প্লানেট কনস্ট্রাকশন

নিয়মবহির্ভূতভাবে স্থান পরিবর্তন করায় মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতিষ্ঠান বিআইএন সনদে যে ঠিকানা ব্যবহার করেছে, সেই ঠিকানায় প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব নেই। মূসক নিবন্ধন নিতে ঠিকানা ব্যবহার করেছে, সেই ঠিকানায়ও প্রতিষ্ঠান নেই। তবে প্রতিষ্ঠানের দাবি, মূসক নিবন্ধনের ঠিকানা থেকে নতুন ঠিকানায় অফিস স্থানান্তর করা হয়েছে। অফিসের স্থান বা ঠিকানা পরিবর্তনে ভ্যাট অফিসকে অবহিত করা হয়নি। ফলে ভ্যাট কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানায় গিয়ে প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব খুঁজে পাননি। পরে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে, তারা স্থান পরিবর্তন করেছে। নিয়মবহির্ভূতভাবে স্থান পরিবর্তন করায় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেট। প্লানেট কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এই মামলা করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করেছে চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেটের আওতাধীন আগ্রাবাদ ভ্যাট বিভাগ। চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

অন্যদিকে, ১০০-১২০ বর্গফুটের অফিস। দেয়ালে সাঁটানো পোস্টারে প্রতিষ্ঠানের সাইন বোর্ড। নেই প্লান্ট, মেশিনারিজ বা কনস্ট্রাকশন। নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠান নিজেকে উৎপাদনকারী দাবি করে। অথচ আমদানি করা কাঁচামাল (স্ট্রিম কোল, লাইম স্টোন, ব্রোকেন বা ক্রাশ স্টোন) কোনো ধরনের প্রক্রিয়াকরণ ছাড়াই সরাসরি বিক্রি করে দেয়। আবার আমদানি করা কাঁচামালের উৎপাদনকারী হিসেবে নিয়েছে সিপিসি (কাস্টমস প্রসিকিউর কোড) বা রেয়াতি সুবিধা। অথচ রেয়াতি সুবিধা পেতে হলে শর্ত হলো প্রতিষ্ঠানকে উৎপাদনকারী হতে হবে। বিধিবহির্ভূতভাবে রেয়াত নেয়া প্রতিষ্ঠান হলো প্লানেট কনস্ট্রাকশন। কাস্টমস গোয়েন্দার অনুসন্ধানে অবৈধভাবে রেয়াত নেয়া এই নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব ফাঁকি উঠে এসেছে। সিপিসি সুবিধার আড়ালে ১৪ মাসে প্রায় ১৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেয়ায় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসকে প্রতিবেদন দিয়েছে কাস্টমস গোয়েন্দা। এই নিয়ে ৭ সেপ্টেম্বর দৈনিক শেয়ার বিজে ‘রেয়াতি সুবিধা কত সস্তা নেই তদারকি’Ñ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেট সূত্রমতে, মেসার্স প্লানেট কনস্ট্রাকশন আগ্রাবাদ ভ্যাট বিভাগের আওতাধীন সদরঘাট সার্কেলে ঠিকাদারি ও আমদানিকারক হিসেবে নিবন্ধিত একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান প্রতি মাসে অনলাইনে মূসক রিটার্ন দাখিল করে আসছে। মূসক নিবন্ধনে প্রতিষ্ঠান ঠিকানা দেয়া হয়েছে ৩৭১/১, স্টেশন রোড, মাঝিরঘাট, সদরঘাট, চট্টগ্রাম। মূসক কর্মকর্তারা সরেজমিন প্রতিষ্ঠানের ঠিকানায় গিয়ে প্রতিষ্ঠানের কোনো অস্তিত্ব পায়নি। পরে প্রতিষ্ঠানের সুপারভাইজার শাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে কর্মকর্তারা যোগাযোগ করেন। তিনি জানান, ৫৭০, স্ট্যান্ড রোড, মাঝিরঘাট, সদরঘাট, চট্টগ্রামের দ্বিতীয় তলায় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কর্মকর্তারা সেই ঠিকানায় গিয়ে দেখতে পান, দুই কক্ষবিশিষ্ট একটি ফ্ল্যাটে প্রতিষ্ঠানের অফিস রয়েছে।

প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা জানান, এখানে শুধু দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। আর নির্মাণকাজের সব কার্যক্রম নির্মাণাধীন প্রকল্প এলাকায় সম্পন্ন হয় বিধায় প্লান্ট মেশিনারিজ ও প্রকল্প এলাকায় স্থাপন করা হয়। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে একটি লিখিত বিবৃতি দিয়ে স্বীকার করে যে, তারা বর্তমান ঠিকানায় ১ জানুয়ারি ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করে। তবে ভ্যাট বিভাগকে স্থান পরিবর্তন বিষয়ে অবহিত না করায় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মূসক আইন অনুসারে অনিয়ম মামলা করা হয়েছে। ১০ আগস্ট মামলা করা হয়েছে। ২০ আগস্ট প্রতিষ্ঠানকে ‘নিয়মবহির্ভূতভাবে স্থান পরিবর্তন করায়’ অনিয়ম মামলার কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জবাব দিতে সময় দেয়া হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ কোনো লিখিত জবাব দেয়নি বলে ভ্যাট কমিশনারেট সূত্র জানিয়েছে।