নিরাপত্তা পরীক্ষা কেলেঙ্কারিতে বড় ক্ষতিতে টয়োটার প্রতিষ্ঠান

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ১০০ বিলিয়ন ইয়েন (৭০০ মিলিয়ন ডলার) ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে টয়োটার মালিকানাধীন জাপানি গাড়িনির্মাতা প্রতিষ্ঠান দাইহাৎসু। ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে গাড়ির নিরাপত্তা পরীক্ষার ফলাফল জাল করার কথা স্বীকার করে জাপানে গাড়ি উৎপাদন স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বব্যাপী পরিচিত এ কোম্পানি। যাত্রীবাহী ছোট আকারের গাড়ি তৈরির জন্য পরিচিত এই গাড়িনির্মাতা প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্র বার্তা সংস্থা সিএনএনকে বলেন, গত মঙ্গলবার থেকে জাপানে দাইহাৎসুর সব উৎপাদন স্থগিত করে দেয়া হয়েছে। খবর: সিএনএন।

আসছে জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত এই উৎপাদন বন্ধ থাকবে বলে তিনি জানান। এর সঙ্গে জড়িত প্রায় ৯ হাজার কর্মচারীর ভবিষ্যৎ এতে অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

নিরাপত্তা কেলেঙ্কারির সঙ্গে টয়োটার মালিকানাধীন এই প্রতিষ্ঠানের নাম বেশ গভীরভাবেই জড়িয়েছে। গত সপ্তাহে দাইহাৎসু ঘোষণা করে, একটি স্বাধীন তদন্তকারী কমিটি টয়োটা ব্র্যান্ডের অধীনে বিক্রি হওয়াসহ ৬৪টির বেশি গাড়ির মডেলের নিরাপত্তা পরীক্ষায় জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছে। এরপর দাইহাৎসু অস্থায়ীভাবে তার সব অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক যানবাহনের চালান স্থগিতের ঘোষণা দেয়। প্রতিষ্ঠানটি আরও বলে, কীভাবে এই সমস্যা সমাধান করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তারা পরামর্শ করবে।

গাড়িনির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির জন্য এই কেলেঙ্কারিই প্রথম নয়। এর আগে গত এপ্রিল মাসে ৮৮ হাজারেরও বেশি গাড়ির সংঘাত পরীক্ষায় (ক্র্যাশ টেস্ট) মান লঙ্ঘনের কথা স্বীকার করেছিল দাইহাৎসু। এসব গাড়ির বেশিরভাগই মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের মতো দেশে টয়োটা ব্র্যান্ডের নামে বিক্রি হয়েছিল। সে সময় দাইহাৎসু এক বিবৃতিতে বলেছিল, গাড়িগুলোর সামনের সিটের দরজার ভেতরের আস্তরণটি ভুলভাবে সংযোজন করা হয়েছিল। গাড়ির পাশের অংশে সংঘর্ষের পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব বিষয় মেনে চলা হয়নি।

গত মে মাসে দাইহাৎসু বলেছিল, তারা আরও কিছু ভুল খুঁজে পেয়েছে। দুটি হাইব্রিড বৈদ্যুতিক গাড়ির সংঘর্ষের পরীক্ষার জন্য ভুল তথ্য জমা দেয়া হয়েছিল। তখন গাড়িনির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি বলে, তারা সেই মডেলগুলোর চালান ও বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে।

সর্বশেষ তদন্ত প্রতিবেদন কোম্পানির সুনামকে আরও হুমকির মুখে ফেলেছে। ২০ ডিসেম্বর তদন্ত কমিটি প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুসারে, দাইহাৎসুর বিরুদ্ধে তথ্যের হেরফের, মিথ্যা বিবৃতি তৈরি বা নিরাপত্তার পরীক্ষা পাস করার জন্য গাড়িগুলোয় ভুলভাবে টিঙ্কার করার আরও ১৭৪টি মামলা পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সবচেয়ে পুরোনো মামলাটি পাওয়া গেছে ১৯৮৯ সালে। আর ২০১৪ সাল থেকে মামলার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ খবর প্রকাশের পর গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার টোকিওতে টয়োটার শেয়ার চার শতাংশ কমেছে। এই কেলেঙ্কারি টয়োটার মতো বিশাল প্রতিষ্ঠানকে কাঁপিয়ে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্র।

গত কয়েক বছরে এ ধরনের আরও কয়েকটি কেলেঙ্কারি অন্যান্য জাপানি গাড়িনির্মাতাদের ওপর বেশ চাপ তৈরি করেছে। হিনো মোটরস গত অর্থবছরে ১১৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন ইয়েনের নেট ক্ষতির উল্লেখ করেছে। এর কারণ ছিল কোম্পানির নির্গমন ও জ্বালানি দক্ষতা বিষয়ক তথ্যে জালিয়াতি পাওয়া গেছে। ২০১৭ সালে ভুয়া জ্বালানি অর্থনীতির তথ্য কেলেঙ্কারির কারণে মিতসুবিশি মোটরস ১৯৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ইয়েনের নেট ক্ষতি করেছে।

ইন্দোনেশিয়াতেও যানবাহন নির্মাণ করে দাইহাৎসু। তবে গত অর্থবছরে দাইহাৎসু নির্মিত ১ দশমিক ৪২ মিলিয়ন যানবাহনের প্রায় ৬০ শতাংশ জাপানের। মালয়েশিয়ার অধিভুক্ত পেরোডুয়া জাপানে প্রায় তিন লাখ গাড়ি তৈরি করেছে।

দাইহাৎসু জাপানে ও অন্যান্য দেশে টয়োটা, সুবারু ও মাজদা মোটরের জন্য একটি আসল সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক হিসাবে যানবাহন তৈরি করে। এটি জাপানে মিনিকারের জন্য টয়োটার কৌশল এবং উদীয়মান বাজারে কমপ্যাক্টের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

গত সপ্তাহে এক বিবৃতিতে টয়োটা বলেছে, দাইহাৎসুকে ফিরিয়ে আনার জন্য মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন, যা রাতারাতি সম্পন্ন করা যাবে না। সেজন্য দাইহাৎসুর ব্যবস্থাপনা, অপারেশন ও গঠনপ্রক্রিয়ার একটি ব্যাপক পর্যালোচনার প্রয়োজন হবে।

টয়োটা আরও বলেছে, ‘আমরা স্বীকার করি, নিরাপত্তা পরীক্ষার প্রতি দাইহাৎসুর অবহেলা একটি গাড়িনির্মাণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাদের কোম্পানির ভিতকে নাড়িয়ে দিয়েছে।’