ঈদুল ফিতরের প্রাক্কালে প্রতিদিন গড়ে ৩০ লাখ মানুষ গ্রামের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বে বলে ধারণা পাওয়া গেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) জরিপে। বুয়েটের দুর্ঘটনা ও গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যমতে, দেশের পরিবহন ব্যবস্থায় দিনে ১৬ লাখ যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা রয়েছে। রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে যাত্রী কল্যাণ সমিতির সংবাদ সম্মেলনে জরিপের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, প্রতিদিন ১৬ লাখ যাত্রী স্বাভাবিকভাবেই গণপরিবহনে ঈদযাত্রা করতে পারবেন। এর মধ্যে বাসে আট লাখ, ট্রেনে এক লাখ, লঞ্চে এক লাখ ২৫ হাজার, মোটরসাইকেল তিন লাখ এবং ব্যক্তিগত গাড়িতে তিন লাখ মানুষ যেতে পারবে। কিন্তু ১৪ লাখ যাত্রী কোনো যানবাহন পাবেন না। ফলে তারা ‘বিকল্প উপায়ে’ যাবেন।
অন্যদিকে ঈদে ঘরমুখী মানুষের ভোগান্তি কমাতে বিভিন্ন সড়কে চলমান সংস্কার ও নির্মাণকাজ ঈদের আগে ও পরে মোট ১৪ দিন বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছে এফবিসিসিআই। রোববার পরিবহন ও যোগাযোগ (রেল, সড়ক ও মহাসড়ক) বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রথম বৈঠকে এ আহ্বান জানানো হয়।
ঈদের সময়ে মানুষ একসঙ্গে বাড়ি যায় এবং ফিরতেও চায় একসঙ্গে। এ কারণে অতিরিক্ত চাপ পড়ে যানবাহন ও সড়ক-মহাসড়কে। দূরপাল্লার রুটে চলা প্রথম শ্রেণির গণপরিবহন দুর্ঘটনার শিকার হয় কমই। তবে ‘বিকল্প উপায়ে’ বাড়ি যাবেন প্রধানত কম আয়ের গরিব শ্রমজীবী ও ক্ষুদ্র বিক্রেতারা। তারা ট্রাকে গাদাগাদি করে কম খরচে যাতায়াত করতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হন।
ঈদযাত্রায় সাধারণ মানুষ যাতে যানজট, পথে পথে হয়রানি এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে নৈরাজ্যের শিকার না হন, সে লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তৎপর হতে হবে। মহামারি কভিড থেকে মুক্তির কারণে এবারের ঈদে আগের চেয়ে বেশি মানুষ গ্রামের বাড়ি যাবে। তাই ঈদযাত্রায় বাড়তি নিরাপত্তা ও সতর্কতা নিশ্চিত করা দরকার, যাতে যানজট ও অব্যবস্থাপনার কারণে এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নতুন দুর্ভোগের শিকার না হন।
ঈদ উপলক্ষে ১৪ দিনের জন্য সড়কে চলমান সংস্কার ও নির্মাণকাজ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার যে আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা, তাও বিবেচনার দাবি রাখে। সংস্কার করতে গিয়ে রাস্তা সরু হয়ে যায়, অনেক সময় এক লেনে যানচলাচলের ব্যবস্থা করতে হয়। এতে যানজটের সৃষ্টি হয়। আবার সড়কে চাঁদাবাজির কারণেও যানজট হয়। এবার অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ, পরিবহন সংকট ও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের জন্য পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের কারসাজি থাকতে পারে। বিভিন্ন ফেরিঘাটে যানবাহন চলাচল বাড়লেও ফেরির সংখ্যা কমেছে। ফলে ঈদে এখানে শত শত যানবাহন উভয় পাড়ে আটকে পড়তে পারে। ফেরির সংখ্যা বাড়িয়ে, বিদ্যমান ফেরিগুলো কর্মক্ষম রেখে এবং সময়সূচি ও শৃঙ্খলা ঠিক রেখে যাত্রীদের সম্ভাব্য হয়রানি থেকে মুক্তিদানে ব্যবস্থা নিতে হবে। ফিটনেসবিহীন যান, পণ্যবাহী যানে যাত্রীবহন, নৌপথে পর্যাপ্ত জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জাম না থাকা এবং অদক্ষ চালকের মাধ্যমে চালানো ফিটনেসবিহীন গাড়ি বাড়তে পারে। নিয়মে কিছুটা ছাড় দেয়া হলেও যাত্রীদের নিরাপত্তায় সবিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।