্রাম বন্দরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা যায়, দেশে আমদানি-রপ্তানি ও খালি কনটেইনারের ৯৮ শতাংশই পুরোনো জিসিবি, সিসিটি, এনসিটি ও পিটিসিÑএ চার টার্মিনালে জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানো হয়। এর মধ্যে ৫৫ শতাংশ কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয় নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি)।

এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রমে আন্তর্জাতিক মান, দক্ষতা ও গতি আনার পাশাপাশি নতুন বিনিয়োগের আশায় সরকার বন্দরের তিনটি টার্মিনালে বিদেশি অপারেটর নিয়োগে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। যদিও এক বছর আগে সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ের নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার কাজ দেওয়া হয়।

এছাড়া বিদেশি অপারেটর নিয়োগের তালিকায় রয়েছে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল ও বে-টার্মিনাল প্রকল্পের টার্মিনাল ওয়ান ও টার্মিনাল টু। এর মধ্যে এনসিটি পরিচালনার জন্য দুবাইভিত্তিক বন্দর পরিচালনাকারী কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ড দায়িত্ব পেতে যাচ্ছে। এ এনসিটিতে মোট ১৮টি কি গ্যান্ট্রি ক্রেনের মধ্যে এই টার্মিনালে রয়েছে ১৪টি। এই টার্মিনালে বন্দরের বেশিরভাগ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে। বর্তমানে দেশীয় বেসরকারি টার্মিনাল অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেক পরিচালনায় আছে। যদিও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি না থাকায় আগামী জুন পর্যন্ত সাইফ পাওয়ারটেককে পরিচালনার কাজ দেয়া হয়। তবে শেষ পর্যন্ত এটিতে বিদেশি অপারেটর নিয়োগের বিষয়ে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এদিকে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের প্রাণ হিসেবে বিবেচিত ‘এনসিটি’ নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগর আমির শাহজাহান চৌধুরী।

তিনি গতকাল চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, বিগত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের কু-নজর পড়ে এই চালুকৃত ও রাজস্ব খাতের মূল চালিকাশক্তি এনসিটি টার্মিনালের ওপর।
দেশের অন্যতম অর্থ পাচারকারী ও শেখ পরিবারের প্রধান অর্থ জোগানদাতা সালমান এফ রহমান ব্যাংকসহ দেশের লাভজনক সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে সর্বশেষ এনসিটি টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়ার জন্য জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যেই পদ্ধতিতে চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে তৈরিকৃত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল দিয়ে দেয়া হয়েছে, সেই একই পদ্ধতিতে এনসিটি টার্মিনালও বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়ার গভীর চক্রান্ত চলছে। যদি ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান না হতো, তাহলে এত দিনে এই এনসিটি টার্মিনালটি বিদেশিদের হাতে চলে যেত। কিন্তু ফ্যাসিস্ট সরকার পালিয়ে গেলেও সরকারের বিভিন্ন স্থানে ঘাপটি মেরে থাকা ফ্যাসিস্ট সরকারের লোকজন, বর্তমান সরকারকে বিভ্রান্তিমূলক বিভিন্ন তথ্য দিয়ে দেশের রাজস্ব খাত শেষ করার জন্য এবং দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত হানার জন্য এনসিটি টার্মিনালকে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে হন্তান্তর করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ কনটেইনার টার্মিনাল হিসেবে এনসিটি টার্মিনাল বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছে। বর্তমানে এই এনসিটি টার্মিনাল থেকে গত অর্থবছরে (২০২৩-২৪) এনসিটি থেকে আয় হয়েছে ১ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা। সর্বোচ্চ আয়ের পাশাপাশি রেকর্ডসংখ্যক কনটেইনার হ্যাল্ডলিং হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেশি। চট্টগ্রাম বন্দরের মোট হ্যান্ডলিংয়ের ৫৫ শতাংশ এনসিটি টার্মিনালে হয়, যা দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে ভূমিকা পালন করছে। চট্টগ্রাম বন্দর এ টার্মিনালে অত্যাধুনিক ও উন্নতমানের নতুন যন্ত্রপাতি সংযুক্ত হয়েছে, যার বর্তমান বাজারমূল্য ৫ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে এই টার্মিনালে কোনো প্রকার বিনিয়োগের প্রয়োজন নেই।

এ বিষয়ে সাম্প্রতিক বন্দর ভবনের সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান বলেন, আধুনিক বিশ্বে বন্দর পরিচালনায় সরকারি ও বেসরকারি মডেল একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। এর মধ্যে সৌদি রেড সি গেটওয়েকে সংযুক্ত হয়েছে। লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনালে বিনিয়োগের জন্য ডেনিশ শিপিং জায়ান্ট এপিএম গ্রুপের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বে-টার্মিনালের কনটেইনার টার্মিনাল-১ ও ২ নির্মাণ এবং পরিচালনার জন্য যথাক্রমে পিএসএ সিঙ্গাপুর ও ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে কার্যক্রম চলছে। শুধু এটি নয়, চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে পিপিপি এর মধ্যে নতুন টার্মিনাল অপারেটরের নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। তবে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগের যত প্রস্তাবই আসুক না কেন, দেশের স্বার্থ বিবেচনা এবং প্রতিযোগিতামূলক ও অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ায় দরপত্রের মাধ্যমে বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব দেব।