Print Date & Time : 10 September 2025 Wednesday 1:17 am

নিন্মমানের ওষুধ তৈরি ও বিপণন বন্ধ হোক

ওষুধশিল্পে আমাদের সাফল্য বিস্ময়কর। কভিড মহামারির প্রভাবে দেশের বেশিরভাগ শিল্পের আয় ব্যাপকভাবে কমেছে। বিপরীত চিত্র ছিল ওষুধশিল্প খাতে। প্রকৃত ও সরকারিভাবে তথ্য প্রকাশ করা না হলেও এ খাতের উদ্যোক্তাদের তথ্যমতে, কভিডকালে দেশের ওষুধের বাজারে ঈর্ষণীয় প্রবৃদ্ধি হয়েছে। প্রতি বছর দেশীয় চাহিদার ৯৮ শতাংশ পূরণ করে ওষুধ রপ্তানি হয় বিশ্বের প্রায় ১৬০ দেশে। রপ্তানি-আয় প্রতি বছরই বাড়ছে, জীবনরক্ষাকারী ওষুধও তৈরি হচ্ছে দেশে।

কভিডকালে স্বাস্থ্যসেবা খাতের কিছু অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি দেশে-বিদেশে আমাদের সুনাম ক্ষুণœ করলেও ওষুধের সেরা মান নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেনি কেউ। আমাদের কতকগুলো ওষুধ ‘নিরাপদ ও কার্যকর’ বলে স্বীকৃতি ও ব্যবহারে অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ), যুক্তরাজ্যের  মেডিসিন অ্যান্ড হেলথকেয়ার প্রোডাক্টস রেগুলেটরি এজেন্সি (এমএইচআরএ), ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিস (জিএমপি), গুডস থেরাপিউটিক গুডস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন-সহ (টিজিএ অস্ট্রেলিয়া) উন্নত দেশগুলোর ওষুধ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

এত সাফল্য ও অর্জনের মধ্যে গতকাল শেয়ার বিজের ‘ভেজাল প্যারাসিটামল: মৃতদের পরিবারকে ১৫ লাখ টাকা করে দিতে হবে ঔষধ প্রশাসনকে’ শীর্ষক প্রতিবেদন আমাদের হতাশ করে। প্রতিবেদেনে জানা যায়, ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ সেবনের দুই ঘটনায় নিহত ১০৪ শিশুর প্রত্যেক পরিবারকে ১৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ১৯৯১ সালে অ্যাডফ্লেম ফার্মাসিউটিক্যালসের প্যারাসিটামল সিরাপ সেবন করে ৭৬ শিশু এবং রিড ফার্মার প্যারাসিটামল সিরাপ সেবন করে ২০০৯ সালের জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত দেশে ২৮ শিশু মারা যাওয়ার অভিযাগ ওঠে। এ দুই ঘটনায় ক্ষতিপূরণ দেয়া ছাড়াও রায়ে বলা হয়, ভেজাল ওষুধের কারণে শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় ঔষধ প্রশাসন দায় এড়াতে পারে না। ক্ষতিপূরণের অর্থ সংশ্লিষ্ট কোম্পানি ও ব্যক্তিদের কাছ থেকে আদায় করতে অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

১০৪ শিশুর মৃত্যুতে শুধু ‘প্যারাসিটামল’ সিরাপের নি¤œমান প্রমাণিত হয়েছে। বর্তমানে সব ওষুধের মান নিয়ে আমাদের অবশ্যই সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। দেশে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া ওষুধের বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয় না। এটি ভালো উদ্যোগ। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, ওষুধ তৈরি, বাজারজাত, বিপণন প্রতিটি পর্যায়েই সংস্থাটি তদারকি করবে। মানের প্রশ্নে এতটুকু ছাড় যেন না দেয়া হয়। 

সরকার জনসাধারণের জন্য সহজে ও ক্রয়সাধ্য মূল্যে নিরাপদ, কার্যকর ও মানসম্পন্ন ওষুধ নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় ওষুধনীতি প্রণয়নসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে। ওষুধ আর ১০টি নিত্যপণ্যের মতো নয়। একটু অসতর্কতায় জীবনরক্ষাকারী ওষুধও প্রাণঘাতী হতে পারে। আজকাল পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানেও কিছু ওষুধ বিক্রি করা হয়। বৈধ পেশাগত লাইসেন্স ব্যতীত কোনো ব্যক্তিকে ওষুধ মজুত, বিতরণ বা বিক্রির জন্য অনুমতি দেয়া উচিত নয়। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে অনুমোদিত খুচরা বিক্রেতাদের তালিকা নিয়মিত হালনাগাদ করতে হবে। মানহীন ওষুধে বেশি কমিশন পায় বলে একশ্রেণির ফার্মেসি রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রই পাল্টে ফেলে। তাই দেশের কোথাও যেন ভেজাল, মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিন্মমানের ওষুধ তৈরি ও বিপণন হতে না পারে, সে লক্ষ্যে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিতে হবে।