রমজানে সরবরাহ বৃদ্ধি

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে এলসি মার্জিনে ছাড়

রোহান রাজিব: মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন ঠেকাতে পণ্য আমদানিতে রাশ টানার জন্য ঋণপত্র খুলতে হলে ৭৫ শতাংশ নগদ মার্জিন নির্দেশনা দেয়া হয়। তবে রমজানে যেসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যতে এলসি মার্জিন রয়েছে, তা শূন্য মার্জিনে বা ৭৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র এ তথ্য জানায়।

সূত্র জানায়, রমজানের আগে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে ও সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য শূন্য মার্জিনে বা ৭৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে এলসি খোলার সুযোগ দেয়া হবে। এলসি কমিশনও সর্বনিন্ম পর্যায়ে রাখা হবে। ভোজ্যতেল, ছোলা, ডাল,মোটর, পেঁয়াজ, মসলা, খেজুর, ফলমূল, চিনিসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য আমদানিতে এমন নির্দেশনা দেয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, রমজানে যেসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ব্যবহার হয়, সেসব পণ্যেতে যদি এলসি মার্জিন থাকে তা উঠিয়ে দেয়া হবে।

সাধারণভাবে পণ্য দেশের আসার পর বিল পরিশোধ করতে হয়। তবে আমদানি ঋণপত্র খোলার সময় গ্রাহককে ব্যাংকে পণ্য মূল্যের একটি অংশ জমা দিতে হয়। যাকে এলসি মার্জিন বলে। এই মার্জিনের বিষয়টি নির্ধারিত হয় ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে। ব্যাংকের সঙ্গে গ্রাহকের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ভালো হলে ন্যূনতম ১০ মার্জিনেও এলসি খোলা হয়। আবার গ্রাহক যদি ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচিত হন, সেক্ষেত্রে শতভাগ মার্জিন নিয়ে এলসি খোলা হয়।

তবে কভিডের দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব এবং বহির্বিশ্বে সাম্প্রতিক যুদ্ধাবস্থা প্রলম্বিত হওয়ার কারণে চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে দেশের মুদ্রা ও ঋণ ব্যবস্থাপনা অধিকতর সুসংহত রাখার লক্ষ্যে আমদানি ঋণপত্র স্থাপনের ক্ষেত্রে নগদ মার্জিন হার নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

গত জুলাই মাসে বিলাসবহুল পণ্য আমদানির ঋণপত্র খুলতে হলে ১০০ শতাংশ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া অন্যান্য এলসির ক্ষেত্রে মার্জিন হার ৭৫ শতাংশ নির্ধারণ করা। একই সঙ্গে আমদানির এলসির নগদ মার্জিন গ্রাহকের নিজের অর্থ থেকে পরিশোধ করতে হবে; এজন্য কোনো ধরনের ঋণ ব্যাংক পাবে না। তবে শিশুখাদ্য, জ্বালানিসহ অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, স্থানীয় ও রপ্তানিমুখী শিল্প এবং কৃষি খাত সংশ্লিষ্ট পণ্য আমদানির ঋণপত্র এ নির্দেশনার বাইরে রাখ হয়।

ওই নির্দেশনায় বলা হয়, মোটরকার (সেডানকার, এসইউভি, এমপিভি ইত্যাদি), ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিকস হোম অ্যাপ্লায়েন্স, স্বর্ণ ও স্বর্ণালঙ্কার, মূল্যবান ধাতু ও মুক্তা, তৈরি পোশাক,  চামড়াজাত পণ্য, পাটজাত পণ্য, প্রসাধনী, আসবাবপত্র ও সাজসজ্জা সামগ্রী, ফল ও ফুল, নন-সিরিয়াল ফুড যেমন অ-শস্য খাদ্যপণ্য, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যদ্রব্য ও পানীয়; যেমন টিনজাত খাদ্য, চকোলেট, বিস্কিট, জুস, সফট ড্রিংকস ইত্যাদি, অ্যালকোহল জাতীয় পানীয়, তামাক, তামাকজাত বা এর বিকল্প পণ্যসহ অন্যান্য বিলাসজাতীয় পণ্যের আমদানি ঋণপত্র জন্য ১০০ শতাংশ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করতে হবে। অন্যদিকে অত্যাবশ্যকীয় নয় এমন পণ্যের ঋণপত্রের জন্য ৭৫ শতাংশ মার্জিন রাখতে হবে।

তবে শিশুখাদ্য, অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য, জ্বালানি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর স্বীকৃত জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও সরঞ্জামসহ চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে ব্যবহƒত দ্রব্যাদি, উৎপাদনমুখী স্থানীয় শিল্প ও রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য সরাসরি আমদানি করা মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল, কৃষি খাত সংশ্লিষ্ট পণ্য এবং সরকারি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পে ব্যবহারের জন্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ওপর কোনো মার্জিন আরোপ করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আরও বলা হয়, ১০০ শতাংশ ও ৭৫ শতাংশ মার্জিনে আমদানি করা পণ্যের ঋণপত্র স্থাপনের বিপরীতে প্রয়োজনীয় মার্জিন গ্রাহকের নিজস্ব উৎস থেকে দিতে হবে। নগদ মার্জিনের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক আমদানিকারককে কোনো ঋণ দিতে পারবে না।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, প্রতি বছরই রমজানের দুই-তিন মাস আগে শূন্য মার্জিনে এলসি খোলার নির্দেশ দেয়া হয়। এবারও এমনটাই করা হবে। তবে শূন্য মার্জিনে না হলেও ৭৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে আনা হবে। কারণ এসব পণ্য আসতে সময় লাগে। তাই আগে থেকে এ সুযোগ দেয়া হয়। যাতে ঠিকভাবে দেশে এসব পণ্য আসতে পারে।

এলসিতে কড়াকড়ি আরোপ করার পর ঋণপত্র খোলা কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে নতুন এলসি খোলা হয়েছে ২ হাজার ৮২৮ কোটি ডলার বা ২৮.২৮ বিলিয়ন ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৩৭১ কোটি ডলার বা ৩৩.৭১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ঋণপত্র খোলা কমেছে ৫৪৩ কোটি ডলার বা ১৬ দশমিক ১০ শতাংশ।

তবে নতুন এলসি খোলা কমলেও চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত এলসি নিষ্পত্তি বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ৩ হাজার ৩৫৪ কোটি ডলার বা ৩৩.৫৪ বিলিয়ন ডলার এলসি নিষ্পত্তি করা হয়। গত অর্থবছরের একই সময় ২ হাজার ৭১৫ কোটি ডলার বা ২৭.১৫ বিলিয়ন ডলার এলসি নিষ্পত্তি হয়েছিল। সে হিসাবে এলসি নিষ্পত্তি বেড়েছে ২৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ।