নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে

শেয়ার বিজ ডেস্ক:যুক্তরাজ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। এ জন্য জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। গত মাসে খাদ্য ও পানির দাম চার দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে। এক বছর আগের তুলনায় কেন সুপারমার্কেটের সব পণ্যের দাম বেড়েছে, তা জানার চেষ্টা করেছে দ্য গার্ডিয়ান।

এক বছরের কম সময়ের মধ্যে পাস্তার দাম বেড়েছে। এ জন্য পাস্তা তৈরির মূল উপাদান গমের (ডুরাম হুইট) দাম বেড়েছে। বিশ্বে এ জাতীয় গমের তিন ভাগের দুই ভাগ জোগানদাতা কানাডা। গত বছর গরম ও খরার কারণে দেশটি আশানুরূপ গম উৎপন্ন করতে পারেনি। অন্য দেশগুলোও প্রয়োজনের তুলনায় কম গম উৎপন্ন করেছে। এ কারণে ১৩ বছরের মধ্যে গত বছর এর দাম বেড়ে যায়। এ জন্য ২০২০ সালের শেষের দিকে ৫০০ গ্রাম ওজনের একটি পাস্তার দাম ৫৫ পাউন্ড থেকে বেড়ে বর্তমানে ৭০ পাউন্ডে বিক্রি হচ্ছে।

২০২০ সালের জানুয়ারির পর খামার পর্যায়ে দুধের দাম বেড়েছে ২৪ শতাংশ। কাইট কনসাল্টিংয়ের ম্যানেজিং পার্টনার জন অ্যালেন বলেন, অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে দুধের দাম। ২০০৭-০৮ সালের পর এটিই সর্বোচ্চ দাম বলে জানান তিনি। গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি বেড়েছে শ্রমিক খরচ ও মেশিনারি পণ্যের দাম। এসব কারণে ভোক্তাদের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। আসছে বসন্তে আরও বাড়তে পারে এর দাম। কিছুটা কমলেও ২০ শতাংশের নিচে নামবে না মূল্যস্ফীতি।

সব ধরনের সসের দাম বেড়েছে। অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড হর্টিকালচার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের অর্থনৈতিক কৌশলবিদ সারাহ বেকার বলেন, মাংসের খামারিরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। উপরন্তু শ্রমিকদের পেছনে তাদের বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। তাছাড়া কভিড-১৯ মহামারিতে পরিবহন খাতে ব্যয় ও জ্বালানি ব্যয় বেড়েছে। কসাইখানায় দক্ষ কর্মীর অভার রয়েছে, ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের পর তারা যুক্তরাজ্য ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। একই কারণে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে। এর চাহিদাও বেড়েছে। গো-খাদ্য, সার, শ্রমিক খরচ, পরিবহন, দক্ষ কর্মী, কভিড প্রভৃতির কারণে সব ধরনের মাংসের দাম বেড়েছে।

রোবোব্যাংকের এক জরিপে দেখা গেছে, গত এক বছরে অ্যারাবিকা কফির দাম রোবাস্তা কফির তুলনায় ৭০ শতাংশ বেড়েছে। ব্রাজিলে দীর্ঘমেয়াদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশেষ করে খরা ও তুষারপাতের কারণে দুই দশকের মধ্যে গত বছর কফির উৎপাদন কম হয়েছে। বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থার ধস নামার কারণে কফি সরবরাহে সমস্যা দেখা দেয়। গত বছর শিপিং কনটেইনারের দাম বাড়ে ২৪০ শতাংশ। নামকরা ব্র্যান্ডগুলো এসব সমস্যা-সমাধানে নানা উদ্যোগ নিলেও তা ভেস্তে যায়। তবে অন্য পণ্যের তুলনায় কফির দাম কমই বেড়েছেÑ চার থেকে ছয় শতাংশ।

ক্রিস্পির ভোক্তাদের জন্য দুঃসময়ের ছিল গত বছরটি। যেমন এ সময় প্রিঙ্গেলসের দাম বেড়েছে দশ দশমিক তিন শতাংশ। দ্য গ্রোসারের তথ্যমতে, গত সেপ্টেম্বরে সেনসেশন্স ও কুয়েভার্সের দাম বাড়ে যথাক্রমে আট দশমিক আট শতাংশ ও আট দশমিক পাঁচ শতাংশ। চলতি বছর ওয়াকারের দাম বেড়েছে ছয় শতাংশ। তেল ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধিকে এজন্য দায়ী করা হয়েছে। আলুর দামও বেড়েছে এ সময়। পাশাপাশি শ্রমিক খরচ, সারের দাম বেড়েছে। এর সঙ্গে ব্রেক্সিটও জড়িত রয়েছে।

মাখনজাতীয় পণ্যের দাম বেড়েছে ২৭ শতাংশ। এক কেজি টেসকো মাখনের দাম গত বছর জানুয়ারিতে দুই পাউন্ড ১০ পেন্স থেকে বেড়ে চলতি বছর দুই পাউন্ড ৬৫ পেন্স হয়েছে। রাই সরিষা ও পাম অয়েলের অভাব এ পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। কানাডায় বৈরী আবহাওয়ার কারণে সরিষার উৎপাদন ব্যাহত হয়। আর পাম অয়েলের সবচেয়ে বড় জোগানদাতা মালয়েশিয়া মহামারির কারণে বিদেশি কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দেয়। এতে তলানিতে নেমে আসে পাম অয়েলের উৎপাদন। এ ছাড়া অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়ে এ সময়। একই সময় ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে ১৩ শতাংশ।