পতিত সরকারের মেয়াদের শেষ পর্যায়ে নতুন একটি ব্যাংকের অনুমোদন দেয়ায় বেশ সমালোচনা হয়েছে। ওই সময় বিশ্লেষকরা প্রশ্ন তুলেছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ কীভাবে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংককে নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছে। এর পরও দেশে নতুন ব্যাংক অনুমোদন পেয়েছে।
সাধারণভাবে মনে করা হয়, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া মানে অর্থনীতি এগোচ্ছে। কিন্তু আদৌ কি তা সত্য! বিশেষজ্ঞরা সেই কবে থেকে বলে আসছেন, নতুন ব্যাংকের দরকার নেই। খোদ সাবেক অর্থমন্ত্রীরা বলেছেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় নতুন ব্যাংক অনুমোদন করতে হয়েছে। এভাবে ব্যাংকের অনুমোদন দেয়ায় তারা ভেরি আনহ্যাপি (খুবই অখুশি) বলেও জানিয়েছেন। ওই ধরনের ব্যাংককে অতি সত্বর মার্জার শুরু করার কথাও বলা হয়েছিল। এর পরও নতুন ব্যাংক অনুমোদনের প্রচেষ্টা চলেছে এবং মার্জার শুরু করা হয়নি। এখনও দুর্বল ব্যাংকগুলো একীভূত করার কথা বলা হচ্ছে।
বেশিরভাগ ব্যাংকারও মনে করেন, দেশে এত ব্যাংকের দরকার নেই। আমাদের মনে আছে এরশাদের আমলে (১৯৮২-১৯৯০) ৯টি, বিএনপি আমলে (১৯৯১-১৯৯৬) আটটি এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের আমলে (১৯৯৬-২০০১) ১৩টি ব্যাংক অনুমোদন দেয়া হলেও পরবর্তী সময়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন আমলে (চারদলীয় জোট, ২০০১-২০০৬) নতুন কোনো ব্যাংক অনুমোদন দেয়া হয়নি। ২০০৭-০৮ সময়পর্বে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারও নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেয়নি।
অর্থমন্ত্রী ‘আনহ্যাপি’, ব্যাংকার-বিশেষজ্ঞ-আইএমএফের আপত্তি থাকলেও বারবার নতুন ব্যাংক অনুমোদন দেয়া হয়েছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর কর্তৃত্ব করার ক্ষমতা সরকারের রয়েছে। তাই বলা যায়, ব্যাংক খাতের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার দায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাশাপাশি সরকারের ওপরও বর্তায়।
যখন লোকসানি হওয়ায় মার্জার করার কথা বিবেচনায় রয়েছে, যখন নতুন প্রজšে§র ব্যাংককে রক্ষায় তহবিল জোগাতে হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে, তখন নতুন ব্যাংক অনুমোদন দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।
আমাদের ব্যাংক খাতের সমস্যা অনেক। দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংক খাতে যে স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়ম-বিচ্যুতিকে উপেক্ষা করা হয়েছে, তা ব্যাংক খাতের সংকট বাড়িয়েছে। এরই মধ্যে ব্যাংক মালিকদের সংগঠনের (বিএবি) সব দাবি ঢালাওভাবে মেনে নেয়া হচ্ছে। আমাদের ব্যাংক খাত সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়তে পারেনি, এটি প্রতিষ্ঠিত সত্য।
এখন গণমাধ্যমে খবর এসেছে বিদেশি বিনিয়োগেও দাঁড়াতে পারল না দেশীয় আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক। সুইজারল্যান্ডের আইসিবি ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপ বড় আগ্রহ নিয়ে দেশীয় ব্যাংকটিতে বিনিয়োগ করেছিল; কিন্তু আইনগত কারণে তারা পুরো নিয়ন্ত্রণ বুঝে পায়নি। বিনিয়োগ করেও কেন সফল হয়নি, তা দেশের ব্যর্থতা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বাধীনভাবে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেনি বলেই ধারণা। এটি দেশে বিদেশি বিনিয়োগ না আসার বড় উদাহরণ হিসেবে গণ্য হতে পারে।
আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা দিনে দিনে খারাপ হতে থাকে। এ রকম পরিস্থিতিতে গত বুধবার পর্ষদ বিলুপ্ত করে ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। রাষ্ট্রীয় সহায়তায় আইনি সমাধান হলে এবং পর্যাপ্ত নীতিসহায়তা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হবে।