Print Date & Time : 12 September 2025 Friday 11:44 am

নিয়োগকে কেন্দ্র করে উত্তাল কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে

ইবি প্রতিনিধি: কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম নিয়োগকে কেন্দ্র করে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য, পাল্টাপাল্টি অবস্থান, সাবেক ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের আন্দোলন ও বহিরাগত কর্তৃক শিক্ষক লাঞ্চিতের ঘটনায় উত্তাল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ।

মঙ্গলবার সকাল থেকে দফায় দফায় উপাচার্যের কার্যালয়, প্রশাসন ভবন, উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এসব ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এমন আচরণে হতবাক শিক্ষার্থীরা। এদিন সকাল থেকে উপাচার্যের কার্যলের সামনে একে একে জড়ো হতে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, কর্মকর্তার সমিতি, বঙ্গবন্ধু পরিষদ শিক্ষক ইউনিট ও ছাত্রলীগের বর্তমান নেতাকর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন পদে নিয়োগকে কেন্দ্র করে ইতিপূর্বে উপাচার্যের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠিত হওয়ায় নিয়োগ বোর্ড স্থগিত রাখার পক্ষে ছিলেন শিক্ষক নেতারা।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের একাংশের দাবি অনুযায়ী, উপাচার্যের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটি তাকে নির্দোষ হিসেবে রায় দেওয়া পর্যন্ত তারা উপাচার্যকে সকল নিয়োগ বোর্ড বন্ধ রাখার পক্ষে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু অনুরোধ অগ্রাহ্য করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম পদে নিয়োগ বোর্ড দেন বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম। উপাচার্য কার্যালয়ে আসার পরে নিয়োগ বোর্ড আপাতত স্থগিত রাখার দাবি জানাতে কার্যালয়ে গিয়েছিলেন শাপলা ফোরাম ও শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ। তাদের কথোপকথন চলাকালেই হুড়মুড়িয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে প্রবেশ করে ইবিতে দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন দপ্তরে চুক্তিভিত্তিক কর্মরত সাবেক ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ ও কর্মকর্তা সমিতির সদস্যরা।

তারা একপর্যায়ে ভিসির বিপক্ষে বিভিন্ন স্লোগান ও উপস্থিত শিক্ষকদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও লাঞ্চিত করে। একই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। উপাচার্যের কার্যালয়ে তুমুল হট্টগোলের একপর্যায়ে অপদস্ত হয়ে, গালাগাল ও লাঞ্ছিতের প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও শিক্ষক সমিতির শিক্ষকবৃন্দ উপাচার্যের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালের সামনে মানববন্ধনে অংশ নেন। এ সময় উপাচার্যের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগকে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তোলেন মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষকরা।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ দীর্ঘদিন যাবৎ এ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী চাকরির দাবিতে আন্দোলন করছে। তারা সঠিক নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চাকরি চায়। এক্ষেত্রে প্রশাসনের পক্ষ বিপক্ষে দাঁড়ানোর মত কোন বিষয় আছে বলে আমার মনে হয় না। শিক্ষকদের উপর চড়াও হবার জন্যই উপাচার্য তাদের ডেকে নিয়েছে- ছাত্রলীগের প্রতি শিক্ষকদের এমন অভিযোগ কে অবান্তর ও ভিত্তিহীন দাবি করে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, ভিসির কক্ষে যারা গিয়েছিল তারা বর্তমান ছাত্রলীগের কেউ নয়। দীর্ঘদিন কর্মরত সাবেক নেতৃবৃন্দ যদি সেখানে তাদের কোন দাবি নিয়ে যায়, সেখানে আমাদের কিছু করার থাকে না।

প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ জানান, মানুষের দাবি-দাওয়া থাকতেই পারে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা চাই যে কেউ অফিসে ঢুকার আগে প্রটোকল মেনে বা অনুমতি নিয়ে ঢুকুক। কিন্তু পর্যায়ক্রমে না ঢুকে প্রথমে কর্মকর্তা-কর্মচারী, এরই মাঝে আদর্শিক শিক্ষক গ্রুপ, পরক্ষণেই ছাত্রলীগ ঢুকে পড়ে। আমার প্রথম পরিচয় শিক্ষক, দ্বিতীয়ত আমি দায়িত্বশীল ব্যক্তি। সবারই সুশৃঙ্খল আচরণ করা উচিত।

বঙ্গবন্ধু পরিষদ শিক্ষক ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার বলেন, শৃঙ্খলার দায়িত্বে প্রক্টরিয়াল বডি থাকে। প্রশাসনের ইঙ্গিত না থাকলে, কখনো এই ধরনের কাজ করা সম্ভব না। আমি নিজেই এখানে শিক্ষক সমিতির সেক্রেটারী ছিলাম।যারা এসেছে তাদের অধিকাংশেরই ছাত্রত্ব নেই। বহিরাগতরা এখানে উপস্থিত শিক্ষকদের লাঞ্চিত করেছে। ইমামের মতো একটি পদে নিয়োগ নিয়ে এমন হয়েছে, এটি অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করে। আমরা উপাচার্যকে বলেছি, আগে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করবেন, তারপর নিয়োগ শুরু করবেন। যদি তা না করেন তাহলে প্রগতিশীল শিক্ষকরা একসাথে মিলিত হয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করবো।

শাপলা ফোরামের সদস্য অধ্যাপক ড. শেলিনা নাসরীন বলেন, যেহেতু নিয়োগ নিয়ে একটি বিষয় তদন্তাধীন রয়েছে তাই উপাচার্যকে বলেছিলাম যে তদন্ত প্রতিবেদন ইতিবাচক না হওয়া পর্যন্ত নিয়োগ স্থগিত রাখতে। এই সামান্য কথাটি আমরা বলা শেষ করার আগেই আমাদের সন্তান সমতুল্য শিক্ষার্থী, অছাত্র বা বহিরাগতদের আমাদের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ভাবে দাঁড় করানো হয়েছে, আমাদের লাঞ্ছিত করা হয়েছে। আমরা বিভিন্ন পদ পদবীতে থাকলেও নিয়ম মেনে সেখানে যাই, কিন্তু এরকম একটা মিছিল কিভাবে সেখানে প্রবেশ করল, কারা নেতৃত্বে ছিল, কারা তাদের সাপোর্ট দিয়েছে, তা বের করার প্রয়োজন।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক নিয়োগ বন্ধ থাকলেও উপাচার্য হুট করে ইমাম নিয়োগ বোর্ড দেন। গতকাল বিষয়টি জানার পর আমরা সকালে গিয়েছিলাম আপাতত নিয়োগ বোর্ড স্থগিত রাখার অনুরোধ করতে। কিন্তু আমরা ঢোকার পরপরই অছাত্র ও বহিরাগতরা এসে আমাদের লাঞ্চিত করে মারতে উদ্যত হয়। এটা সম্পুর্ণই পরিকল্পিত। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার মান উন্নয়ন, গবেষণা কার্যক্রম প্রসারে এই প্রশাসনের কোন নজর নেই। তাদের নজর শুধু বিভিন্ন নিয়োগ বোর্ডে যা বিতর্কিত। তাদের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এর আগে এমন ঘটনা ঘটেনি। কয়েকজন মুষ্টিমেয় শিক্ষক যারা নানা কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত এমন কয়েকজন কুচক্রী মিলে একটা নিয়োগ বোর্ড ছিল তারা সেটা বন্ধ করতে গিয়েছিল। যা একটি গর্হিত এবং রাষ্ট্র বিরোধী কাজ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনুরোধ করবো এ বিষয় গুলো সরকারের উচ্চ পর্যায়ে অবহিত করার জন্য।