নিজস্ব প্রতিবেদক : গভীর রাতে রাষ্ট্রীয় বাসভবনে সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম। হামলায় তার মাথায় মারাত্মক জখম হয়েছে। গুরুতর অবস্থায় তাকে গতকাল রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। তার অবস্থা স্থিতিশীল হলে অস্ত্রোপচার করা হবে বলে জানা গেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে হেলিকপ্টারে করে রংপুর থেকে ঢাকায় আনার পর তাকে প্রথমে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) এবং পরে সেখান থেকে জাতীয় নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় বলে হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক বদরুল আলম জানান। তিনি বলেন, ‘তার সংজ্ঞা থাকলেও অবস্থা এখনও স্থিতিশীল নয়। পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলে মাথায় অস্ত্রোপচার করা হতে পারে।’
জানা যায়, বুধবার রাত ৩টায় উপজেলা পরিষদ ক্যাম্পাসে ইউএনওর বাসভবনের ভেন্টিলেটর দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর আলীর ওপর হামলা চালানো হয় বলে ঘোড়াঘাট থানার ওসি আমিরুল ইসলাম জানান।
আহত ওয়াহিদা খানমকে তাৎক্ষণিকভাবে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। দুপুরে রংপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে তাকে ঢাকায় পাঠানো হয় বলে রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার আবদুল ওয়হাব জানান।
ওয়াহিদা খানমের বাবা ওমর আলীকে ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। নওগাঁ থেকে তিনি মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। ওয়াহিদার স্বামী মেজবাহুল হোসেন রংপুরের পীরগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
ওমর আলী পুলিশকে জানান, রাতে গোসলখানার ভেন্টিলেটর ভেঙে কেউ একজন বাড়িতে ঢোকে। ওয়াহিদা খানম টের পেয়ে এগিয়ে গেলে তার মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে। এ সময় ওমর আলী এগিয়ে গেলে তাকেও হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে হামলাকারী পালিয়ে যায়। পরে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ওসি জানান, ‘ওই বাড়ি থেকে কোনো কিছু খোয়া যায়নি। এটি ডাকাতির চেষ্টা, না আক্রোশ থেকে কেউ হামলা করেছে, সেটা পুলিশ খতিয়ে দেখছে।’ খবর পেয়ে দিনাজপুরের ডিসি মাহমুদুল আলম ও পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থলে যান।
এদিকে ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার ঘটনা গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে জানিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলছেন, কারা এ হামলা চালিয়েছে, তা খুব দ্রুত জানা যাবে। ইউএনওর বাসভবনে সিসি ক্যামেরা রয়েছে বলে জানিয়ে গতকাল মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘হামলাকারীর মুখে মুখোশ ছিল এবং সেগুলো দেখে পর্যালোচনা চলছে। ওখানে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন দল কাজ করছে।’ তিনি বলেন, ‘পুলিশের চৌকস একটি টিম কাজ করছে। তারা আশাবাদী যে খুব দ্রুত আমাদের জানাতে পারবেন কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা অপেক্ষা করছি।’
আহত ইউএনওর চিকিৎসা প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ বলেন, ‘ওয়াদিহা খানমের সব থেকে ভালো চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতের চেষ্টা করছি। এক্ষেত্রে নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল সব থেকে ভালো। যা যা করা প্রয়োজন আমাদের পক্ষ থেকে আমরা সেটি করছি।’ ওয়াহিদা মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন বলে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘শত্রুতাবশত হামলা করলে ওয়াহিদা একা আক্রান্ত হতেন, কিন্তু তার বাবাও আক্রান্ত হয়েছেন। ডাকাতির উদ্দেশ্যে বা এরকম কিছুও হতে পারে। আমরা অপেক্ষা করছি, অত্যন্ত গুরুত্বসহ বিষয়টি দেখছি। অতি অল্প সময়ের মধ্যে আশা করি জটটা খুলবে এবং আমরা অত্যন্ত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
ইউএনওর ওপর হামলার ঘটনাকে অত্যন্ত দুঃখজনক উল্লেখ করে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্বৃত্তরা কারা এটা জানতে একটু অপেক্ষা করতে হবে। আমি ডিসিকে জিজ্ঞেস করেছি শত্রুতাবশত এ রকম কিছু হয়েছিল কি না? তিনি বলেছেন, এ ধরনের কোনো কিছু ইউএনও তাকে অবহিত করেননি। পারিবাহিক শত্রুতাও মনে হচ্ছে না, তবে তদন্তে সব বেরিয়ে আসবে।’