নিয়োগ পরীক্ষায় দুর্নীতি বন্ধে দায়িত্বশীলতা কাম্য

নিয়োগ পরীক্ষায় দুর্নীতি বর্তমানে তর্কসাপেক্ষে সর্বাধিক আলোচিত বিষয়। যারা কেবলই নিজের মেধার ওপর নির্ভর করে চাকরি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার আশা করেন, তারা একপ্রকার হতাশায় ভোগেন। যখন লিখিত পরীক্ষায় ফেল এবং মৌখিক পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও চাকরি হয়, যখন ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে চাকরি দেয়ার খবর প্রকাশিত হয় গণমাধ্যমে, তখন সহজেই অনুমেয় কী অরাজকতা চলছে নিয়োগ প্রক্রিয়ায়। সাধারণত চাকরি না পেয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ আনেন বঞ্চিতরা। আর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জড়িতরা বরাবরই গুজব বলে উড়িয়ে দেন। অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা করারও হুমকি দেয়া হয়। অথচ অভিযোগ পরে সত্য প্রমাণিত হওয়ার নজিরও রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বড় একটি নিয়োগে বড় অঙ্কের ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগের কথা অনেকের মনে থাকবে। লিখিত পরীক্ষায় অনিয়ম প্রমাণিত হয় মৌখিক পরীক্ষা নিতে গিয়ে। নিয়োগ কমিটির সদস্যরা দেখেছেন, যারা লিখিত পরীক্ষায় বেশি নম্বর পেয়েছেন, তারা মৌখিক পরীক্ষায় প্রশ্নের উত্তরই দিতে পারেননি। বরং ভালো করেন লিখিত পরীক্ষায় কম নম্বর পাওয়া প্রার্থীরা। ওই পরীক্ষার উত্তরপত্র মিলিয়ে দেখার সুযোগ আছে, কিন্তু অপরাধী চক্র অভিনব প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করে, যে বিষয়ে কারও ধারণা নেই। ফলে যাচাইয়েরও সুযোগ নেই। এ ধরনের একটি সংঘবদ্ধ চক্র হাতেনাতে ধরা পড়েছে শুক্রবার। প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের (সিজিএ) কার্যালয়ের অধীন ‘অডিটর’ নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবা নাসরিন। তার সঙ্গে সিজিএ কার্যালয়ের বরখাস্তকৃত কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসানও রয়েছেন। এ চক্রের ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সদস্যরা চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে এমসিকিউ, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেয়ার কথা বলে ১৬ লাখ টাকা চুক্তি করত। মূলত পরীক্ষার্থী হিসেবে কেন্দ্রে উপস্থিত থেকে ‘ডিজিটাল ডিভাইস’ ব্যবহার করে টাকা নেয়া চাকরিপ্রার্থীদের প্রশ্নের উত্তর লিখতে মাহবুবা নাসরিন সহায়তা করতেন। রাজনীতিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে তিনি নানা অপরাধে জড়িয়েছেন।

আমরা মনে করি, পরীক্ষাকেন্দ্রে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ায় তাদের উদাসীনতা কিংবা যোগসাজশ রয়েছে। তদন্তপূর্বক এ চক্রে জড়িত প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা উচিত। যেহেতু জড়িতরা ‘রাজনীতিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছেন’ বলে কথা উঠেছে, তাই প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধে রাজনৈতিক অঙ্গীকার অনেক বেশি প্রয়োজন।

অযোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ দেয়া সম্পূর্ণ অনৈতিক, অবৈধ এবং একই সঙ্গে সংবিধানের লঙ্ঘন। নীতিমালা লঙ্ঘন করে যারা এ কাজ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের শূন্য সহনশীল নীতি রয়েছে। এটি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীলতা কাম্য।