সরকার-নির্ধারিত মূল্যের দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে আলু-পেঁয়াজ। দেশি পেঁয়াজ আগেই শতক পার করেছিল, এবার শতক ছাড়িয়েছে আমদানি করা পেঁয়াজের দামও। গতকাল একটি জাতীয় দৈনিকের একটি প্রতিবেদন যেন সরকারের অসহায়ত্ব কিংবা উদাসীনতারই দৃষ্টান্ত। গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনায় প্রতিটি ডিমের দাম ১২ টাকা, প্রতি কেজি আলু ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা এবং ৬৫ টাকা দরে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রির নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু সরকারের এ নির্দেশনা কেউই মানছে না। উল্টো দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে এ পণ্যগুলো।
কিন্তু সরকারি সংস্থা মাঠে নামিয়েও নির্ধারিত সেই দাম বাজারে কার্যকর করা যায়নি। উল্টো দেড় মাস পরে দাম এখন আরও বেড়েছে। বেঁধে দেয়া দামের দ্বিগুণ মূল্যে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ ও আলু। ডিমের দাম দ্বিগুণ হয়নি, তবে দাম বেড়েছে। আলু-পেঁয়াজের দাম অতিরিক্ত বেড়েছে। ক্রেতাদের কাছে এর জন্য বিক্রেতাদের জবাবদিহি করতে হচ্ছে। ঝামেলা এড়াতে অনেকেই আলু-পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। বাজার স্বাভাবিক হয়ে এলে এসব পণ্য বিক্রি করব, এর আগে আর নয়Ñএমনই বলেছেন কয়েকজন খুচরা দোকানি। কিন্তু বাজার কি আপনাআপনি স্বাভাবিক হবে! কখনোই তা নয়। যেখানে আমাদের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ী কোনো ছুতা পেলেই দাম বাড়িয়ে দেন, সেখানে জবাবদিহিহীনতার সুযোগ তারা কি নেবেন না! যিনি সুযোগ পেয়েও জনস্বার্থ ও নৈতিকতাবিরোধী কাজ করেন না, তিনিই প্রকৃত সজ্জন। এমন মানুষ কি এখন আদৌ আছেন।
আগামী ডিসেম্বরে দেশে উৎপাদিত নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসবে। তখন দাম এমনিতেই কমবে। কিন্তু তার আগে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে সীমিত ও নিম্ন আয়ের ভোক্তাসাধারণের দুর্ভোগ কমাতে সরকারকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। আলু-পেঁয়াজ-ডিম নয়, সবজিসহ সব পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। উৎসস্থলে যে সবজির দাম ১০-১৫ টাকা, সেটি রাজধানীতে বিক্রি হয় ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। সরবরাহকারী ও পাইকারি বিক্রেতাদের দাবি, পণ্য আনার পথে চাঁদাবাজি হওয়ায় বেশি দামে বিক্রি করতে হয় তাদের। না হলে অর্ধেক দামে বিক্রি করা যেত। কারা পথে পথে চাঁদাবাজি করে, তা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা জানেন, কিন্তু চাঁদাবাজি বন্ধ হচ্ছে না। কেউ যদি দাবি করেন তারা দায়িত্বপরায়ণ, কোনো চাঁদাবাজি হচ্ছে না, তাহলে তাদের বলতে হবেÑকেন বাজার নিয়ন্ত্রণে নেই। এ দায়িত্ব কে নেবে! একবার বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, একটি সার্বক্ষণিক কল সেন্টার করে দেবেন। তাতে চাঁদাবাজির তথ্য জানালে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু কথাই সার!
সরবরাহের প্রতিটি স্তরেও নজরদারি করে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে। উৎপাদক, সরবরাহকারী, পাইকার ও খুচরা বিক্রেতার যেন বাইরে কোনো মধ্যস্বত্বভোগী না থাকে। স্তরসংখ্যা বাড়লে পণ্যের দামও বাড়বে। প্রতিটি স্তরেই চাঁদাবাজি হয়। এটি বন্ধ করা গেলে বেশি টাকা দিয়ে পণ্য কিনতে হবে না।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সরকারের অন্য সংস্থা তদারকি করতে পারে। পণ্যের দাম যাচাইয়ে নজরদারি এবং অভিযান পরিচালনা করে হলেও পণ্যের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে আনতে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেই প্রত্যাশা।