নিকেলের জন্য ওপেকের মতো সংগঠন চায় ইন্দোনেশিয়া

শেয়ার বিজ ডেস্ক: বিশ্বে অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় সবচেয়ে বেশি নিকেল উৎপাদন করে ইন্দোনেশিয়া। ব্যাটারি তৈরির জন্য নিকেলের মতো ধাতু প্রয়োজন। ব্যাটারির চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নিকেলের গুরুত্ব বেড়েছে এবং ইন্দোনেশিয়ার জন্য বিশাল সুযোগ নিয়ে হাজির হয়েছে। তাই ২৭ কোটি ৬০ লাখ জনসংখ্যার দেশটি ওপেকের মতো ব্যাটারি তৈরির ধাতু নিয়ে নতুন সংগঠন করতে চাইছে। খবর: সিএনএন।

ইলেকট্রিক ভেহিকেল বা ইভির জন্য সবচেয়ে জরুরি ব্যাটারি, যার অন্যতম প্রধান ধাতু নিকেল। এ কারণে তেল রপ্তানির পরিবর্তে নিকেল উৎপাদনে ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে ইন্দোনেশিয়া। এজন্য শীর্ষ খনি মালিকদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেকের মতো নিকেল নিয়ে একটি গ্রুপ বা কার্টেল তৈরির জন্য লবিং শুরু করেছে ইন্দোনেশিয়া। তেল উৎপাদনকারী গোষ্ঠীগুলোকে সাধারণত গণমাধ্যমে ‘কার্টেল’ নামে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। নতুন কার্টেল তৈরির চেষ্টা করছে দেশটি।

তবে নতুন কার্টেলের জন্য ইন্দোনেশিয়াকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। নিকেল উৎপাদনে আরেক শীর্ষস্থানীয় দেশ কানাডা। নতুন জোটে তাদের যোগ দেয়ার সম্ভাবনা নেই বললে চলে। কেননা অপরিশোধিত তেলের (ক্রড অয়েল) বাজারের তুলনায় আলাদাভাবে নিকেলের বাজার গঠন করা হয়েছে, যেখানে জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবর্তে ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানগুলোর আধিপত্য বেশি।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান এনার্জি আসপেক্টেসের বিশ্লেষক রিচার্ড ব্রঞ্জ বলেন, আমি নিশ্চিত যে নতুন উৎপাদক কার্টেল ভালো কিছু হবে না।

তবে ইন্দোনেশিয়ার প্রচারণা এমন ইঙ্গিত দেয় যে, ক্লিন এনার্জির শক্তির রূপান্তর ভূ-রাজনীতিকে নতুন আকার দিতে পারে। নিকেল, কোবাল্ট ও লিথিয়ামের উচ্চদামের কারণে উৎপাদক দেশগুলো চাহিদামতো এসব ধাতুতে সবার সহজ সুবিধা আরোপ করতে পারে বলে আশাবাদী দেশটির উৎপাদকরা।

এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর স্ট্রাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের জ্যেষ্ঠ ফেলো জেন নাকানো বলেন, এভাবেই ভাবছে ইন্দোনেশিয়ার উৎপাদকরা। তাদের ধারণা এর মধ্য দিয়ে প্রাসঙ্গিক বৈশ্বিক এনার্জি বাজারে ও ভূরাজনীতিতে তাদের ভূমিকা বাড়বে এবং উদীয়মান এনার্জি অর্থনীতির দেশে পরিণত হতে পারবে।

প্রতিষ্ঠার ৬২ বছরে ওপেক তেলের বাজারে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে। ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠার মাত্র কয়েক বছর পর ১৯৭৩ সালে ইসরাইলকে সমর্থন করার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তেল রপ্তানি বন্ধ করে সংগঠনটি। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ সত্ত্বেও তেল উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে ওপেক।

কিন্তু বিশ্বে জীবাশ্ম জ্বালানির চাহিদা তুঙ্গে থাকলেও এর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। কেননা ক্লিন এনার্জির জন্য ধাতু ও খনিজ পদার্থের ব্যবহার বাড়ছে। আন্তর্জাতিক তেলের বাজারের অন্যতম নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) ২০২১ সালের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ক্লিন এনার্জি রূপান্তরের অর্থ জ্বালানিনির্ভরতা কমিয়ে আনা হচ্ছে। এক বিবৃতিতে আইইএ জানায়, প্রচলিত গাড়ির তুলনায় ছয়গুণ খনিজ প্রয়োজন ইলেকট্রিক ভেহিকেলে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৪০ সালের মধ্যে ইভি ও ব্যাটারি তৈরিতে শীর্ষে থাকবে নিকেলের ব্যবহার।

এ পরিবর্তন থেকে উপকৃত হবে ইন্দোনেশিয়া। ২০২০ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাণিজ্য বিরোধের কারণে নিকেল আকরিক রপ্তানি বন্ধ করে দেশটি। পরে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সহায়তায় আবার উৎপাদন ও রপ্তানি শুরু করে। মার্কেট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ সিআরইউ’র তথ্য অনুসারে, দেশটি বর্তমানে বিশ্ব বাজারে ৩৮ শতাংশ পরিশোধিত নিকেল সরবরাহ করে। এ হার বেড়েই চলেছে।

আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান আইএনজি’র কমোডিটিজ স্ট্রাটেজিস্ট ইওয়া মানথে বলেন, ইন্দোনেশিয়া আগামী বছরগুলোয় নিকেলকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বড় উৎস বিবেচনা করছে। দেশটি ইভি ব্যাটারি খাতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানোর জন্য নিকেলের উৎপাদন বাড়িয়েছে।

২০০৯ সালে ওপেক থেকে বেরিয়ে আসে ইন্দোনেশিয়া এবং ২০১৬ সালে আবার জোটে যোগ দেয়। বর্তমানে দেশটির সরকার মনে করছে নিকেল উৎপাদকদের নিয়ে নতুন কার্টেল গঠন করা হলে তারা উপকৃত হবে।