Print Date & Time : 14 September 2025 Sunday 12:09 pm

নিন্মমুখী চাল ডাল তেল পেঁয়াজের দাম

সাইদুর রহমান, চট্টগ্রাম: ডলারের দাম কমে যাওয়া ও চাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম নি¤œমুখী, তারপরও বাজারে ক্রেতা নেই। দাম কমেছে তেল, চিনি ও মসলার বাজারেও।

গত সোমবার দেশের বৃহৎ ভোগ্য পণ্যের পাইকারী বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাজার ক্রেতাশূন্য। অন্য সময় এসব বাজারে পণ্য বোঝাই ট্রাক ও মানুষের ভিড়ে রাস্তায় হাঁটা যেত না। কিন্তু সোমবার তেমন চিত্র দেখা যায়নি। দুই বাজারেই রাস্তা ফাঁকা দেখা যায়। একই সঙ্গে বড় বড় মোকামগুলোতে খুব বেশি ক্রেতা দেখা যায়নি। ভোজ্যতেলের দাম কমার ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) ব্যবসায়ীরাও কেনাবেচা তেমন করছে না।

চালের পাইকারী বাজার চাক্তাইয়ে গিয়ে দেখা যায়, বড় বড় মোকামের চাল ব্যবসায়ীরা অলস সময় পার করছেন। এ সময় নতুন চাক্তাইয়ের চালপট্টির মেসার্স খাদ্য ভান্ডারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সব ধরনের চালের দাম প্রতি ৫০ কেজির বস্তায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কমেছে। সেদ্ধ চিকন চাল প্রতি বস্তা প্রকারভেদে তিন হাজার থেকে তিন হাজার ৫৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোটা চালের ৫০ কেজির বস্তা প্রকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৪৫০ থেকে দুই হাজার ৬৫০ টাকায়। আর আতপ চাল বিক্রি হচ্ছে দুই হাজর ৪৫০ টাকায়। তারা জানান, কম শুল্কে আমদানির চাল বাজারে আসতে আরও সময় লাগবে। কিন্তু দাম কমার আশায় খুচরা ব্যবসায়ীরা বাজারে আসছেন না। ফলে ক্রেতা শূন্য থাকার দাম কমিয়েও ক্রেতা পাচ্ছে না আড়তদাররা।

জানা যায়, চালের দামে লাগাম টানতে আমদানির ক্ষেত্রে দ্বিতীয় দফায় শুল্ক কমিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গত রোববার এনবিআরের এক প্রজ্ঞাপনে চালের ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের কথা জানানো হয়। পাশাপাশি চাল আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে পাঁচ শতাংশ করা হয়েছে। এর আগে গত ২২ জুন এক আদেশে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার এবং নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছিল। এবার নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করে ওই আদেশ বাতিল করেছে এনবিআর। ওই আদেশের চেয়ে এবার বাড়তি সুবিধা হিসেবে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক কমানো হয়েছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেদ্ধ চাল (বয়েলড রাইস) ও আতপ চাল আমদানিতে এ সুবিধা পাবেন ব্যবসায়ীরা।

এদিকে খাতুনগঞ্জের ভোগ্যপণ্যের আড়তগুলো ঘুরে দেখা যায়, তেল, চিনি, মসলা, ডাল, আদা, রসুন ও পেঁয়াজসহ সব ধরনের পণ্যে দাম কমেছে। মেসার্স মেহের ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. আলী তালুকদার জানান, ছোট পেঁয়াজ ২৪ টাকা ও বড় পেঁয়াজ ৩২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে; যা গত সপ্তাহে ৩৮ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। আর দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা ও চীনা রসুন বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকায়। এছাড়া চীনা আদা বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থকে ৯০ টাকায়। আর মিয়ানমারের আদা বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা।

অন্যদিকে সব ধরনের ডালের দামও গত সপ্তাহের তুলনায় দুই থেকে পাঁচ টাকা কমেছে। সোমবার খাতুনগঞ্জে মোটা মসুর ডাল বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকায়; যা গত সপ্তাহে ৯৪ টাকা ছিল এবং চিকন মসুর ডাল বিক্রি হয়েছে ১২২ টাকায়; যা গত সপ্তাহে ১২৫ টাকা ছিল। এছাড়া, মোটর ডাল ৬২ টাকা, ছোলার ডাল ৬৮ টাকা, ছোলা ৬২ টাকা আর মোটা মুগ ডাল ৮২ টাকা এবং চিকন মুগ ডাল ১০৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব ডালের দাম গত সপ্তাহে কেজিতে তিন থেকে চার টাকা বেশি ছিল।

অন্যদিকে মসলার বাজারও নি¤œমুখী দেখা গেছে, সোমবার খাতুনগঞ্জ বাজার এলাচ বিক্রি হয়েছে প্রকারভেদে এক হাজার ২০০ থেকে দুই হাজার টাকায়। তবে এসব এলাচের মধ্যে মধ্যম মানের এলাচের দাম কেজিতে ১০০ টাকা বেড়েছে; যা গত সপ্তাহে এক হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এছাড়া জিরা ৪৪০ থেকে ৪৫০ টাকা, লবঙ্গ এক হাজার ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা, দারুচিনি ৩১৫ টাকা, শুকনো মরিচ ৪৪০ টাকা, হলুদ ১২০ টাকা এবং কিসমিস ৩৯০ টাকায় বিক্রয় হতে দেখা যায়।

তেল ও চিনির বাজারও নি¤œমুখী ছিল। খাতুনগঞ্জের চিনি ব্যবসায়ী মেসার্স এস এফ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. ফজলুল কাদের শেয়ার বিজকে জানান, চিনির দাম খুব বেশি ওঠানামা করেনি। গতকাল খাতুনগঞ্জে চিনির মণ বিক্রয় হয়েছে তিন হাজার ৫০ টাকায়; যার প্রতি কেজির দাম দাঁড়ায় প্রায় ৮২ টাকা। এছাড়া তেলের দামও কমেছে। খাতুনগঞ্জের ডিও ব্যবসায়ী আকিব গনি জানান, মণপ্রতি এস আলম সয়াবিন বিক্রয় হয় ছয় হাজার ১৫০ টাকায় এবং পাম তেল পাঁচ হাজার ৮০ টাকায়। আর সিটি গ্রুপের সয়াবিন ছয় হাজার ৫০০ টাকা এবং পাম পাঁচ হাজার ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়। গত সপ্তাহে এসব তেলের দাম আরও বেশি ছিল। বিশ্ববাজার ও ডলারের দাম কমায় তেলের দাম কমেছে।