দুদকের মামলা

নিয়োগের শর্ত ভেঙে প্রিমিয়ার লিজিং এমডির আইফোন বিলাস

নজরুল ইসলাম: নিয়মবহির্ভূতভাবে ভুয়া ভাউচারে প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। শর্ত লঙ্ঘন করেছেন নিয়োগপত্রের। প্রতিষ্ঠানের টাকায় কিনেছেন আইফোন, নিয়েছেন কমিশন। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই নিয়েছেন বিভিন্ন ভাতা। এভাবে বিভিন্ন বিল ভাউচারে চার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স লিমিটেডের (পিএলএফএল) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) আব্দুল হামিদ মিয়ার বিরেুদ্ধে এ অভিযোগ। তিনিসহ পিএলএফএলের আরও একজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের উপপরিচালক ফারুক আহমেদ মামলাটি দায়ের করেছেন।

এজাহার সূত্রে জানা যায়, চাকরিকালে নিয়োগপত্রে বর্ণিত সুবিধা ছাড়াও নিয়মবহির্ভূতভাবে পিএলএফএল যোগদানের পর নিজে আর্থিক সুবিধা পাওয়ার উদ্দেশে পরিচালনা পর্ষদের ১৭২তম সভায় রিভাইজড কার লোন পলিসি উপস্থাপন করেন আব্দুল হামিদ মিয়া। পরিচালনা পর্ষদে তা অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠান। নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন ছাড়া কার সাপোর্ট অ্যালাউন্স হিসেবে মাসিক ৪০ হাজার টাকা মোট ২২ লাখ টাকা ও গাড়ির ঋণের কিস্তির পুনর্ভরণ বাবদ মাসিক ৪৮ হাজার ৩১৫ টাকা মোট ২২ লাখ ৭০ হাজার ৮০৫ টাকা অনৈতিকভাবে নগদে গ্রহণ করে তিনি আত্মসাৎ করেছেন। একইভাবে তিনি হাউস টেলিফোন অ্যালাউন্স হিসেবে প্রথম মেয়াদে মাসিক ১২ হাজার ৫০০ ও দ্বিতীয় মেয়াদে মাসিক ১৩ হাজার ৭৫০ টাকা হারে মোট ৭ লাখ ৫৫ হাজার ৭০৯ টাকা নিয়মমাফিক গ্রহণ করেছেন। নিয়োগপত্র ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন-বহির্ভূত মোবাইল বিল বাবদ ১ লাখ ৬৬ হাজার ৫০৭ টাকা খরচ করেছেন এবং ৯৩ হাজার টাকা দিয়ে আইফোন কিনেছেন। নিয়োগপত্রের শর্তানুযায়ী মিটিং বা বোর্ড ফি প্রাপ্য হবেন না। কিন্তু, নিয়োগপত্র ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন-বহির্ভূত বিভিন্ন মিটিং (বোর্ড ও ইসি) বাবদ মোট ১৫টি ভাউচারের মাধ্যমে ১ লাখ ১৭ হাজার ৬০০ টাকা নিয়েছেন। পিএলএফএল বিভিন্ন ব্যাংক, আইসিবি, বিমা কোম্পানি ও অন্যান্য সংস্থা থেকে ডিপোজিট হিসেবে এফডিআর সংগ্রহের জন্য ‘কমিশন’ বাবদ খরচের বিষয়ে পরিচালনা পর্ষদের কোনো অনুমোদন নেই। কিন্তু আব্দুল হামিদ মিয়া কমিশন বাবদ ১৩৬টি ভাউচারের মাধ্যমে ২ কোটি ৫৭ লাখ ৪ হাজার ২৩৪ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন। ফিনান্সিয়াল এক্সপেনসেন্ট শিরোনামে ভুয়া ব্যয় দেখিয়ে ৫৯ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ টাকা, কর অফিসসংক্রান্ত ব্যয় শিরোনামে ভুয়া ব্যয় দেখিয়ে ২৫টি ভাউচারের মাধ্যমে ৪ লাখ ১৭ হাজার ৬০০ টাকা, প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) খরচ শিরোনামে ব্যয় দেখিয়ে ৪৪ লাখ ৩২ হাজার ৯২৪ টাকা ও প্রতিষ্ঠানের বাংলা মোটর অফিস সংক্রান্ত খরচ শিরোনামে ২০১৮ সালে ৩টি ভাউচারের মাধ্যমে ৩ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন।

এজাহার সূত্রে জানা যায়, আব্দুল হামিদ মিয়া পিএলএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন বা নিয়োগপত্র/চুক্তিপত্রের শর্ত অমান্য করে মিটিং ফি, গাড়ির ঋণের কিস্তি, কার সাপোর্ট অ্যালাউন্স, মোবাইল ফোন বিল ও আই ফোন কেনা বাবদ মোট ৪৮ লাখ ৪৭ হাজার ৯১২ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া কোনো প্রকার ম্যাটেরিয়াল এভিডেন্স ছাড়া এফডিআর কমিশন, ফিনান্সিয়াল এক্সপেন্স, কর অফিস সংক্রান্ত ব্যয়, বার্ষিক সাধারণ সভা সংক্রান্ত ব্যয়, বাংলামোটর অফিস সংক্রান্ত ব্যয় বাবদ মোট ৩ কোটি ৬৮ লাখ ৪৯ হাজার ৮৫৮ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন। আরেক অভিযুক্ত মো. রমিজ উদ্দিন সাবেক অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ইন্টারনাল অডিট পদে দায়িত্ব পালন করে ওই আত্মসাৎ সংক্রান্ত তথ্য গোপন করে সহায়তা করেছেন। যে কারণে তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৪০৯/১০৯ এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭  এর ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে আব্দুল হামিদ মিয়া শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এমডি হিসেবে আমি একটা আইফোন তো পেতেই পারি। এফডিআর সংগ্রহ বাবদ আমি কোনো কমিশন নিইনি। এটা চিরাচরিত প্রথা। সব ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠানই কমিশন দেয়। এসব কাজ অডিট কমিটিতে পাস হয়েছে। এই কোম্পানির শুরু থেকেই এই নিয়ম চলে আসছে। আমার সময় শুরু হয়েছে, এমন তো নয়। অনুমোদনের পরই কার লোন নিয়েছি। আমার কাছে প্রমাণ আছে। দুদক আমাকে কল করেছিল, আমি হাজির হয়েছি। লিখিত বক্তব্য দিয়ে এসেছি। এভিডেন্স দিয়ে এসেছি।’

এই প্রসঙ্গে প্রিমিয়ার লিজিংয়ের ইভিপি ও কোম্পানি সেক্রেটারি সুভাস চন্দ্র মল্লিক শেয়ার বিজকে বলেন, ‘দুদকের অনুসন্ধান বিষয়ে জানতাম। এফডিআর সংগ্রহের জন্য কমিশন নেয়ার কোনো নিয়ম নেই। আইফোন কেনার অনুমোদন নেই। প্রতিষ্ঠানের টাকা মানে গ্রাহকেরই টাকা।’

পিএলএফএলের রাজধানীর বাংলামোটরে হেড অফিস ছাড়াও ঢাকার মিরপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও বরিশালে আঞ্চলিক কার্যালয় রয়েছে।