শেয়ার বিজ : নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জমার শেষ দিন ছিল মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর)। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবং প্রধান বিরোধী দল বিএনপি প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ১৫ দিন থেকে এক মাস সময় চেয়েছে।
শর্ত অনুযায়ী ছাত্র, পেশাজীবী ও প্রবাসী শাখার সঙ্গে কাগজে-কলমে মূল দলের কোনো সম্পর্ক রাখেনি রাজনৈতিক দলগুলো সঙ্গে। কিন্তু ছাত্র সংগঠনের কমিটি অনুমোদন করছেন দলের প্রধান, প্রবাসী শাখা বহাল রয়েছে, শিক্ষকসহ পেশাজীবী সংগঠনগুলোও চলছে মূল দলের নির্দেশনায়।
এ অবস্থায় দলগুলো গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের নিবন্ধন বিধিমালার শর্ত পালন করছে কি না, তার তদারকিতে নামে ইসি।
নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর একটি মোর্চা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) পরিচালক আবদুল আলীম বলেন, আরপিও মেনে দলগুলো গঠনতন্ত্র সংশোধন করেছে এই বলে যে, ছাত্র, শিক্ষক, প্রবাসী শাখাসহ পেশাজীবী সহযোগী সংগঠন থাকবে না। কিন্তু প্রধান সব দলেই আমরা দেখছি মূল দলগুলোর সঙ্গে সিদ্ধান্তেই চলছে। স্বাধীনভাবে বা স্বতন্ত্রভাবে চলার কথা থাকলেও সহযোগী সংগঠন হিসাবেই রয়েছে।
তিনি বলেন, প্রবাসী শাখাগুলো বন্ধ রাখার কথা। কিন্তু অধিকাংশ দলেই মূল দলের শাখা বহাল রয়েছে। দলীয় প্রধানের অনুমোদন বা অবহিত করেই ছাত্র সংগঠন চলছে। বিশেষ করে পুরনো দলগুলোই এ শর্ত প্রতিপালন নিয়ে বিপাকে থাকবে। নতুন দলগুলোকে তাদের নির্বাচিত কমিটি, নারী প্রতিনিধিত্ব আর জেলা-উপজেলার কমিটি-অফিস ঠিক রাখতে দৌড়ঝাঁপে করতে হয়। এখন কমিশনের পক্ষ থেকে দলগুলোকে শর্ত প্রতিপালন করার জন্যে সহায়তা করতে হবে।
২০০৮ সালে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন চালুর পর এ পর্যন্ত আরপিও অনুসরণ করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে দলগুলোর তেমন বড় কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। এটিএম শামসুল হুদা ও কাজী রকিব উদ্দিন কমিশন বরাবরই বলে এসেছে, অভিযোগ পেলেই তা খতিয়ে দেখা হবে।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুজন নেতা জানান, অঙ্গ সংগঠনসহ নিবন্ধন শর্ত পালন করা হচ্ছে কি না, সে সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে অন্তত এক মাস সময় চেয়ে ইসি সচিবালয়ে চিঠি দেওয়া দিয়েছেন তারা।
আর ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, আওয়ামী লীগ, বিএনপি ছাড়াও জাতীয় পার্টিসহ বেশ কয়েকটি দল প্রতিবেদন জমা দিতে সময় চেয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা ১৫ দিন সময় দিয়েছি। ইতোমধ্যে কিছু দল প্রতিবেদন জমা দিয়েছে; অর্ধেকের বেশি দল জমা দেয়নি। যারা আবেদন করেছে তাদের ফের সময় দেব; যারা আবেদনই করেনি তাদের বিষয়ে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।
নির্দিষ্ট কোনো দলের নাম উল্লেখ না করে সচিব বলেন, সব কিছু এক দিনেই সম্ভব হবে না, সময়ও দিতে হবে। তবে যারা শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থ হবে তাদের কারণ দর্শাও নোটিস দেওয়া হবে।
নিবন্ধিত ৪০টি দলের মধ্যে ১৮টি দল নিবন্ধনের শর্ত প্রতিপালনের বিষয়ে ইসিকে তথ্য দিয়েছে।
জাতীয় পার্টি-জেপি জানিয়েছে, তাদের সর্বস্তরে নির্বাচিত কমিটি রয়েছে। ২০১৬ সালের এপ্রিলে কাউন্সিলের মাধ্যমে তিন বছরের নির্বাচিত কমিটি করা হয়েছে। ২০২০ সালে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধি অর্জনের প্রচেষ্টা থাকবে। দলের ছাত্র-শিক্ষক, শ্রমিক বা অন্য কোনো পেশাজীবী সংগঠন নেই এবং তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতেই দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, জাকের পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), ইসলামী ঐক্যজোট, জাতীয় পার্টি (জেপি), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিটি), গণফ্রন্ট, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ), খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ও বিকল্পধারা বাংলাদেশসহ ১৮টি দল গত মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। বিডিনিউজ।